ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

অর্থনৈতিক বিপ্লবে ফসলের সঙ্গে মৌ চাষ

  শাকিলা ইসলাম জুঁই, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২১, ১৫:৪০  
আপডেট :
 ২২ জানুয়ারি ২০২১, ১৭:৩৯

অর্থনৈতিক বিপ্লবে ফসলের সঙ্গে মৌ চাষ
ছবি: সবুজ খান

সাতক্ষীরায় রবি মৌসুমে একই জমিতে সমন্বিত চাষ পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে সরিষা ও মধু চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।

দুই উপায়ে মধু উৎপাদিত হয়ে থাকে। একটি হলো প্রাকৃতিকভাবে আহরিত মধু এবং অপরটি হলো কৃষক পর্যায়ে চাষকৃত মধু। বন-জঙ্গল থেকে যারা মধু সংগ্রহ করে, তাদের মৌয়াল বলা হয়। আবার যারা মধু চাষ করে, তাদের মধুচাষি বলা হয়।

প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ বাংলাদেশের নিজস্ব খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে মধু অন্যতম। দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, তবে পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন করতে মধু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কারণ মধু শর্করা জাতীয় খাদ্য হলেও বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন, এনজাইম ও খনিজ পদার্থ থাকে। একে সব রোগের মহাষৌধ বলা হয়। মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে।

দেশে মধু উৎপাদনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত আছে প্রায় ১৮ হাজার মৌচাষি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সারাদেশে মৌ চাষের আওতায় জমির পরিমাণ ৮৯,০৩৭ হেক্টর। বর্তমানে উৎপাদিত মধুর পরিমাণ প্রায় ৭০০-৮০০ মেট্রিক টন। সরিষা ও মধু চাষ কৃষিকে বাণিজ্যকীকরণে ও বহুমুখীকরণে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে।

সংগ্রহ করা হচ্ছে মধু। ছবি: প্রতিনিধি

প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে শস্য চক্র ও সময় বিবেচনা করে মধু উৎপাদন ৪০-৫০ হাজার মে. টন পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।

এ বছর সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলায় ১১ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। মধু আহরণের জন্য জেলায় এবার সরিষার ক্ষেতের চারপাশে ৩ হাজার মৌচাষি ১০ হাজারের বেশি মৌবক্স স্থাপন করেছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭শ’ মেট্রিক টন।

আগে কৃষকের ফলন নষ্ট হবে ভেবে তাদের আবাদি জমিতে মৌ বাক্স বসাতে দিতেন না। অথচ মৌ চাষের ফলে সরিষার ২০ শতাংশ ফলন বাড়ে।

শুধু সরিষাই নয়, মৌমাছিরা ফুলের পরাগায়ন ঘটিয়ে নানা ধরণের রবিশস্যের ফলন বাড়ায়। এর ফলে বর্তমানে কৃষকরা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে আবাদি জমির পাশে মৌমাছির বাক্স স্থাপন করতে সহযোগিতা করছেন।

পরাগায়ন ঘটিয়ে ফসলের উৎপাদন বাড়ায় মৌমাছি। ছবি: সবুজ খান

সাধারণত মৌ চাষের প্রতিবাক্স থেকে সপ্তাহে ৪-৫ কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়। তবে অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে মধু সংগ্রহ বেশি হয়। ৩০টি বাক্সে ১২০ থেকে ১৫০ কেজি মধু সংগ্রহ করা হয়, যার বাজারমূল্য ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা।

সরিষা ও মৌ সমন্বিত চাষের ফলে অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। মৌ চাষের কারণে একদিকে যেমন সরিষা উৎপাদন বাড়ছে, অন্যদিকে অল্প খরচে মৌ চাষ করে সাবলম্বি হচ্ছে অনেক বেকার তরুণ।

সদর উপজেলার তালতলা মাগুরা এলাকার মৌ চাষি মোশাররফ হোসেন ও মিলন সরদার জানান, কোনো ধরণের প্রশিক্ষণ ছাড়াই নিজেদের চেষ্টায় তারা মধুর চাষ শুরু করেছেন। তাদের সংগ্রহে ১৪০টি মৌমাছির বাক্স আছে। যার মাধ্যমে তারা মৌসুমে সরিষা, আম, কুল, লিচু ও কালোজিরার মধু সংগ্রহ করে।

ফসলের সাথে মৌ চাষ ঘটাতে পারে অর্থনৈতিক বিপ্লব। ছবি: সবুজ খান

তারা মধু প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য চায়না থেকে মেশিন নিয়ে এসেছেন। যার মাধ্যমে অটোমেটিক মধু প্রক্রিয়াজাত সম্ভব। বর্তমানে বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে ভারতের ডাবর কোম্পানি মধু সংগ্রহের ক্ষেত্রে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানান তিনি।

মধু চাষি মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, সরকারি সহযোগিতা পেলে আগামীতে বিদেশে রপ্তানি করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্ভব। সরকারি উদ্যোগে চাষিদের প্রশিক্ষণ ও তাদের উৎপাদিত মধু বাজারজাত হলে যেমন আরো অধিক উৎপাদন সম্ভব হতো, তেমনি বাজারমূল্য আরো বেশি পেতেন।

তিনি আরো বলেন, উন্নত প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা না থাকায় কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয় চাষিদের।

খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, মৌচাষিদের মধু আহরণের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মধু সংরক্ষণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও মধু সংগ্রহের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার করতে পারলে মৌ চাষ আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত