ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২০ মিনিট আগে
শিরোনাম

মামলা নিতে থানা ঘেরাও, বন্ধ বাস-লঞ্চ চলাচল

  বরিশাল প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২১, ০৬:২৯

মামলা নিতে থানা ঘেরাও, বন্ধ বাস-লঞ্চ চলাচল
বরিশাল কাউনিয়া থানা

বরিশাল নগরীর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতার মামলা না নেয়ায় বরিশাল মেট্রোপলিটন কাউনিয়া থানা তিন ঘন্টা ঘেরাও রাখে নেতাকর্মীরা। বুধবার রাত ৯টায় মামলা নেয়ার পর ঘেরাও প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। থানা ঘেরাও প্রত্যাহার হলেও এখন মিজানের গ্রেফতারের দাবিতে দূরপাল্লা-অভ্যন্তরীন রুটের বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

মামলায় বিসিক শিল্প নগরীর ফরচুন সু কোম্পানীর চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানসহ ১৫ জনকে আসমী করা হয়। অপর আসামীরা হচ্ছে: শফিক ও রবিউল এবং ১২ জন অজ্ঞাতনামা। মামলা বাদী হচ্ছেন নগরীর ১নং ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইট-বালু-সিমেন্ট ব্যবসায়ী সোহাগ হাওলাদার। সোহাগ বিসিক এলাকার আব্দুল খালেক হাওলাদারের ছেলে।

বাদী জানান, বিভিন্ন সময় মিজানুর রহমান বাকীতে মালামাল নেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে টাকা না দিয়ে ঘোরাতে থাকেন। এমনকি টাকা চাইলে আমাকে ভয়ভীতি দেখান। সর্বশেষ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিসিক এলাকা থেকে মোটরসাইকেযোগে যাওয়ার সময় আমার পথরোধ করে আসামী মিজান তার ব্যবহৃত গাড়ি থেকে নেমে আমার বাম পাজোরে শর্টগান ঠেকায়। এরপর ওই দুই আসামীর সহযোগিতায় আমাকে অপহরণ করে ফরচুন সু কোম্পানীর কারখানায় নিয়ে যায়। সেখানে আমার উপর নির্যাতন চালায়। বিষয়টি জানার পর কাউনিয়া থানা পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে।

কিন্তু থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নেয়ায় বিষয়টি মহানগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে অবহিত করি। তারা আসার পর দলীয় নেতাকর্মীরা থানা ঘেরাও করে রাখে। মামলা নেয়ার পর ঘেরাও তুলে নেয়া হয়।

এ ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু বলেন, কোন চাপ সৃষ্টি করা হয়নি। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা সোহাগকে অপহরণ করে নিয়ে তার উপর নির্যাতন চালায়। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। আমার মতে যে কোন মানুষের আইনী সহায়তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সেখান থেকেও এ মামলা নেয়া উচিত ছিল। পরবর্তীতে মামলা নিলে নেতাকর্মীরা সেখান থেকে চলে আসে।

বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে জানান, নগরীর বিসিক রোডের একটি ফ্যাক্টরির লোকজন পরিবহন শ্রমিক সোহাগ হাওলাদারকে দুপুর দুইটার দিকে আটকে মারধর করে। এক পর্যায়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। খবর পেয়ে শ্রমিকরা থানা ঘেরাও করলে পুলিশ সোহাগকে ছেড়ে দেয় তবে ওই শ্রমিককে মারধর এর প্রতিবাদে মারধরকারীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়েরের আবেদন দেয়া হলে পুলিশ মামলা নিতে চায়নি। মামলা নেয়ার দাবীতে থানা ঘেরাও ও সড়ক অবরোধ করা হয়।

টেস্পু, মাহিন্দ্রা ও থ্রি হুইলার মালিক শ্রমিক সমিতির সভাপতি কামাল হোসেন মোল্লা লিটন জানান, মামলা না নেওয়া এবং মামলার আসামীদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ অব্যাহত থাকবে। বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ হোসেন জানান, তাদের শ্রমিকের উপর নির্যাতন করা হয়েছে। সে আহত হয়েছে। এই ঘটনার আইনানুগ বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখবে। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা।

একইভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে বরিশাল থেকে ঢাকাগামী সকল লঞ্চ। রাত ৯টার মধ্যে যাত্রীবাহী লঞ্চ ছাড়ার নির্ধারিত সময় থাকলেও লঞ্চ না ছাড়ায় যাত্রীরা স্টাফদের কাছে জিজ্ঞাসা করেও কোন সঠিক উত্তর পায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক লঞ্চ মালিক বলেন, সোহাগের দায়েরকৃত মামলায় এজাহারভূক্ত আসামীদের গ্রেফতারের দাবিতে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করা হয়। ওই মালিক বারবার অনুরোধ জানান, কোনভাবে তার নাম ব্যবহার না করার। একইভাবে আরো এক মালিক বলেন, আমাকে ভালো জানলে লিখবেন তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সোহাগ মামলা দায়ের করেছে। তবে লঞ্চ ও বাস কি কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে তা আমি জানি না।

পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান জানান, ফরচুন গ্রুপের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানসহ তিনজনকে আসামী করা হয়েছে। তদন্ত করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ফরচুন গ্রুপের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান দাবী করেন তার কারখানার এক নারী কর্মীকে উত্ত্যক্ত করছিলো সোহাগ। তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। তবে মারধর এবং অস্ত্র ঠেকানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বরে বিসিক এর উন্নয়নে ৭৪ কোটি টাকার ঠিকাদারী কাজ নিয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এবং বিসিক ব্যবসায়ীদের সাথে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। আর দ্বন্দ্বটা ছিল সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ও ফরচুন সু কোম্পানীর চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের সাথে।

বাংলাদেশ জার্নাল/টিআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত