ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

অবহেলায় হারিয়ে যাওয়া এক শিল্পকলা একাডেমির গল্প

  রুহুল আমিন, ধামরাই প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৮:৩০  
আপডেট :
 ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৮:৩৭

অবহেলায় হারিয়ে যাওয়া এক শিল্পকলা একাডেমির গল্প
ছবি- প্রতিনিধি

ঢাকার ধামরাইয়ে প্রায় ২শ' বছরের বিখ্যাত গোকুল শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম এখন পুরোপুরিই বিলুপ্তির পথে। বিখ্যাত ধর্মীয় ও উচ্চাঙ্গসংগীতে পারদর্শী ছিলেন গোকুল বাবু। পৌরসভার বর্তমান কায়েতপাড়া চৌরঙ্গী মোড়ে গোকুল শিল্পকলা একাডেমি অবস্থিত।

সরেজমিন দেখা যায়, তৎকালীন যুবক গোকুল বাবুর নিজ বাড়িতে প্রায় ২শ' বছর আগে এই শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তখন ভূপেনন্দ্র নাথ চক্রবতী, দীনেশচন্দ্র পাল, রমেশ চন্দ্র পাল, শিল্পী যোগেশ চন্দ্র বনিকসহ (পটল বাবু) কয়েকজনকে নিয়ে নিজের বাড়িতেই গড়ে তোলেন সাংস্কৃতিক সঙ্গীত শিল্পকলা একাডেমি। এদের মধ্যে সকলেই উচ্চাঙ্গসংগীতে পারদর্শী ছিলেন। গোকুল বাবু সাংস্কৃতিক বিষয়ে দক্ষ ছিলেন।

পরবর্তীতে দেশ বিভাজনের পূর্বে তৎকালীন পাকিস্তান আমলে গোকুল বাবু তার সম্পদ রেখে ভারতে চলে যান। এরপর থেকে 'গোকুল সংসদ ক্লাব'টি পরে তার ছাত্ররাই দেখাশোনা করতে থাকে। বাংলা ১৩৩৭ সনে এটি সাংগঠনিক রুপ লাভ করে। শুধু ধামরাই নয় দেশের বিভিন্ন জায়গায় এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েন।

আরও জানা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে এমনকি বেতার ও টিভি'র অনেক সঙ্গীতশিল্পীরা গোকুল শিল্পকলা একাডেমিতে গান পরিবেশন করেন। মানিকগঞ্জের সঙ্গীতশিল্পী আব্দুল হালিম, পল্লীগীতি শিল্পী ওসমান খা ক্লাব দেখতে এসে গান করেন।

একসময় তবলা বাজাতেন মাখন লাল মজুমদার, হীরু মজুমদার, সুবাস মজুমদার প্রমুখ। এদের পরবর্তীতে ক্যাম্বেল পাল, সত্যেন্দ্রনাথ ধর (ব্রিটিশ) গান পরিবেশন করেন।

পরবর্তীতে অমূল্য নীধি পাল (দাসু পাল), আওলাদ হোসেন পাঠান, এসাক খান, নীতিশ সূত্র ধর, রবীন্দ্রনাথ সরকারসহ আরো অনেকে সঙ্গীত পরিবেশন করতেন। তখন তবলায় কাজ করতেন বল্লব সূত্র ধর।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই গোকুল শিল্পকলা একাডেমিতে শিল্পী হিসেবে গান পরিবেশন করেছেন সঞ্চয় ঘোষ, সঞ্জীব ভট্রাচার্য (গৌরাঙ্গ), অ্যাড. আবুল কাসেম রতন, শোয়েব জান, কৃষ্ট রাজবংশী প্রমুখ। এদের সাথে দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন দেশ টিভির সাংবাদিক ও শিল্পী দীপক চন্দ্র পালসহ আরো অনেকে।

একসময় গোকুল শিল্পকলা একাডেমির জমি হাজী মোন্নাফ হোসেন দখল করে নিয়ে যান। তখন অ্যাড. আবুল কাসেম রতন ও শোয়েব জান অনেক চেষ্টা করে এই শিল্পকলা একাডেমির জমি হাজী মোন্নাফের কাছ থেকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন। তারা দুইজন তখন থেকেই ক্লাবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

তখন ক্লাবের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন আবুল কাসেম রতন ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেন শোয়েব জান। তখন শোয়েব জানের নামে শিল্পকলা একাডেমির জমি দলিল করা হয়। এর ফলে একাডেমির জমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

কিন্তু সভাপতি আবুল কাসেম রতন আইন পেশায় চলে যান এবং শোয়েব জান আমেরিকায় চলে যাওয়ায় গোকুল শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম স্থবির হওয়ার পথে। তখন আবার নতুন করে হাল ধরেন নতুনরা। শোয়েব জান তখন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

একাডেমির সাধারণ সম্পাদক শোয়েব জান প্রবাসে চলে যাওয়ার পর দেবেশ রায় মল্লিক, প্রনব রায় মল্লিক, প্রয়াত সুবীর রায় মল্লিক, এম জামানসহ আরো অনেক শিল্পী ও ব্যক্তিবর্গ।

বর্তমান দেশ টিভির সাংবাদিক দীপক চন্দ্র পাল বলেন, রতন উকিল ও শোয়েব জানের সময় থেকে পরবর্তী ২২ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি শুরু থেকেই রতন উকিল ও শোয়েব জানের নেতৃত্বে গোকুল শিল্পকলা একাডেমির অনেক দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

বর্তমানে কে রাখে কার খবর। আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেক কিছুই আজ হারাতে চলেছে। গোকুল সঙ্গীত একাডেমির বারান্দায় বসেছে বাচ্চাদের পোশাক বিক্রির দোকান। সবাই যেন দেখে না দেখার মতো করে চলে যাচ্ছে। মানুষ আজ যন্ত্রমানবে পরিনত হয়েছে। তাই কোনো কিছুর কদর আর নেই।

গোকুল শিল্পকলা একাডেমি বন্ধ হওয়ার আগ মূহুর্তে হাল ধরেছিলেন ধামরাই উপজেলা পূজা উৎযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নন্দ গোপাল সেন, জেহের আলী, লক্ষী সূত্র ধর প্রমুখ।

ভোর হতেই সঙ্গীত একাডেমিতে দূর-দূরান্ত থেকে শিল্পীরা আসতো। সুরগোলে মেতে উঠতো কায়েত পাড়া মহল্লা। প্রতিদিন ভোর হতেই যেন নবযৌবন ফিরে আসতো।

তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গোকুল শিল্পকলা একাডেমিতে একটি হারমনিয়াম উপহার দিয়েছিলেন সাবেক মেয়র দেওয়ান নাজিম উদ্দীন মন্জু। তখন এর খ্যাতি শুধু ধামরাইতে নয়, তার প্বার্শবর্তী এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ে।

প্রায় ১৫ আগ থেকে বিখ্যাত গোকুল শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম প্রায় বিলুপ্তীর পথে। সুবীর রায় মল্লিক প্রয়াত হওয়ার আগ মূহুর্ত পর্যন্ত কোনোরকমে একাডেমির তালা খোলা হতো। তার মৃত্যুর পর পুরোপুরি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

স্থানীয়রা জানান, গোকুল শিল্পকলা সঙ্গীত একাডেমির সেই জৌলুশ ফিরিয়ে পেতে সরকারের সহযোগিতা দরকার। তাহলে আবার গোকুল শিল্পকলা সঙ্গীত একাডেমির সুনাম অর্জন করতে পারবে। কারণ সঠিক পরিচর্যা ও দেখভাল করার কেউ না থাকায় আজ সঙ্গীত একাডেমির এই বেহাল অবস্থা।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত