ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

ইজিবাইক-অটোরিকশার দৌরাত্মে চলাচলে চরম দুর্ভোগ

  বরগুনা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২০, ১৪:৫৩  
আপডেট :
 ০২ ডিসেম্বর ২০২০, ১৫:৪১

ইজিবাইক-অটোরিকশার দৌরাত্মে চলাচলে চরম দুর্ভোগ
ছবি: ইজিবাইক-অটোরিকশার চলাচলে বরগুনায় চরম দুর্ভোগ

বরগুনায় মানুষের তুলনায় বেড়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোবাইক ও ইজিবাইক। এমনকি রেন্ট-এ-কারে চালিত অসংখ্য মোটরসাইকেল। যা প্রতিনিয়ত শো ডাউন করে মহাসড়ক, সড়ক, শাখা সড়কগুলোর সর্বত্র। এতে ব্যহত হচ্ছে চলার পথ। নেমে এসেছে পৌর শহরের মধ্যে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং এ জনসাধারণের চরম দুর্গতি।

সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক বিভাগে নেই পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য। বিভাগটিতে রয়েছে মাত্র ৯ জন সদস্য। যার মধ্যে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (সদর জোন) (টিআই)-১, সার্জেন্ট-১, টিএসআই-১, এটিএসআই-২ ও কনস্টবল- মাত্র ৪ জন। যা দ্বারা একটি জেলা শহরে গাড়ি চলাচলে শৃঙ্খলা আনয়নে হিমসিম পোহানো স্বাভাবিক।

বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে রাস্তার উপরে। যার ফলে সড়কে নেই কোনো শৃঙ্খলা। দোকানপাট ও সড়ক আটকে রেখে প্রধান সড়ক ও শাখা সড়কগুলোতে এমন পরিস্থিতি পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। নেই কোনো সুনির্দিষ্ট পার্কিং স্থল। সেই সাথে পৌরসভা থেকে নেই রিকশা, অটোবাইক ও ইজিবাইকের ক্রয়সীমা কিংবা নির্ধারিত কোনো ধরাবাঁধা। যার ফলে লোকজনের তুলনায় বেড়েছে এমন চায়না প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যাটারিচালিত অটো গাড়ি।

এতে যেমন সড়কে চলতে সমস্যা হচ্ছে, তেমনি অপচয় হচ্ছে বিদ্যুৎ । কেননা, এ গাড়িগুলোতে থাকে বৈদ্যুতিক চার্জকৃত বেটারি। যা বেশিরভাগই অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে চার্জ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। যার ফলে পোহাতে হচ্ছে উভয় সঙ্কট। পাঁচ মিনিটের পথ এখন আধাঘণ্টায় অতিক্রম করতে হয়। মাদ্রাসা সড়কে একই স্থানে চালিতাতলী, রায়েরতবক, কালিরতবক ও মাইঠা নামক স্থানের চারটি লাইনে চলাচলকৃত ইজিবাইক ও অটোরিকশার পার্কিং স্থল। যেখানে রয়েছে প্রায় দুইশ' মোটরসাইকেলরো স্ট্যান্ড।

এ ব্যাপারে পৌর কর্তৃপক্ষের সজাগ দৃষ্টি ও পরিকল্পনার অভাব রয়েছে বলে পথচারীদের ভাষ্য। তারা বলছেন, প্রতিনিয়ত বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে এক সময় মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হয় সড়ক দুর্ঘটনাকবলীত মানুষগুলোকে। নির্বাচন এলে প্রতিশ্রুতির সীমা থাকে না। কিন্তু নির্বাচনের পরে জয়ী ব্যক্তিকে সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে আর দেখা মিলে না। বড় ধরণের সড়ক দুর্ঘটনা কিংবা পৌর নাগরিকদের প্রতিদিনের নানাবিধ সমস্যা বড় আকারে না ঘটা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কখনোই টনক নড়ে না। এখন শুধু অপেক্ষা শহরে যানজট নিরসনে কেমন ভূমিকা নিবে বরগুনা পৌরসভা!

পৌর শহরের সদর রোড, মাদ্রাসা রোড, বাজার রোড, মাছ বাজার ব্রিজ, উকিল পট্টি, টাউনহলসহ এ সকল প্রধান সড়ক ও শাখা সড়কগুলোতে অটোরিকশা ও ইজিবাইক পার্কিং করা হয়। ওই স্থানগুলোর একাধিক ব্যবসায়ীরা জানান, যে পরিমাণ ইজিবাইক ও অটোবাইক দোকানপাটের সামনে পার্কিং করে, তাতে আমাদের দোকানে সারাদিনে কোনো খদ্দের প্রবেশ করতে পারে না। কিছু বললে উল্টো মারতে চলে আসে।

হারুন অর রশিদ, ইউসুফ, ফেরদৌস, আরিফসহ অনেক পথচারীরা বলেন, এ সকল ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোবাইক ও রেন্ট-এ-কারে চালিত মটর সাইকেল যেখানে-সেখানে পার্কিং এর কারণে রাস্তাগুলো যেমন বন্ধ হয়ে থাকে, তেমনি হাইড্রোলিক হর্ন বাজানোটা সাধারণ মানুষের আরেকটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে শব্দ দূষণ। ফলে মাথা ব্যথা ও কানের সমস্যা বেড়েছে। যা সামাজিক জীবনে মারাত্মক এক ক্ষতির প্রভাব পড়ছে।

যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং নিয়ে কেউ কথা বলতে রাজি না হলেও ইজিবাইক চালক ও মাইঠা ইজিবাইক চালক সমিতির সভাপতি শাহ আলম মোল্যা বলেন, প্রতিনিয়ত মানুষ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে থাকে। আমাদের রুজিরোজগার এই ইজিবাইক থেকে। তবে আমরা সকলেই বুঝি মূল সড়কের উপরে গাড়ি রাখলে দোকানপাট ও মানুষের চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে যায়। তবে পৌর মেয়র যদি কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থান করে দিতেন, তাহলে সকলেরই সুবিধা হবে।

এ ব্যাপারে বরগুনা সদর জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মো. সোহরাব হোসেন বলেন, জেলা শহর অনুযায়ী আমাদের জনবল অপ্রতুল। তবুও আমাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে শহর যানজট মুক্ত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এ সকল লোকাল এরিয়ার গাড়িগুলো একটি নির্দিষ্ট পার্কিং স্থলের ব্যবস্থা করতে বরগুনা পৌরসভার সাথে আলোচনা করেছি। এখন পর্যন্ত কোনো ফল না পেলেও আশা করছি বরগুনা পৌর শহরকে পৌর কর্তৃপক্ষ যানজট মুক্ত রাখতে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)'র বরগুনা জেলা শাখার সভাপতি মাহবুবুর রহমান অভি বলেন, বরগুনা পৌরসভাকে প্রথম শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে কোনো ধরণের ভূমিকা নেই। তিনি আরো বলেন, শহরের মধ্যে ফুটপাত না থাকায় রাস্তা দিয়ে চলতে হয় পথচারীদের। কিন্তু কাগজপত্র বিহীন ব্যাটারিচালিত অসংখ্য অটোরিকশা ও ইজিবাইক শহরের সদর সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে গাড়ি পার্কিং ও হাইড্রোলিক হর্ণ ব্যবহার করছে। অথচ এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ নেই।

বরগুনা পৌরসভার মেয়র মো. শাহাদাত হোসেনের সাথে পৌরসভা ও ব্যক্তিগত দপ্তরে সামাজিক এ সমস্যা নিরসনে পৌরসভা থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না, জানতে গেলে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত থাকায় পাওয়া যায়নি। একাধিকবার তার মুঠোফোন যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও কল ধরেননি। (যা গত ২৯ নভেম্বর থেকে আজ ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত)।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, বরগুনার বাস টার্মিনাল নির্মাণ হলেও এখনো কিছু কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। পুরোপুরিভাবে সমাপ্ত হলেই দূরপাল্লার গাড়িগুলোর সাথে অটোরিকশা ও ইজিবাইকের একটি অংশ ওই স্থানে নেয়া হবে। বাকি যে অটোরিকশা ও ইজিবাইক থাকবে, তা বিআরটিএ ও পৌরসভা কর্তৃক কাগজপত্র ও কর্মপরিকল্পনানুযায়ী নির্ধারিত একটি পার্কিং স্থল দেয়া হবে। সেই সাথে হাইড্রোলিক হর্ণ বন্ধে জেলা প্রশাসন থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত