ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

৩০০ কি.মি পথ মাড়িয়ে চিতাবিড়াল বাঁচালেন দুই তরুণ

  মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২১, ১৫:০৮

৩০০ কি.মি পথ মাড়িয়ে চিতাবিড়াল বাঁচালেন দুই তরুণ
ছবি- প্রতিনিধি

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থেকে সিলেট হয়ে সুনামগঞ্জের দূরত্ব ১৫৪ কিলোমিটার। আসতে-যেতে ৩০৮ কিলোমিটার। আর এই ৩০০ কিলোমিটারের বেশি পথ জার্নি করে বিপন্ন প্রজাতির একটি চিতাবিড়াল উদ্ধার করেছেন শ্রীমঙ্গলের দুই প্রাণীপ্রেমী সোহেল শ্যাম ও খোকন থৌনাউজম।

বুধবার (৬ জানুয়ারি) সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে প্রাণীপ্রেমী সোহেল শ্যাম জানতে পারেন, শ্রীমঙ্গল থেকে ১৫৪ কি.মি দূরে সুনামগঞ্জের জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে এক ব্যক্তি একটি চিতাবিড়ালকে খাচায় বন্দি করে রেখেছেন ৬/৭ দিন যাবৎ। বন্দি রাখলেও ঠিকমতো খাবার না দেয়ায় বিড়ালটি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।

বিষয়টি সোহেল তার দীর্ঘদিনের প্রাণীসেবার সঙ্গী ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার খোকন থৌনাউজমকে জানান। দুজন মিলে সিদ্ধান্ত নেন বনবিভাগকে জানিয়ে তারা নিজেরাই উদ্ধারে যাবেন।

খোকন থৌনাউজম জানান, উদ্ধারের সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা যোগাযোগ করি বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরীর সাথে। বন কর্মকর্তা আমাদের ইচ্ছা ও ঘটনা শুনে উৎসাহ দেন এবং সাথে মৌলভীবাজার অফিস থেকে বনবিভাগের ৪ জন প্রতিনিধি দেন। ৬ জন মিলে সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। সুনামগঞ্জ থেকে যুক্ত হন বনবিভাগের আরেকজন স্থানীয় স্টাফ।

তিনি বলেন, সবাই মিলে চিতাবিড়াল উদ্ধার করতে গিয়ে দেখি এর বয়স ৬/৭ মাস হবে। খাঁচার ভেতর ভাত দিয়ে রাখা হয়েছে। মাংসাশী প্রাণী বলে ভাতে অভ্যস্ততা না থাকায় অসুস্থ হয়ে গেছে। চিতাবিড়ালটি উদ্ধারের পর সেবা করে সুস্থ করার উদ্দেশ্যে মধ্যরাতেই শ্রীমঙ্গল নিয়ে আসি। রাস্তায় বিড়ালকে কোয়েল পাখি খেতে দেয়া হয়। বর্তমানে বিড়ালটি লাউয়াছর জানকিছড়া রেসকিউ সেন্টারে আছে।

সুহেল শ্যাম জানান, বিড়ালটি উদ্ধার করতে পেরে আমরা আনন্দিত। আমরা জানতে পেরেছি এই বিড়ালের একজন সঙ্গী ছিলো যাকে গ্রামবাসী পিটিয়ে মেরে ফেলেছে এবং এটিকে বন্দি করে রাখে। বনবিভাগের সহযোগিতায় সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলে লাউয়াছড়া বনে অভমুক্ত করে দেবো। লাউয়াছড়া বনে এমন বিড়াল আমি দেখেছি, তাই এই বিড়ালটি সেখানে সঙ্গী পাবে।

দুই যুবকের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মৌলভীবাজার জেলা সমন্বয়ক আ স ম সালে সুহেল জানান, এই শীতের দিনে ৩০০ কি.মি জার্নি করে স্বেচ্ছায় যারা যেতে পারে, তাদের প্রাণীপ্রেম আমাদের জন্য উদাহরণ। এমন কিছু মানুষের হাত ধরেই বন্যপ্রাণীরা রক্ষা পাবে।

এ বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এই দুই যুবকের প্রাণীপ্রেম প্রশংসনীয়। তারা আমাদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে, আমরাও করেছি। বনবিভাগের লোকজন তাদেরকে সাথে নিয়ে গেছে। এভাবে বনবিভাগ আর সাধারণ মানুষ মিলেমিশে কাজ করলে দেশের বন্যপ্রাণী রক্ষা করা সহজ হবে।

তিনি আরও জানান, বিড়ালটি বর্তমানে অসুস্থ আছে। তাকে কয়েকদিন সেবা দিয়ে সুস্থ করে বনে অবমুক্ত করা হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত