ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

আটকে আছে ১৪ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স

  কিরণ শেখ

প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২১, ১৮:১৭

আটকে আছে ১৪ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স
ফাইল ছবি

প্রায় এক বছর ধরে ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে পরিবহন চালকরা। আর প্রিন্ট বন্ধ থাকায় ১৪ লাখেরও বেশি লাইসেন্স আটকে আছে। এই লাইসেন্স কবে পাবে তাও কেউ বলতে পারছেন না। আর বিআরটিএ স্মার্ট লাইসেন্স দেয়া বন্ধ রাখায় চালকদের ভোগান্তির সঙ্গে সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি চাকরিতেও তারা আবেদন করতে পারছেন না। পাশাপাশি বিদেশগামী চালকরাও আছেন দুর্ভোগে। বিআরটিএ’র একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানতে চাইলে বিআরটিএর পরিচালক (অপারেশন্স) সিধাংশু শেখর বিশ্বাস বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ১৪ লাখ নয় ৮ লাখের বেশী লাইসেন্স আটকে আছে। আর লাইসেন্স দেয়ার জন্য কোম্পানি কাজ করছে।

তবে বিআরটিএ বলছে, স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সের অপেক্ষায় চালকরা গাড়ি চালাচ্ছেন বিআরটিএ’র অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ দিয়ে।

রাজধানীর নয়াপল্টনে রিমন আহমেদ। এক বছর আগে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য টাকা জমা দিয়েছেন। অনলাইনে লাইসেন্সের অবস্থানও দেখতে পেতেন অ্যাপ ডিএল চেকারের মাধ্যমে। কিন্তু এখন রেফারেন্স নম্বর দিলে লেখা আসে সার্ভার বন্ধ।

ভুক্তভোগী রিমন বলেন, এখন লাইসেন্সের অবস্থা জানতে পারছি না। কবে সার্ভার চালু হবে, কবে প্রিন্ট করা স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে পাব তাও জানি না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) শুধু তারিখ পরিবর্তন করে যাচ্ছে।

একই হতাশার কথা শোনান তারিকুল ইসলাম। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর স্মার্ট কার্ড পাওয়ার কথা। কিন্তু এক বছরেও হাতে পাইনি। শুধু তারাই নন, এমন লাখ লাখ সেবাগ্রহীতারাও পড়েছে বিপাকে।

কবে নাগাদ লাইসেন্স দেয়া হতে পারে- জানতে চাইলে সিধাংশু শেখর বিশ্বাস জানান, আগামী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে তারা (কোম্পানি) লাইসেন্স দেয়ার কথা বলেছে। এজন্য ৩টি মেশিনে কাজও চলছে। আর ইতিমধ্যে বাইরে থেকে টেকনিশিয়ানও চলে এসেছে।

জানা গেছে, লাইসেন্স সরবরাহের জন্য বিআরটিএ’র সঙ্গে চুক্তি ছিল টাইগার আইটি’র। জাতিসংঘ থেকে প্রতিষ্ঠানটি কালো তালিকাভুক্ত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি চুক্তি থেকে বাদ পড়ে। গত বছরের ২৯ জুলাই পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ১২০ কোটি টাকার পাঁচ বছরের চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী এই সময়ের মধ্যে ৪০ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে প্রতিষ্ঠানটিকে। যদি খুব দরকার হয় তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিআরটিএ’র চাহিদা পূরণ করতে হবে। প্রতি আট ঘণ্টায় ছয় হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স দেবে। প্রতিষ্ঠানটির লজিক ফোরাম নামে বাংলাদেশি এজেন্ট প্রতিষ্ঠান এই কাজ বাস্তবায়ন করবে।

বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটিকে সবকিছু গুছিয়ে ফুল সার্ভিস দিতে সাড়ে চার মাসের সময় দেয়া হয়েছিলো। সে অনুযায়ী গত বছরের ডিসেম্বর থেকে গ্রাহকদের লাইসেন্স দেয়ার কথা। এ সময়ে প্রিন্ট করা স্মার্ট লাইসেন্স কার্ড সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্রাথমিক কাজও এখন পর্যন্ত শেষ করতে পারেনি। নিজেদের অফিস পর্যন্ত নিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। তাই কবে নাগাদ লাইসেন্স করতে পারবে তা কেউ সঠিক বলতে পারছেন না।

বিআরটিএ’র একজন কর্মকর্তা জানান, গত ডিসেম্বরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ড্রাইভিং লাইসেন্সের দু’টি স্যাম্পল দেখার আগ্রহ প্রকাশ করলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ তারা এখনো প্রাথমিক ধাপে কাজ শুরু করতে পারেনি। জানা গেছে, বিআরটিএ’র সকল ঠিকাদারি কাজে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করে সিএনএস নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারাই নামে-বেনামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে সকল কাজ বাগিয়ে নেন। মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেডের নামে নেয়া কাজটিও সিএনএস’র প্রতিষ্ঠান লজিক ফোরাম কাজটি নিয়েছে। একই কোম্পানি একই ভবনে সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করছে সিএনএস গ্রুপ।

তবে লজিক ফোরামের নির্বাহী পরিচালক তারিকুল হক বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, এই দুটি কোম্পানি এক নয়। দুটি কোম্পানি ভিন্ন।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৯ জুলাই পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য কার্ড তৈরি ও বিতরণের ইজারা পেয়েছে ভারতের মাদ্রাজ সিকিউরিটিজ প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ৪০ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করবে। এজন্য খরচ হবে ১২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি কার্ডের জন্য ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটি পাবে ৩০০ টাকা। করোনায় প্রাতিষ্ঠানিক সেবা বন্ধ ছিল। তবে খুব শিগগির তা আবারো চালু হবে।

কেএস/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত