ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

উত্তাল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২৩:৪২  
আপডেট :
 ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০১:৪২

উত্তাল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান
পরীক্ষা স্থগিতের পর রাজধানীতে বিক্ষোভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। ছবি: হৃদয় আলম

পরীক্ষার দাবিতে উত্তাল দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরে দিনব্যাপী চলেছে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ঢাকার শাহবাগে আন্দোলনের সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। পরে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীর উপর পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া দেশের জেলায় জেলায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও পুলিশের প্রত্যাহার হওয়ার মত ঘটনাও ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

গত সোমবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ২৪ মে থেকে দেশের পাবলিক, প্রাইভেট এবং বিশেষায়িত সব ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৭ মে থেকে আবাসিক হল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। শিক্ষামন্ত্রীর এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ও পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে সাত কলেজ আন্দোলন করে তাদের দাবি আদায় করেছে। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার দাবিতে দেশ জুড়ে আন্দোলনে নেমেছে। এছাড়াও আন্দোলন করেছে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা বলেন, সরকার দাবি মেনে না নিলে এ আন্দোলন সারাদেশে শুরু হবে।

পুলিশের বাঁধার মুখে স্থগিতকৃত পরীক্ষা গ্রহণের দাবিতে করা আন্দোলন রোববার পর্যন্ত স্থগিত করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার শাহবাগে পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে কয়েকদফায় পুলিশের বাঁধা পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে স্থগিতের ঘোষণা দেয় তারা।

এদিকে, কর্মসূচি শুরুর আগে ও আন্দোলন চলাকালে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। আগামী রোববারের মধ্যে এসব শিক্ষার্থীর মুক্তি ও পরীক্ষার স্থগিতাদেশ বাতিল না করলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ, শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মামুন অর রশীদ বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ওই শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ক্ষতিকর বা আপত্তিকর কিছু না পাওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

গত সোমবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে অংশ নিতে বৃহস্পতিবার শাহবাগে এসে জড়ো হতে থাকে। কিন্তু কর্মসূচির শুরুর আগেই ১০ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে শতাধিক শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে আন্দোলন করতে চাইলে জাতীয় গ্রন্থাগারের সামনে তাদের আটকে দেওয়া হয়।

বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়, করোনা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যেসব পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে সেসব পরীক্ষা নেয়া হবে। সংশোধিত সময়সূচি অতিসত্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশ করা হবে। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে অংশ নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা

পরীক্ষার দাবিতে সড়ক অবরোধ করা রাজধানীর গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করেন। পরে দুপুর ১২টায় শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিপেটা করে সড়ক থেকে উঠিয়ে দেয় পুলিশ। শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছেন। সর্বশেষ বিকেল পাঁচটায়ও এ বিক্ষোভ চলছিল। কলেজটির সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় পুলিশ তাঁদের লাঠিপেটা করে। এ সময় পুলিশদের একটি অংশ তাঁদের মেরে রাস্তা থেকে উঠিয়ে দেয়। তাঁদের সঙ্গে কোনো প্রকার কথা না বলেই হামলা করেছে পুলিশ।

শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে অধ্যক্ষ ইসমাত রুমিনা বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গে কথা না বলেই আন্দোলন শুরু করে। তারা চাইছে শিক্ষামন্ত্রীর পক্ষ থেকে দিকনির্দেশনা আসুক। আমরা অভিযোগগুলো লিখিত আকারে দিতে বলেছি।’

তবে লালবাগ থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক ফিরোজের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি লাঠিপেটার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরীক্ষাসহ তিন মাসের সব পরীক্ষা স্থগিত করায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা এই বিক্ষোভ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান জানান, মহামারির সময়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বার্থে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিভিন্ন পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। আগামী রোববার থেকে স্থগিতাদেশ কার্যকর হবে।

এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে পরীক্ষার দাবিতে শ্লোগান দিতে থাকেন।

এ সময় অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী দেওয়ান তাহমিদ বলেন, তেহাত্তরের অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। সেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কী বলেছে তা দেখার চেয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের বিষয়গুলো বিবেচনা করে অবিলম্বে চলমান পরীক্ষায় স্থগিতাদেশ বাতিল করতে হবে।

বিক্ষোভ চলেছে জেলায় জেলায়

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টার দিকে কলেজ গেট এলাকায় মাদারীপুর-শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়কে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে এই কর্মসূচি পালন করেন। এতে মহাসড়কের দুই পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে সদর মডেল থানা-পুলিশ ও জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা এক ঘণ্টা চেষ্টা করে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।

নেত্রকোনায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বের করা মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। এতে সাংবাদিকসহ অন্তত সাত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নেত্রকোনা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাদেকুল ও কনস্টেবল ফারুককে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

স্থগিত পরীক্ষাগুলো দ্রুত নেয়ার দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। হল কিংবা ক্লাসের কার্যক্রম চালু না হলেও পরীক্ষা নেয়ার ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা।

এছাড়াও পরীক্ষার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন করছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি), সিলেটেও আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা।

যা বললেন শিক্ষামন্ত্রী

এসব ঘটনায় একটি মহল শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে চাইছে বলে মনে করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গতকাল শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে একটি মহল শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে চাইছে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার কারণে হলগুলোর সংস্কারকাজ এবং শিক্ষার্থীর সুরক্ষার কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার জন্য সময় নেওয়া হয়েছে। এসময় শিক্ষার্থীদের সরকারের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে/একে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত