ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

সঙ্কটে ডুবছে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট

  ইমরান হোসেন, রাজবাড়ী প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২০, ১৫:৫৩  
আপডেট :
 ২৯ নভেম্বর ২০২০, ১৬:০৬

সঙ্কটে ডুবছে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট
দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। ছবি: প্রতিনিধি

দৌলতদিয়ায় ফেরিঘাট ও ফেরি সঙ্কটের সাথে নদীতে পানি কমে যাওয়ায় নাব্যতা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে যানবাহন পারাপারে ট্রিপ সংখ্যা যেমন কমে গেছে, তেমনি ফেরি পারের অপেক্ষায় কয়েকশ' যানবাহন যানজটে আটকে আছে। আগে যেখানে ৬টি ফেরিঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার হতো, বর্তমানে সেখানে ৩টি ঘাট দিয়ে পারাপার করা হচ্ছে।

২০টি ফেরির স্থলে ২টি ফেরি শিমুলিয়া কাঠালবাড়ি নৌরুটে স্থানান্তর করা হয়েছে, একটি ফেরি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে। ৬ নং ফেরিঘাটটির পন্টুন থেকে পানির স্তর কমে যাওয়ায় এ ঘাটে গত ২০ দিন কোন ফেরি ভিড়তে পারছে না। আর ১ ও ২ নং ফেরিঘাট দুটি নদী ভাঙেনে বিলিন হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় পার হলেও, এই ঘাট দুটি সচল হয়নি।

এদিকে ২০টি ফেরির স্থলে বর্তমানে ১৫টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পার করা হচ্ছে। ফেরিঘাট ও ফেরি সঙ্কট আর নাব্যতা সঙ্কটে সঠিকভাবে যানবাহন পারাপার সম্ভন না হওয়ায় ফেরির ট্রিপ সংখ্যা কমে গেছে। এই উভয়সঙ্কটের বলি হচ্ছে ঘাট দিয়ে পার হওয়া যানবাহনগুলো! কয়েকশ' যানবাহনের যানজট লেগেই থাকছে।

আজ রোববার পারের অপেক্ষায় বেশি ছিল পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাস। সকাল থেকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় যানজটের এ চিত্র দেখা যায়। যানজটে পড়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে যাত্রী ও চালকেরা।

আরও পড়ুন: বালুর বস্তায় আটকে ১৩শ' কোটি টাকার প্রকল্প!

এমন ভোগান্তি প্রায় প্রতিদিনই পোহাতে হচ্ছে দৌলতদিয়া ঘাটে পার হতে আসা মানুষদের। বর্তমানে ৭টি রোরো ফেরি ও ৮টি ইউটিলিটি ফেরি দিয়ে যানবাহন পার করা হচ্ছে।

ঘাট এলাকায় যানজট। ছবি: প্রতিনিধি

দৌলতদিয়ার সহকারী ঘাট ব্যাবস্থাপক খোরশেদ আলম জানান, দৌলতদিয়া প্রান্তের ৬টি ফেরিঘাটের ৩টি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। পানি কমে যাওয়ায় নাব্যতা সঙ্কট দেখা দেয়ায় ৬ নং ফেরিঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার বেশ কয়েকদিন বন্ধ রাখা হয়েছে। নাব্যতা সঙ্কটে পন্টুন নামানো হলে পারাপার স্বাভাবিক হবে।

তিনি আরও বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটি ও ফেরি স্থানান্তরের কারণে ফেরি সংখ্যা দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে কমে গেছে। এ কারণে কিছু পণ্যবাহী যানবাহন ফেরি পার হতে মহাসড়কে সিরিয়ালে রয়েছে। বর্তমানে দৌলতদিয়া নৌরুটে রোরো ও ইউটিলিটি মিলে ১৫ ফেরি দিয়ে যানবাহন পার করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: পদ্মায় পানি বাড়লেও দৌলতদিয়ায় ঘাট সঙ্কট

প্রসঙ্গত, প্রতি বছরই নদী ভাঙনের কবলে পড়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকা। ধীরে ধীরে ভাঙতে ভাঙতে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট ও এর আশপাশের এলাকা এখন সংকুচিত হয়ে প্রধান সড়কের ১০ গজের কাছে এসে ঠেকেছে। প্রতিবছর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভাঙন শুরু হলে এসব স্থানে জরুরিভাবে বালুভর্তি জিও বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়। তবে শুকনো মৌসুমে স্থায়ী কোনো কাজ না করায় দৌলতদিয়া ফেরিঘাট অঞ্চল বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ভাঙন কবলিত স্থানে প্রতিবছর বালুভর্তি বস্তা ফেলায় সরকারের অর্থ শুধু জলেই যাচ্ছে। ভাঙন রক্ষায় হচ্ছে না কোন স্থায়ী সমাধান। তাই ঘাটসহ এর আশপাশের এলাকা স্থায়ীভাবে রক্ষার জোর দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

ভাঙন ঠেকাতে ফেলা হয়েছে বালুভর্তি বস্তা। ছবি: প্রতিনিধি

২০১৯ সালের প্রথম দিকে ঘাট সংস্কার, স্থায়ীভাবে নদী শাসন, সৌন্দর্য বর্ধন এবং পর্যটন কেন্দ্রের কাজ একনেকে পাশ হলেও আজ পর্যন্ত কোন ধরণের প্রক্রিয়া ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি বিআইডব্লিউটিএ ও পানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে ২ ও ৩ নং ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত বছর সবচেয়ে বেশি ভাঙন হয় ১, ২ ও ৩ নং ফেরিঘাট এলাকায়। সেসময় ফেরিঘাট এলাকার পাশে বসবাসরত প্রায় এক হাজারের বেশি পরিবারের ৬ থেকে ৭ হাজার মানুষ ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন। এখনও আতঙ্ক কাটেনি এখানে বসবাসরত পরিবারগুলোর। দেড় বছর পার হলেও ১ ও ২ নং ফেরিঘাট দুটি আজও চালু করতে পারেনি কতৃপক্ষ।

অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়বে দৌলতদিয়া ঘাট। থাকবে না এর কোন অস্তিত্ব। দৌলতদিয়া ঘাটি এলাকার ভাঙন কবলিত এলাকাবাসী জানান, ঘাট ভাঙতে ভাঙতে এখন প্রধান সড়কের কাছাকাছি এসে ঠেকেছে। এর কোন স্থায়ী সমাধান না হলে আগামীতে দৌলতদিয়া ঘাটসহ আশপাশের এলাকা থাকবে না। ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্যে এর স্থায়ী সমাধান চায় তারা।

আরও পড়ুন: দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে দীর্ঘ যানজট

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া উভয় প্রান্তে ভাঙন রোধে প্রটেকটিভ ওয়ার্কের কাজ করা হবে। দৌলতদিয়ায় ৬ কিলোমিটার ও পাটুরিয়ার ২ কিলোমিটার অংশে কাজ হবে। বিআইডব্লিউটিএ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে নদী তীর সংরক্ষণ কাজের ডিজাইন করেছে।

তিনি আরও জানান, প্রতিরক্ষা-সংরক্ষণের কাজে সয়েল টেস্ট প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এখনও প্রকল্পের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে কোন তহবিল স্থানান্তর করা হয়নি। সমঝোতা স্মারকের খসরা ইতমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সচিবালয়ে পাঠানো হয়েছে এবং এটা যাচাই বাছাইয়ের কাজ চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ’র মধ্যে সমঝোতা স্মারক সম্পন্ন হলে দৌলতদিয়া প্রান্তে নদী তীর সংরক্ষণ কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

ভাঙন। ছবি: প্রতিনিধি

বিআইডব্লিউটিএ প্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক সাজেদুর রহমান বলেন, স্থায়ী প্রতিরক্ষার সাথে ফেরি ঘাটগুলোর উন্নয়নকাজ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ যৌথভাবে সম্পন্ন করবে। আশা করছি খুব দ্রুতই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারবো। বর্তমানে মাটি পরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজের মধ্যে দৌলতদিয়ায় ৬ কিলোমিটার ও পাটুরিয়ায় ২ কিলোমিটার টার্মিনাল ও নদী রক্ষার কাজ করা হবে। এর মধ্যে ৬৮০ কোটি টাকার প্রতিরক্ষার কাজ করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ২০২২ সালের ডিসেম্বর সময়কালকে নির্ধারণ করে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে স্থায়ী ব্যবস্থাপনা তৈরি হবে এবং সুন্দর ঘাট ব্যবস্থাপনা ও যাত্রীসেবা বৃদ্ধি পাবে বলে জানান তিনি।

বিআইডব্লিউটিসি'র চেয়ারম্যান মো. খাজা মিয়া তিনি বলেন, প্রকল্পটি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে। এ কাজটি হলে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে ঘাটসহ পুরো এলাকা। কাজ বাস্তবায়নে কোন বিলম্ব হবে না। যথাসময়ে শুরু এবং শেষ হবে।

এ বিষয়ে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত অলী বলেন, রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটসহ এর আশপাশের প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকা ভাঙনের হাত থেকে রক্ষায় কাজ করার কথা রয়েছে। তড়িৎ গতিতে কাজটি সম্পন্ন করতে কতৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। আগামী বছরের জানুয়ারির দিকে এই প্রকল্পের কাজটি শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। স্থায়ীভাবে দৌলতদিয়ায় প্রতিরক্ষার কাজ না করা হলে যেকোন সময় ফেরিঘাট ভাঙনে বিলীন হয়ে যেতে পারে। তাই অতি দ্রুত নদী শাসনের কাজটি যেন হয় সেই চেষ্টা থাকবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত