ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

মেসের বুয়ার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের কারণেই খুন হন হুমায়ুন

  মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৬:৫০

মেসের বুয়ার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের কারণেই খুন হন হুমায়ুন
গার্মেন্টস কর্মকর্তা হুমায়ুন হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার স্বামী-স্ত্রী, ইনসেটে হুমায়ুন

শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে কাছে আসতে বাধ্য করা হতো মেসের বুয়াকে। হাতে-পায়ে ধরেও নিস্তার পাননি তিনি। একদিন সবকিছু জেনে যায় তার স্বামী। এরপর স্বামী-স্ত্রী মিলে হত্যার পরিকল্পনা করেন অভিযুক্ত গার্মেন্টস কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরকে। গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে পিঠার সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়। এরপর বালুচরে নিয়ে বাটখারার আঘাতে স্বামী ও স্ত্রী মিলে হত্যা করেন তাকে।

মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে দুর্গম চরাঞ্চলে গার্মেন্টস কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরকে এভাবেই হত্যা করা হয়। পুলিশ এ হত্যা রহস্য উদঘাটনের পাশাপাশি জড়িত দম্পতিকেও গ্রেপ্তার করেছে। শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

হত্যাকাণ্ডের শিকার হুমায়ুন কবির (৪২) বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার রাজাপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে। তিনি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার মেহেরাবাড়ি এলাকায় সুলতানা সুয়েটার্স লিমিটেড নামের একটি কারখানায় সহকারী উৎপাদন ব্যবস্থাপক ছিলেন।

গ্রেপ্তার দম্পতি হলেন নাছির উদ্দিন (৩৬) এবং তার স্ত্রী নাজমা আক্তার (৩৪)। নাছিরের বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলায়। নাজমার বাবার বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে। তারা দুজন ভালুকা উপজেলার মেহেরাবাড়ি এলাকায় ভাড়া থাকতেন।

পুলিশ জানায়, গত রোববার (৩১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের যমুনা নদীর দুর্গম চরাঞ্চল কালিকাপুর থেকে অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় লাশের পাশে ওই ব্যক্তির মোবাইল ফোন এবং একটি পরিচয়পত্র পাওয়া যায়। এর সূত্র ধরেই প্রথমে হুমায়ুন কবিরের পরিচয় শনাক্ত হয়। পরে নিহতের ভাই শহিদ দেওয়ান দৌলতপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজুর রহমান (প্রশাসন ও অপরাধ) এবং শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানিয়া সুলতানা। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানিয়া সুলতানা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামেন।

প্রযুক্তির সহায়তাসহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ময়মনসিংহের ভালুকার মেহেরাবাড়ি এলাকা থেকে নাছির ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রথমে তারা পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের কথা অস্বীকার করেন।

পরে শুক্রবার দুপুরে তাদের আদালতে তোলা হলে তারা হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন বলে নিশ্চিত করেন শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানিয়া সুলতানা।

পুলিশের কাছে ও আদালতে ওই দম্পতি জানান, নাজমা মেসে রান্না করতেন। ওই মেসে খেতেন গার্মেন্টস কর্মকর্তা হুমায়ুন। একদিন হুমায়ুন কৌশলে তাকে শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করেন। সেই দৃশ্য হুমায়ুন নিজের মোবাইল ফোনে ধারণ করে রাখেন। এরপর সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে একাধিবার কাছে আসতে বাধ্য করা হয় নাজমাকে। নজমা হাতে-পায়ে ধরেও তার কাছ থেকে রক্ষা পাননি। একদিন নাজমার স্বামী ঘটনা জেনে যান।

এরপর তার হাত থেকে বাঁচতে হুমায়ুনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন স্বামী-স্ত্রী। পরিকল্পনা অনুযায়ী নাজমার বাবার বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া চরে হুমায়ুনকে বেড়াতে নিয়ে আসেন তারা। ৩১ জানুয়ারি বাবার বাড়িতে পিঠার সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয় হুমায়ুনকে। এরপর সন্ধ্যায় পার্শ্ববর্তী পাগলার চরে বোনের বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে নির্জন বালুচরে স্বামী-স্ত্রী মিলে মুখে ও মাথায় বাটখারার আঘাতে তাকে হত্যা করেন। পরে লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যান তারা।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) হাসমত আলী জানান, ওই দম্পতি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বৈধ কোনো অভিভাবক পাওয়া না যাওয়ায় তাদের ছয় বছরের মেয়ে মিম এবং সাড়ে তিন বছরের ছেলে আলাউদ্দিনকেও মায়ের জিম্মায় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত