ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

সমাজ সেবায় অবদান রাখছেন ভূমিহীন রেখা!

  নড়াইল প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৫:৩৩

সমাজ সেবায় অবদান রাখছেন ভূমিহীন রেখা!
মোছা. রেখা পারভীন

নড়াইলে নারী ও শিশু নির্যাতন, গ্রাম্য কোন্দল, বাল্যবিবাহ বন্ধসহ বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বিভিন্ন পদক পেলেও নিজের পরিবারের জন্য কিছুই করতে পারিনি। নড়াইল পৌরসভার কুড়িগ্রামে একটি জীর্ণ ঘরে ভাড়া থাকি। আমার ছেলে প্রাইভেট টিউশনি করে নিজের খরচ যোগাড় করে লেখা পড়া চালিয়ে যাচ্ছে। আমি একজন ভূমি ও গৃহহীন নারী। এতক্ষণ বলছিলাম ২০২১ সালে ‘প্রেসিডেন্ট গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (সেবা)’ পদক প্রাপ্ত রেখা পারভীনের কথা।

সম্প্রতি বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪১তম জাতীয় সমাবেশ অনুষ্ঠানে এ বাহিনীর সদস্য রেখা পারভীনকে ‘প্রেসিডেন্ট গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (সেবা) পদক’ প্রদান করা হয়। রেখা পারভীন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী নড়াইল জেলা কার্যালয়ের অধীনে কর্মরত।

জানাগেছে, নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ইউনিয়নের ঝিকরা গ্রামের শেখ আশরাফুল ইসলামের স্ত্রী মোছা. রেখা পারভীন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য হিসেবে নড়াইল জেলা কার্যালয়ের অধীনে কর্মরত।

২০১১ সালে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন থেকে পেয়েছেন ‘মানুষের জন্য মানবাধিকার’ পদক। এছাড়া ১০১৬ সালে বেসরকারি সংস্থা বাঁচতে শেখা থেকে পেয়েছেন ‘সেরা ভলান্টিয়ার মোটিভেটর’ পদক। ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ কার্যক্রমের আওতায় নড়াইল সদর উপজেলার ‘শ্রেষ্ঠ জয়িতা’ হিসেবে অর্জন করেছেন সম্মাননা পদক ও সম্মাননা পত্র।

কর্মক্ষেত্রে তিনি অসহায় নির্যাতিত নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৯ সালে ব্রিটিশ কাউন্সিল আয়োজিত’ ওমেন এন্টারপ্রেনারশিপ ইভেন্ট’ এ অংশগ্রহণ করে পেয়েছেন সম্মাননা পদক। ২০১৯ সালে বেসরকারি সংস্থা বাঁচতে শেখা থেকে আন্তর্জাতিক ভলান্টিয়ার্স দিবস উপলক্ষে পেয়েছেন ‘ভলান্টিয়ার’ পদক এবং সর্বশেষ ২০২১ সালে পেয়েছেন ‘প্রেসিডেন্ট গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (সেবা)’ পদকসহ ৫০ হাজার টাকার চেক।

এসব পদক প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় রেখা পারভীন জানান, ভদ্রবিলা নারী ও শিশু অধিকার সংস্থা, সূর্যের আলো সমাজ উন্নয়ন সমিতির সভানেত্রী হিসেবে আমার উদ্দেশ্য একটাই, আর তা হলো আমাদের সমাজে কোনো নারী ও শিশু নির্যাতন থাকবে না। সমাজে সবাই যেন সুস্থভাবে বসবাস করে বেঁচে থাকে। আমি বিত্তবানদের সহায়তায় আর্থিকভাবে অসচ্ছল কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পড়াশুনা চালিয়ে যাবার জন্য সহায়তা করেছি। এছাড়া বাঁচতে শেখা’র কাছ থেকে ৫ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা পাইয়ে দিয়ে পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। আমি যৌতুকের জন্য পারুল, নিলুফা ও রত্না শিকদার হত্যা মামলার আসামিদের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে সফল হয়েছি।

রেখা পারভীন আরো বলেন, সমাজে যেসব নারী পাচারকারী আছে, তাদের বিরুদ্ধে কাজ করে আইনের মাধ্যমে বেশ কয়েকজন নারীকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। সমাজের অনেক তালাকপ্রাপ্ত মহিলাদের দেনমোহরের ন্যায্য টাকা সালিশের মাধ্যমে আদায় করে দিয়েছি। এতকিছুর পাশাপাশি প্রশাসনের সহযোগিতায় অনেকগুলো বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে পেরেছি এবং বাল্যবিবাহ বন্ধ করার জন্য অভিভাবকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করেছি এবং এ কাজ অব্যাহত আছে।

তিনি দুঃখ করে বলেন, সমাজের এসব অনাচার, অবিচার, বাল্যবিবাহ বন্ধ করার কাজ করতে গিয়ে আমার জীবন হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। আমাকে অনেক রকম নির্যাতন করা হয়েছে। কিন্তু আমি ওসবে ভীত হয়ে দমে যাইনি।

‘প্রেসিডেন্ট গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (সেবা) পদক’ প্রাপ্তির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে রেখা পারভীন বলেন, বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে অনেক শিশুকে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়তে দেখে অভিভাবকদের বুঝিয়ে আবার তাদের স্কুলে পাঠাতে সক্ষম হয়েছি। প্রকৃত হতদরিদ্র অসহায় বিধবা মহিলাদের বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পেতে সহায়তা করেছি। এ ছাড়া অসহায় গরীব রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে সুচিকিৎসার জন্য সহায়তা করেছি। তাই ‘প্রেসিডেন্ট গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (সেবা) পদক’ প্রাপ্তিতে আমি এসব কাজে আরো উৎসাহিত হয়েছি। আমি আমরণ সমাজের অসহায় অবহেলিতসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজ করে যাব।

রেখা পারভীন আবেগতাড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি নড়াইল পৌরসভার কুড়িগ্রামে একটি জীর্ণ কুটিরে ভাড়া থাকি। আমার ছেলে প্রাইভেট টিউশনি করে নিজের খরচ যোগাড় করে লেখা পড়া চালিয়ে যাচ্ছে। আমি একজন ভূমি ও গৃহহীন নারী। ‘প্রেসিডেন্ট গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (সেবা) পদক’ প্রাপ্তির জন্য আমি মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রীসহ আমার বিভাগের সকল কর্মকর্তাদের নিকট ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ। আমি সকলকে ধন্যবাদ জানাই। সেইসাথে আমাকে ভূমি ও গৃহহীন নারী হিসাবে মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী, আমার বিভাগসহ স্থানীয় প্রশাসনের নিকট আমাকে ভূমি ও গৃহ প্রদানের জন্য বিনীতভাবে আবেদন জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত