ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

পিপলস লিজিং নিয়ে হাইকোর্ট

টাকা ফেরত দিন, নইলে কারাগার

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৯:২৮  
আপডেট :
 ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৯:৩৪

টাকা ফেরত দিন, নইলে কারাগার
প্রতীকী ছবি

অবসায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড-পিএলএফএসএলের খেলাপি ঋণের টাকা ফেরত ‘দিতেই হবে’বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে হাই কোর্ট। ‘কোনো মন্ত্রী বা কারো প্রভাবে’ এখানে কোনো কাজ হবে না এবং আইনের মধ্যে থেকেই কাজ করতে হবে বলে ঋণ খেলাপিদের সতর্ক করে দিয়েছে আদালত।

কত টাকা কবে কীভাবে দেওয়া হবে, সে আলোচনায় যাওয়ার আগে প্রথমে কিছু টাকা (কিস্তি অনুযায়ী) দিয়ে আসতে বলা হয়েছে খেলাপিদের। নইলে কোনো ঋণ খেলাপির কোনো আরজি গ্রহণ করা হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার।

বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ধাপে পিএলএফএসএল-এর ঋণ খেলাপি কয়েকজনের বক্তব্য শোনার এক পর্যায়ে খেলাপিদের উদ্দেশ্যে এই নির্দেশনা দেন তিনি।

পিএলএফএসএল থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছেন, এমন ২৮০ জন ঋণ গ্রহীতাকে গত ২১ জানুয়ারি তলব করে হাই কোর্ট।

ঋণ খেলাপিদের উদ্দেশ্য করে বিচারক বলেন, এই যে লোকগুলো (ঋণ খেলাপিরা) এতগুলো টাকা নিয়ে বসে আছেন, তাদের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে কিছু টাকা দেওয়া। এরপর কে কত টাকা কবে কীভাবে দেবেন, সে ব্যাপারে আলোচনা করবেন।

অবসায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা পিএলএফএসএল’র সাময়িক অবাসায়ক (প্রবেশনাল লিক্যুডেটর) মো. আসাদুজ্জামান খানের দেওয়া তালিকা দেখার পর ওই আদেশ দিয়েছিল উচ্চ আদালত।

তলবের পাশাপাশি সেদিন আদালত ওই ২৮০ জনকে সশরীরে হাজির হয়ে খেলাপি ঋণের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তার জবাব চায়।

সেদিনের আদেশে আদালত ২৮০ জনকে দুই ভাগে হাজির হতে দিন নির্ধারণ করে দিয়েছিল। গত মঙ্গলবার ১৪৩ জনের মধ্যে ৫১ জন ঋণ খেলাপি হাজির হয়ে তাদের ব্যাখ্যা দেন। আর বৃহস্পতিবার ১৩৭ জনের মধ্যে ৪৫ ঋণ খেলাপি হাজির হয়ে ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন।

‘বিচারক বলেন, যারা টাকা জমা রেখেছে, তারা না খেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। পরের তারিখের (আগামী ৯ মার্চ) আগেই প্রথম কিস্তি দেবেন, নইলে ভেতরে ঢুকিয়ে দেব। পিপলস লিজিংয়ের টাকা চোর বাটপারদের টাকা না, জনগণের টাকা।’

একজন খেলাপি আদালতে বলেন, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে আদালতের আদেশে অ্যাকাউন্ট অচল (ফ্রিজ) হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করে আসছিলেন।

তখন কিস্তি পরিশোধের পথও বাতলে দেন বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার।

তিনি বলেন, অ্যাকাউন্ট থেকে পেমেন্ট দিতে তো বাধা নেই। আমি এখনই অর্ডার দিয়ে দিচ্ছি। আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে পেমেন্ট দিতে কোনো বাধা থাকবে না। কিন্তু ব্যক্তিগত খরচের জন্য টাকা তুলতে পারবেন না। বাংলাদেশ ব্যাংককেও এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, যারা টাকা পেমেন্ট করতে চায় তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে যাতে টাকা পেমেন্ট দেওয়া যায়।

আরেক খেলাপিকে উদ্দেশ্য করে বিচারক বলেন, ‘টাকা না দিয়ে কোনো মন্ত্রী বা কারো প্রভাবে কাজ হবে না। আইনের মধ্যে থেকেই টাকা দিতে হবে। কোর্ট যেহেতু ডেকেছে, প্রথম একটা ইন্সটলমেন্ট দেন, তারপর বাকি আলোচনা করে নেবেন বোর্ড বা কমিটির সঙ্গে। কোম্পানি বাঁচিয়ে রাখতে হলে আপনারা টাকা না দিলে কীভাবে হবে।’

১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিপলস লিজিংকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে গ্রাহকে মেয়াদি আমানত এবং বিভিন্ন ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার করে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল ওই কোম্পানি।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে কোম্পানির আমানত ছিল ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। আর ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা, এর মধ্যে খেলাপিই ৭৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের হার ৬৬ শতাংশ।

২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে লোকসান দেয় ওই কোম্পানি। খেলাপি প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায় করতে না পারায় আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দিতে পারেনি তারা।

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নের জন্য আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিনই মামলার শুনানি শেষে অবসায়নের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয় আদালত।

এছাড়া অবসায়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক পদমর্যাদার একজনকে অবসায়ক নিয়োগ দিতে বলা হয়।

পরে সাময়িক অবসায়ক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান খানকে নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এরপর আদালত পিপলস লিজিংয়ের ঋণ গ্রহীতাদের একটা তালিকা চায় সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিক্যুডেটর) মো. আসাদুজ্জামান খানের কাছে।

নির্দেশ অনুযায়ী গত বছর ২৩ নভেম্বর প্রায় ৫০০ জন ঋণ গ্রহীতার একটি তালিকা দাখিল করা হয়। সে তালিকা দেখার পর গত ২১ জানুয়ারি আদালত ২৮০ জনকে তলব করে।

অবসায়ক আসাদুজ্জামানের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ২৮০ জন ঋণ খেলাপি লিজ ফাইন্যান্স (পাঁচ বছর মেয়াদি ঋণ), লিজ ফাইন্যান্স (পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদের ঋণ), টার্ম লোন (পাঁচ বছর মেয়াদি ঋণ), টার্ম লোন (পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদের ঋণ), হোম লোন (পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদের ঋণ) ও মার্জিন লোনসহ মোট ছয় ধরনের ঋণ নিয়েছেন।

তার মধ্যে লিজ ফাইন্যান্সে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৪ কোটি ১৫ লাখ ৮ হাজার ৪৭১ টাকা। লিজ ফাইন্যান্সে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৭ কোটি ৮১ লাখ ৯৬ হাজার ২৮৮ টাকা।

টার্ম লোনের (পাঁচ বছর মেয়াদি ঋণ) খেলাপি ৮৭৭ কোটি ৩৭ লাখ ৬৬ হাজার ৩৭১ টাকা, টার্ম লোনের (পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদের ঋণ) খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৩ কোটি ৩০ লাখ ৫ হাজার ৭৭৬ টাকা।

হোম লোনের (পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদের ঋণ) খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৭ কোটি ৯৬ লাখ ২৮ হাজার ১৪৩ টাকা। আর মার্জিন লোনে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৪৪ কোটি ৮৭ লাখ ৫৮ হাজার ১৩ টাকা।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত