ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

জানাজানির পর নিম্নমানের ইট ফেরত দিলেন ইউএনও

  জামালপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২১, ১৮:৪৬

জানাজানির পর নিম্নমানের ইট ফেরত দিলেন ইউএনও
ছবি- প্রতিনিধি

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে নিন্মমানের ইট ব্যবহারের খবর চাউর হলে অবশেষে দুই নম্বর ইট ফেরত দিলেন মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

জামালপুরের মাদারগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ভূমিহীন-গৃহহীনদের ঘর নির্মাণে নিন্মমানের ইট ব্যবহারের কারণে নবনির্মিত ঘরের একপাশের দেয়ালের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে।

এছাড়া উপজেলার ৬ নং আদারভিটা ইউনিয়নের গজারিয়ায় এ ঘর প্রদানের জন্য প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত ১৫টি পরিবারকে ঘরের ভিটা নিজ খরচে তৈরি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।

১৫টি বাড়ি নির্মাণে মিতু ব্রিকসের মালিক আবুল কালামের সাথে ৩ লাখ ২ নম্বর ইটের কেনার জন্য চুক্তি করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল মুনসুর। এর মধ্যে গজারিয়া প্রকল্পে ১০ হাজার ২ নম্বর ইট নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই ইটভাটার মালিক। এ ঘটনা জানাজানি হলে ওই প্রকল্প থেকে নিম্নমানের ইট সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে জামালপুরের মাদারগঞ্জে প্রকৃত গৃহহীনদের জন্য ১২১টি বাড়ি নির্মাণের জন্য সরকারিভাবে ২ কোটি ৬৯ লাখ ১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ২ কক্ষবিশিষ্ট প্রতিটি বাড়ির জন্য একটি শোবার ঘর, একটি রান্নাঘর ও করিডোরসহ বাথরুম নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা।

বাড়িগুলো নির্মাণে কোনো ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়নি। সরাসরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি ভূমি কর্মকর্তা দায়িত্ব নিয়ে এ কাজ করছেন।

এই প্রকল্পে উপজেলার ৬ নং আদারভিটা ইউনিয়নে গজারিয়ায় ১৫টি পরিবারকে প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রকল্পে প্রতিটি ঘরের মালিককে নিজ ঘরের ভিটা নিজ খরচে তৈরি করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে ভুক্তভুগীরা জানিয়েছেন।

প্রতিটি বাড়ির ভিটা তৈরি করতে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা মাটিকাটা বাবদ ব্যয় হচ্ছে। বরাদ্দের ঘর যাতে না ছুটে যায়, সেজন্য হতদরিদ্র ও গৃহহীনরা মাটি কাটার জন্য চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ঘরের ভিটা তৈরি করছেন। প্রকল্পের ১৫টি ঘরের মধ্যে কেবল ১টি ঘরের দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণ অবস্থাতেই দেয়ালের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে।

ঘর বরাদ্দের তালিকাভুক্ত রোকেয়া বেগম বলেন, ভিটার মাটি কাটার জন্য ১৫ হাজার টাকা সুদে ঋণ নিয়ে আংশিক মাটি কেটেছি।

তালিকাভুক্ত শিলা, আলাতন, রোকন ও লিটন বলেন, ‘সরকার আমগো ঘর বরাদ্দ দিছেন। কিন্তু ঘরের ভিটা তৈরি করতেই ম্যালা টেহা নাগে (লাগে)। সুদে ঋণ নিয়ে ভিটা তৈরি কল্লে (করলে) আমরারতো সুদেও ট্যাহা দিতে দিতে জান যাবো।’

নিম্মমানের ইট সরবরাহের বিষয়ে ইটভাটার মালিক আবুল কালাম জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল মুনসুর নিজে আমার ইটভাটায় এসে ২ নং ইট প্রতিহাজার ৬ হাজার ৫০০ টাকায় ক্রয় করেন। ১ নং ইটের দাম প্রতিহাজার ৮ হাজার ৫০০ টাকা। এখন তিনি আমাকে ওই ২ নং ইট ফেরত আনার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন। ২ নম্বর ইটের পরিবর্তে ১ নম্বর ইট দিতে হলে তো ১ নম্বর ইটের দাম দিতে হবে।

তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল মুনসুর বলেন, ‘কোন প্রকল্পেই ২ নম্বর ইট নেয়া হয়নি।’

এসব বিষয়ে মাদারগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান বেলাল জানান, যাদের নামে ঘর বরাদ্দ হয়েছে, তারা ঘরের ভিটার মাটি কাটার টাকা দেবে না। আদারভিটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে ১৫টি বাড়ির মাটি কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে কেটে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, প্রকল্পে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত