ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন নিরাপদ ও আমাদের উপযোগী

  শেখ তৌফিকুর রহমান

প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:৫৫  
আপডেট :
 ২৬ জানুয়ারি ২০২১, ১৮:২৯

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন নিরাপদ ও আমাদের উপযোগী
অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা। বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) চেয়ারম্যান। স্পষ্টবাদী হিসেবে তিনি পরিচিত। মোদাচ্ছের আলী করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে বাংলাদেশ জার্নালকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলাদেশ জার্নালের নিজস্ব প্রতিবেদক শেখ তৌফিকুর রহমান। প্রশ্নোত্তর আকারে সাক্ষাৎকারটি প্রদত্ত হলো।

ভারত থেকে নিয়ে আসা ভ্যাকসিন সম্পর্কে নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী: আমাদের জানা প্রয়োজন যে, আমরা ভারতের কোনো ভ্যাকসিন নিচ্ছি না। ভারতের ভ্যাকসিন বলতে যেমন- ভারত বায়োটেক একটি ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। আমরা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন; যেটা ভারতের সেরাম ল্যাবরেটরিতে তৈরি হচ্ছে। কিন্তু তারাই এটা ম্যানুফেকচার করেছে। সমস্ত ফর্মুলার দায়দায়িত্ব সবকিছু অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার। এই ভ্যাকসিন ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্যে ম্যাসিভ আকারে দেয়া শুরু হয়েছে এবং এর কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোটামুটিভাবে এখন সবার জানা। যদিও একটি ভ্যাকসিন সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে অনেক সময় কয়েক বছর লেগে যায়। আসলে কোনো ভ্যাকসিন সম্বদ্ধে আমরা জানি না এর কার্যকারিতা কতদিন থাকবে। এটা একটা মূল প্রশ্ন। এটা কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ভ্যাকসিনের সম্পর্কে জানা যায়নি। যেহেতু বিশ্বব্যাপী এখন মহামারি, সেজন্য দ্রুতগতিতে ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে। অনেক অজানা ফ্যাক্টর থাকা সত্ত্বেও ভ্যাকসিন নেয়া ছাড়া বিকল্প নেই।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন আনার কারণ কী?

ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী: পৃথিবীতে অনেকগুলো ভ্যাকসিন বেরিয়েছে। এখন আমরা যে ভ্যাকসিনটা এনেছি সেটি আমাদের দেশের আবহাওয়া ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে আনা হয়েছে। আমাদের যে কমিউনিকেশন সিস্টেম; যেমন দেশের দূরে-দূরন্তের বিভিন্ন জায়গায় নিতে হবে। সেসব জায়গায় নিতে হলে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার চেয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভালো ভ্যাকসিন এই মুহূর্তে নেই। সেই কারণেই আমার মনে হয়, আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কেমন হবে বলে আপনি মনে করছেন?

ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী: ভ্যাকসিনটির অনেকগুলো রিপোর্টে এসেছে। যদি প্রথম ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরের গ্যাপটা চার সপ্তাহ না করে ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ করা হয় তাহলে এর কার্যকারিতা আরো বাড়ে। যদিও এটার পাবলিকেশন এখনো হয়নি। তাই সমস্ত চিন্তা করেই আমাদের দেশে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ভ্যাকসিন প্রয়োগের ৮ সপ্তাহ পরে ডোজ দেয়া হবে। অর্থাৎ এখন যিনি প্রথম ডোজ পাবেন তিনি পরবর্তী ডোজ আগামী মাসে না পেয়ে পরের মাসে পাবেন। এভাবে দেয়া হবে।

ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। অভিজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে আপনার পরামর্শ কি?

ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী: পৃথিবীতে বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন ব্যবহার হচ্ছে, যেমন ফাইজারের ভ্যাকসিন, মডার্নার ভ্যাকসিন। তুলনামূলকভাবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম। এর সুবিধা হচ্ছে, এর পরবর্তী ডোজ যদি ৮ সপ্তাহে দেয়া যায় তাহলে এর কার্যকারিতা ৮০ শতাংশের কাছাকাছি হবে বলেই মনে হচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত এর কোনো পাবলিকেশন নেই। অধিকাংশ গবেষণা বলছে, আগামী ২/৩ সপ্তাহের মধ্যে এরও ফলাফল জানা যাবে। আমাদের সবচেয়ে সুবিধা হচ্ছে, আমাদের তাপমাত্রা অনুযায়ী এটা রাখা সহজ। এটা সাধারণ ফ্রিজে রাখা যাবে।

এটার (অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন) যত ট্রায়াল হয়েছে, এই ভ্যাকসিনের সাকসেসফুললি ট্রায়াল দেয়ার পরেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছে- এমন রিপোর্ট আছে। কিন্তু কোনো রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়নি- এটা প্রমাণিত। ভ্যাকসিন দেয়ার পর করোনা শরীরে প্রবেশ করতে পারবে না- এটার শতভাগ নিশ্চয়তা কোনো ভ্যাকসিনের নেই, এটারও নেই। কিন্তু এটা করোনার প্রকোপটা কমাতে পারবে, সেই প্রমাণ আছে। সে কারণে এটা সেইফ। আমার মনে হয়, অধিকাংশ লোক যারা সায়েন্স সম্বন্ধে জানে, তারা এটা নিতে চাচ্ছেন।

অন্যান্য ভ্যাকসিন অনুমোদন দেয়ার প্রক্রিয়া কত দূর?

ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী: আর ভারত বায়োটেক যেটা, সেটা আমি ভারতের টেলিভিশনের খবরে দেখলাম, এর প্রথম ফেজের সমস্ত রিপোর্ট বিশ্বাসযোগ্য এবং নামকরা জার্নালে বেরিয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় ফেজেরটা মাত্র পুনর্মূল্যায়ন হচ্ছে এবং সর্বশেষটা অর্থাৎ যেটার মাধ্যমে চূড়ান্ত হবে সেটার মাত্র কাগজপত্র জমা দেয়া হয়েছে। সুতরাং, এখনো সেটা কোনো বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত ভ্যাকসিন না। ওটা কেন ভারত ম্যাসিভ আকারে দিল, এইটা একজন সায়েন্টিস্ট হিসেবে আমাদের কাছে বোধগম্য হচ্ছে না। আর আমি বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) চেয়ারম্যান হিসেবে বলতে পারি, আমাদের এখানে যে ভ্যাকসিনগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তার মধ্যে একটা ভারত বায়োটেক; তারা যেটি প্রয়োগ করছে সেটা সম্পর্কে আমরা কিছু তথ্য চেয়েছি। প্রায় দুই সপ্তাহ হয়ে গেল, তারা সেই তথ্যটা এখনো দেইনি। হয় ওদের কাছে নেই অথবা নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা আছে। তারপরে আমরা বিচার করব ওটা এখানে দেয়ার জন্য অনুমোদন দেয়া যায় কি না।

ভ্যাকসিন থেকে শুরু করে ওষুধপত্রে আমাদের দেশে একটা আইন হচ্ছে, যদি কোনো ওষুধ বা ভ্যাকসিন ইউরোপ, আমেরিকা এবং ভারতে যদি অ্যাপ্রুভ হয় তাহলে বাংলাদেশে কোনো টেস্ট লাগে না। কিন্তু ভারত-বায়োটেক যেহেতু ভারতে ট্রায়েল হয়েছে, অন্য জায়গায় হয়নি; সুতরাং এখানে ব্যবহার করতে হলে ইউরোপ-আমেরিকার বাইরে বিএমআরসির অনুমোদন লাগে। বিএমআরসি দেয় শুধু নৈতিক অনুমোদন। এটা কিন্তু ভ্যাকসিন অনুমোদন না। নৈতিক অনুমোদন দেয়ার পর আরো কিছু প্রক্রিয়া আছে তার পরে ভ্যাকসিন দেয়া যায়। সেই কারণে আমাদের বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেক জমা দিয়েছে, সেটাও প্রক্রিয়াধীন। ভারত-বায়োটেক দিয়েছে, সেটা আছে, চাইনিজ আছে। তিনটি ভ্যাকসিন প্রক্রিয়াধীন আছে। কিন্তু এগুলোর আমরা নৈতিক অনুমোদন দেব। তারপরে সরকারের অন্যান্য নিয়মকানুন মেনে ওরা এখানে ট্রায়েল শুরু করতে পারবে। ট্রায়েল শেষ হলে তারপরে ভ্যাকসিন দেয়া যাবে কি যাবে না সেই প্রশ্ন।

ভ্যাকসিন প্রয়োগের প্ল্যানটা কেমন হবে?

ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী: অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার যে ভ্যাকসিন এনেছে সেটি মানব দেহের জন্য সেফ। তবে কিছু কিছু সাইড ইফেক্ট হতে পারে সেটি মারাত্মক না। তারপরেও প্রথম দিকে সরকার যে প্ল্যানটা করেছে খুবই লজিক্যাল। প্রথমে এটা অল্পজনকে দিয়ে দেখবে। তারপরে সম্মুখযোদ্ধাদের কয়েকজনকে দেবে। তাদেরকে দেখার পর সবার দেয়া হবে। সুতরাং, পৃথিবীর কোনো দেশ আমাদের দেশের মতো প্রিপারেশন নিয়ে এত লজিস্টিক্যালি ভালোভাবে করেনি। আমার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস সত্যিকার অর্থে একজন ভালো আমলা। যেটাকে তিনি ওভারঅল কো-অর্ডিনেট করছেন। এটা সঠিকভাবেই হচ্ছে।

ভ্যাকসিন নিয়ে বিএনপি সমালোচনা করছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী: আমার মনে হয় বিএনপি বলে দিক যে তারা ভ্যাকসিন নেবে না, তাহলে বিএনপির লোকদের দেয়া লাগল না। তাতে ভ্যাকসিন আরো কম আনা লাগবে। বিএনপি ছাড়া অন্য দলগুলো যদি ভ্যাকসিন নিয়ে জীবিত থাকে তারপরে তারা নেবে। যেহেতু তাদের মুখপাত্র এটা বলেছে তাহলে ধরে নেব- এটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। আমি বিএমআরসির চেয়ারম্যান হিসেবে তাদের অনুরোধ করছি তারা যেন রেজিস্ট্রেশন না করে। আগে তারা দেখুক যাদের প্রয়োগ করা হচ্ছে তারা বাঁচে কি না। যেমন আমাকে যদি নিতে বলে আমি নেব। যদিও এখনই আমার নেয়ার কথা না, আমার বয়স হিসেবে নেয়ার কথা সেকেন্ড স্টেজে। তারপরেও নিতে বললে নেব। কারণ, আমার বিজ্ঞানের প্রতি বিশ্বাস আছে। বিএনপি নেতাদের প্রতি আমার আবেদন তারা প্রয়োগের ৩ মাস দেখুক যে, এই ভ্যাকসিন নিয়ে যারা বিএনপি করে না তারা বাঁচে কি না, তারপরে তারা নিক।

আরো পড়ুন

করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে সুখবর পেলো বাংলাদেশ​

সবার আগে ভ্যাকসিন নেবেন অর্থমন্ত্রী​

দেশের ভ্যাকসিন কেনার বিপুল অঙ্কের অর্থের যোগান কি নিশ্চিত​

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত