বালুর বস্তায় আটকে ১৩শ' কোটি টাকার প্রকল্প!
ইমরান হোসেন, রাজবাড়ী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২০, ১৪:১৩ আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০২০, ১৫:০১
প্রতি বছরই নদী ভাঙনের কবলে পড়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকা। ধীরে ধীরে ভাঙতে ভাঙতে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট ও এর আশপাশের এলাকা এখন সংকুচিত হয়ে প্রধান সড়কের ১০ গজের কাছে এসে ঠেকেছে। প্রতিবছর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভাঙন শুরু হলে এসব স্থানে জরুরিভাবে বালুভর্তি জিও বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়। তবে শুকনো মৌসুমে স্থায়ী কোনো কাজ না করায় দৌলতদিয়া ফেরিঘাট অঞ্চল বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভাঙন কবলিত স্থানে প্রতিবছর বালুভর্তি বস্তা ফেলায় সরকারের অর্থ শুধু জলেই যাচ্ছে। ভাঙন রক্ষায় হচ্ছে না কোন স্থায়ী সমাধান। তাই ঘাটসহ এর আশপাশের এলাকা স্থায়ীভাবে রক্ষার জোর দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
২০১৯ সালের প্রথম দিকে ঘাট সংস্কার, স্থায়ীভাবে নদী শাসন, সৌন্দর্য বর্ধন এবং পর্যটন কেন্দ্রের কাজ একনেকে পাশ হলেও আজ পর্যন্ত কোন ধরণের প্রক্রিয়া ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি বিআইডব্লিউটিএ ও পানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
এরই মধ্যে ২ ও ৩ নং ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত বছর সবচেয়ে বেশি ভাঙন হয় ১, ২ ও ৩ নং ফেরিঘাট এলাকায়। সেসময় ফেরিঘাট এলাকার পাশে বসবাসরত প্রায় এক হাজারের বেশি পরিবারের ৬ থেকে ৭ হাজার মানুষ ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন। এখনও আতঙ্ক কাটেনি এখানে বসবাসরত পরিবারগুলোর। দেড় বছর পার হলেও ১ ও ২ নং ফেরিঘাট দুটি আজও চালু করতে পারেনি কতৃপক্ষ।
প্রতি বছর ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগের বস্তা ফেলে সরকারের কোটি কোটি টাকা শুধু জলেই যাচ্ছে না, মিলছে না কোন স্থায়ী সমাধানও। ঘাট রক্ষায় কোন কাজেই আসছে না বালুভর্তি বস্তাগুলো। এতে সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ নষ্ট হচ্ছে। নদীর ভাঙন যানবাহন চলাচলের প্রধান সড়কের ১০ থেকে ৪০ গজের কাছাকাছি চলে এসেছে। স্থায়ীভাবে ভাঙন প্রতিরোধে কোন ব্যবস্থা না নিলে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটসহ আশেপাশের জনবসতি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা নদী বিলীন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়বে দৌলতদিয়া ঘাট। থাকবে না এর কোন অস্তিত্ব।
দৌলতদিয়া ঘাটি এলাকার ভাঙন কবলিত এলাকাবাসী জানান, ঘাট ভাঙতে ভাঙতে এখন প্রধান সড়কের কাছাকাছি এসে ঠেকেছে। এর কোন স্থায়ী সমাধান না হলে আগামীতে দৌলতদিয়া ঘাটসহ আশপাশের এলাকা থাকবে না। ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্যে এর স্থায়ী সমাধান চায় তারা।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া উভয় প্রান্তে ভাঙন রোধে প্রটেকটিভ ওয়ার্কের কাজ করা হবে। দৌলতদিয়ায় ৬ কিলোমিটার ও পাটুরিয়ার ২ কিলোমিটার অংশে কাজ হবে। বিআইডব্লিউটিএ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে নদী তীর সংরক্ষণ কাজের ডিজাইন করেছে।
তিনি আরও জানান, প্রতিরক্ষা-সংরক্ষণের কাজে সয়েল টেস্ট প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এখনও প্রকল্পের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে কোন তহবিল স্থানান্তর করা হয়নি। সমঝোতা স্মারকের খসরা ইতমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সচিবালয়ে পাঠানো হয়েছে এবং এটা যাচাই বাছাইয়ের কাজ চলছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ’র মধ্যে সমঝোতা স্মারক সম্পন্ন হলে দৌলতদিয়া প্রান্তে নদী তীর সংরক্ষণ কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
বিআইডব্লিউটিএ প্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক সাজেদুর রহমান বলেন, স্থায়ী প্রতিরক্ষার সাথে ফেরি ঘাটগুলোর উন্নয়নকাজ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ যৌথভাবে সম্পন্ন করবে। আশা করছি খুব দ্রুতই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারবো। বর্তমানে মাটি পরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজের মধ্যে দৌলতদিয়ায় ৬ কিলোমিটার ও পাটুরিয়ায় ২ কিলোমিটার টার্মিনাল ও নদী রক্ষার কাজ করা হবে। এর মধ্যে ৬৮০ কোটি টাকার প্রতিরক্ষার কাজ করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
২০২২ সালের ডিসেম্বর সময়কালকে নির্ধারণ করে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে স্থায়ী ব্যবস্থাপনা তৈরি হবে এবং সুন্দর ঘাট ব্যবস্থাপনা ও যাত্রীসেবা বৃদ্ধি পাবে বলে জানান তিনি।
বিআইডব্লিউটিসি'র চেয়ারম্যান মো. খাজা মিয়া তিনি বলেন, প্রকল্পটি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে। এ কাজটি হলে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে ঘাটসহ পুরো এলাকা। কাজ বাস্তবায়নে কোন বিলম্ব হবে না। যথাসময়ে শুরু এবং শেষ হবে।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত অলী বলেন, রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটসহ এর আশপাশের প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকা ভাঙনের হাত থেকে রক্ষায় কাজ করার কথা রয়েছে। তড়িৎ গতিতে কাজটি সম্পন্ন করতে কতৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। আগামী বছরের জানুয়ারির দিকে এই প্রকল্পের কাজটি শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। স্থায়ীভাবে দৌলতদিয়ায় প্রতিরক্ষার কাজ না করা হলে যেকোন সময় ফেরিঘাট ভাঙনে বিলীন হয়ে যেতে পারে। তাই অতি দ্রুত নদী শাসনের কাজটি যেন হয় সেই চেষ্টা থাকবে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে