কেশবপুরে ৫শ’ বছর বয়সী গাছটি সংরক্ষণের দাবি
কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২০, ২০:৩৫
যশোরের কেশবপুর উপজেলায় বিরল প্রজাতির সাড়ে ৫শ’ বছর বয়সী বন বিবির মিষ্টি তেঁতুল গাছটি অযত্ন অবহেলায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পূজা অর্চনাসহ বহুবিধ গুণের কারণে তেঁতুল গাছটি এলাকায় অলৌকিক গাছ হিসেবে পরিচিত। খাস জমির উপর অবস্থিত ওই গাছটি এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অত্যাচার নির্যাতনের শিকারে পরিণত হয়ে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। ঐতিহ্যবাহী এই বন বিবির মিষ্টি তেঁতুল গাছটি সরকারিভাবে সংরক্ষণ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, কেশবপুর সদর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মূলগ্রাম ও পাশ্ববর্তী মণিরামপুর উপজেলার আটঘোরা সড়কের পাশে সরকারি ২০ থেকে ২২ শতক খাস জমির উপর ঐতিহ্যবাহী বিরল প্রজাতির প্রায় সাড়ে ৫শ’ বছর বয়সী বন বিবির মিষ্টি তেঁতুল গাছটি অবস্থিত।
গাছটির নামানুসারে সড়কটি নিলেমালা তেঁতুল তলা সড়ক নামে পরিচিত। অতীতে গাছটি আশপাশের প্রায় ২ বিঘা জায়গা নিয়ে বিস্তৃত ছিলো। কিন্তু গাছটির চারপাশের ভূমি দস্যুরা সরকারি জমি দখল করে ওই স্থানের মাটি কেটে পতিত জমি বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চাষাবাদ অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া গাছটির উপর অত্যাচার নির্যাতন করায় গত ৯ বছর আগে উপড়ে পড়েও অলৌকিকভাবে এখনো বেঁচে আছে।
শত অত্যাচারের মধ্যেও এবারও গাছে নতুন পাতা গজিয়েছে ও ধরেছে তেঁতুল। যার স্বাদ মিষ্টি। পতিত হওয়ার পরও গাছটি সজীবতা ফিরে পাচ্ছে। বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন দর্শনার্থীরা বন বিবি নামে খ্যাত তেঁতুল গাছটি দেখতে আসেন। একই সাথে প্রাচীন কাল থেকেই মূলগ্রাম, কোমরপোল, গৌরীপুর, খৈত্রপাড়াসহ দূর-দূরান্তের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এ গাছটিকে ঘিরে মানত ও পূজা অর্চনা করে আসছেন।
মূলগ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি দাদাদের মুখে শুনেছেন ত্রিপুরাপুর খেয়াঘাট থেকে একটি নদী মূলগ্রামের ভেতর দিয়ে মধ্যকুল হয়ে কালিগঞ্জ খেয়াঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো। দিনে একবার পাল তোলা নৌকায় চড়ে মানুষ এ নদী দিয়ে চলাচল করতো। এ নদীর পাড়েই বন বিবির তেঁতুল গাছটি লাগানো ছিলো। কালের আবর্তে বর্তমান সে নদীর কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে এর নাম বন বিবির তেঁতুল গাছ কেন হলো এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হয়তোবা বনের মধ্যেই গাছটি জন্মে ছিল বলে এর নামকরণ করা হয় বন বিবির তেঁতুল গাছ।
ওই এলাকার গৌতম দত্তের সাথে কথা হলে তিনি জানান, খাস জমি দখল করে একটি দুষ্টচক্র দীর্ঘদিন ধরে চাষাবাদ করে আসছে। দিনে দিনে খাস জমি তার অস্তিত্ব হারাচ্ছে। এটি সরকারিভাবে সংরক্ষণ করার দাবি জানান।
মূলগ্রাম ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নিমাই চন্দ্র দাস বলেন, প্রায় ২০ শতক জমির উপর বনবিবি তেঁতুল গাছ অবস্থিত। কর্মসৃজনের মাধ্যমে ওই এরিয়া মাটি দ্বারা ভরাট করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও বরাদ্দ না পাওয়ায় সম্ভব হয়নি। সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা যাতে ঠিকভাবে পূজা অর্চনা করতে ও দর্শনার্থীরা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে দেখতে পারে তার সুব্যবস্থার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
কেশবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক আলাউদ্দীন আলা বলেন, কেশবপুর ও মণিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী বিল এলাকার মূলগ্রামে সড়কের পাশে বিরল প্রজাতির প্রায় সাড়ে ৫শ’ বছর বয়সী বন বিবির মিষ্টি তেঁতুল গাছটি অবস্থিত। ঐতিহ্যবাহী এ গাছটিকে রক্ষাসহ অরক্ষিত ভূমি উদ্ধার করা সম্ভব হলে এখানে একটি বিনোদনের সুন্দর জায়গা গড়ে তোলা সম্ভব। যে কারণে আমরণ বা চিরজীবী গাছ হিসেবে সরকারিভাবে এর সংরক্ষণ করা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ইরুফা সুলতানা বিষয়টি নিয়ে তিনি খোঁজ খবর নেবেন বলে জানান।
বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে