ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

রাষ্ট্রীয় বীর নজরুল ইসলামের খোঁজ রাখেনি কেউ

  আসাদুজ্জামান সাজু ও আকরব হোসেন

প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২১, ১৫:৫০  
আপডেট :
 ০২ মার্চ ২০২১, ১৫:৫৯

রাষ্ট্রীয় বীর নজরুল ইসলামের খোঁজ রাখেনি কেউ

বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম। ছাত্রাবস্থায় সহপাঠীদের নিয়ে রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমান রুয়েট) ১৯৭১ এর ৩ মার্চ বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন তিনি। ওই সময় রাজাকারেরা তার মাথার বিনিময়মূল্য নির্ধারণ করেছিল ১ লাখ টাকা।

যুদ্ধ চলাকালীন সময় বৃহত্তর রংপুরকে নিয়ে ভারতের শীতলকুচিতে অবস্থিত নর্থ জোনের যুব প্রশিক্ষণের প্রধান ছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় লালমনিরহাটের সাথে বুড়িমারী স্থলবন্দরের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের লক্ষ্যে কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ভাকারি সেতু উড়িয়ে দেয়া সেই দুঃসাহসিক অভিযানের নায়ক ছিলেন তিনি।

৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে যার ভূমিকা বীরত্বে গাঁথা, স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও সেই নজরুল ইসলামের খোঁজ রাখেনি কেউ। নিজ বাড়িতে দিন পার করছেন এই ‘রাষ্ট্রীয় বীর’।

১৯৪৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি গ্রামে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন নজরুল ইসলাম। তার বাবা নুরুল ইসলাম ও মা মতিয়ন নেছা।

নজরুল ইসলামের ৭১ এর যুদ্ধকালীন ডায়েরি থেকে জানা যায়, ২৪ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আবার পিছেয়ে যায়, ২৫ মার্চ তিনি তার ডায়েরিতে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি ২৪ মার্চ থেকে তার ডায়েরিতে পাকিস্তানের স্থলে ‘বাংলাদেশ’ লেখা শুরু করেন। ৩১ মার্চ বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য তিনি বিভিন্ন অস্ত্র সংগ্রহ করার চেষ্টা করেন।

আক্ষেপের সুরে প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, কে বা আর এখন স্মরণ রাখে আমার কথা। এখন স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের মতো মহান দিনগুলোর রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে আমাকে কেউ ডাকেন না। যদিও ডাকে তাও স্থানীয় শিশু নিকেতনের অধ্যক্ষ হিসেবে। তাই আমি নিজের মতো করে শহীদ মিনারে যাই এবং ঘরে ফিরে এসে স্মরণ করি সেই দিনগুলো।

নানা জটিলতার কারণে যুদ্ধকালীন তার সহযোগিদের অনেকেই এখনও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পাওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ। রাষ্ট্রের কাছে তার দাবি, জীবনের শেষ ক্ষণে সকল সহযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেখতে চান তিনি।

হাতীবান্ধা উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফজলুল হক বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য উৎসাহিত করার পাশাপাশি ভারতের শীতলকুচিতে নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি পাকিস্থানি পতাকা পুড়িয়ে হাতীবান্ধার ডাকাবাংলা মাঠে প্রথম বাংলার পতাকা উড়িয়েছিলেন। এছাড়াও যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানী সেনাদের প্রবেশে বাধা দিতে তার নেতৃত্বে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেলপথের অন্যতম ভাকারি সেতুটি উড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে তার এই অনন্য অবদান দেশ ও জাতি কখনই ভুলবে না।

১৯৭ সাল। নজরুল ইসলাম রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শেষ বর্ষের ছাত্র। সেসময় স্বাধীনতাকামী ছাত্র-জনতার রক্ত টকবগ করছিল স্বাধীনতার নেশায়। নজরুল ইসলাম সহপাঠীদের নিয়ে রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৩ মার্চ বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর শতাধিক ছাত্রের মিছিল নিয়ে ঢুকে পড়েন রাজশাহী শহরে। সেই মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ। গুলি এসে লাগে তার পাশে থাকা দেয়ালে, এ সময় দেয়ালের একটি ইটের টুকরা তার পায়ে লেগে আহত হন এবং অল্পের জন্য রক্ষা পান তিনি।

ওই মিছিলে পুলিশের গুলিতে কয়েকজন নিহত হয়েছিল। বন্ধ ঘোষণা করা হয় কলেজ। ৫ মার্চ বাধ্য হয়ে ফিরে আসেন নিজ বাড়ি হাতিবান্ধায়। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের একদিন পর ৮ মার্চ রেডিওতে বেলা ১২টার দিকে সেটি শুনতে পান নজরুল ইসলাম। সেই ভাষণ শোনার পর ৯ মার্চ হাতীবান্ধা ডাকবাংলো মাঠে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন হয় তার নেতৃত্বে। ১০ মার্চ হাতীবান্ধা সংগ্রাম পরিষদের সেক্রেটারি হয়ে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নিতে স্থানীয় ছাত্র যুবকদের উৎসাহিত করেন নজরুল ইসলাম।

১৯৭১ এর ২৭ মার্চ বৃহত্তর রংপুরের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে নজরুল ইসলাম পার্শ্ববর্তী ভারতের কোচবিহার জেলার শীতলকুচিতে প্রবেশ করে জনসংযোগ শুরু করেন। ভারতের সহায়তায় হাতীবান্ধার স্থানীয় যুবক আর আনসারদের নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু করেন তিনি। এরপর সেই নর্থ জোনে আসতে শুরু করে রংপুর-দিনাজপুরের লাখো শরণার্থী।

নর্থ জোনের চেয়ারম্যান হন তৎকালীন পীরগঞ্জ-মিঠাপুকুর এলাকার এমএনএ ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজন মতিউর রহমান। তিনিই নজরুল ইসলামকে সনদ দেন নর্থ জোনের ইনচার্জ হিসেবে। ওই সময় এ দেশীয় রাজাকারেরা তার মাথার বিনিময় মূল্য নির্ধারণ করেছিল ১ লাখ টাকা। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয় তার গ্রামের বাড়ি।

২৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে প্রেরিত নর্থ জোনের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান স্বাক্ষরিত ওই সনদে বলা হয়েছে, যুদ্ধকালীন সময়ে ভারতের কোচবিহার জেলার শীতলকুচিতে অবস্থিত ইয়ুথ ক্যাম্পে এক হাজার ছয়শ’ মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেছেন নজরুল ইসলাম। নর্থ জোনের চেয়ারম্যান তাকে সেখানকার ইনচার্জ হিসেবে সনদে উল্লেখ করে তার মঙ্গল কামনা করেন।

তখনকার টগবগে যুবক নজরুল ইসলাম শুধু মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবেই কাজ করেননি, তার স্বাক্ষরিত কাগজের মাধ্যমে ভারতে প্রায় ১ লাখ শরণার্থীর থাকার জায়গাসহ রেশনের ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। এমনকি দেশ ও মাতৃভূমির স্বাধীনতার স্বপ্ন নিয়ে বিস্ফোরণ বিষয়ে মাত্র দুই ঘণ্টা প্রশিক্ষণ নিয়েই রণাঙ্গনে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন এবং লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেলপথের ভাকারী ব্রিজ উড়িয়ে দেয়ার অভিযানে ১৮ সদস্যের মুক্তিযোদ্ধা টিমের নেতৃত্ব দেন নজরুল ইসলাম।

সেদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ৭৩ বছর বয়সী ইঞ্জিনিয়ার নজরুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ৬ নং সেক্টরের অধীন যুদ্ধ হয় এখানে। ১৯৭১ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি সময় শীতলকুচি ইয়ুথ ক্যাম্প থেকে ভারতীয় ফুলবাড়ি ক্যাম্পে হঠাৎ ডাক পড়ে তার। সেখানে ইপিআর ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ২৪ জনের দুটি দল গঠন করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল পাক সেনাদের অবাধ প্রবেশে বাধা দিতে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা সংলাগ্ন ভোটমারী এলাকায় ও হাতীবান্ধার বড়খাতা এলাকায় রেলপথের প্রধান দুটি ব্রিজ উড়িয়ে দেয়া।

অপারশেনের সময় নির্ধারণ করা হয় রাত ২টা। ফুলবাড়ি ক্যাম্প থেকে ছয় সদস্যের একটি দল রওনা হয় বড়খাতা অভিমুখে। আর ১৮ সদস্যের দলটির সাথে তিনি রওনা হন ভোটমারীর দিকে। মাথার উপর টিপটিপ বৃষ্টি নিয়ে চলা তার দলটি হাতীবান্ধার কারবালার দিঘী নামক এলাকায় এসে হতাশ হয়ে পড়ে। এর কারণ হিসেবে তিনি জানান, ভোটমারীর সেই ভাকারি নামক বড় রেল ব্রিজের অদূরে কালীগঞ্জ উপজেলায় ক্যাম্প ছিল পাক সেনাদের। ১৮ সদস্যের দলটি অপারেশন পরিচালনা না করেই ফুলবাড়িতে ফিরে যান বৃহস্পতিবার ভোরবেলা।

এই অবস্থায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্ণেল সিং ও বিএসএফের ক্যাপ্টেন মৈত্র নামিকে সহযোদ্ধাদের মনোবল হারানোর কারণ উল্লেখ করে তিনি নতুনভাবে অপারেশনে যাওয়ার প্রস্তুতির নির্দেশ চান। তার কথামতো পরদিন শুক্রবার দিবালোকেই ফের অপারেশনে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।

এবার ১৮ সদস্যের ওই টিমের নেতৃত্ব দেয়া হয় ইঞ্জিনিয়ার নজরুল ইসলামকে। নেতৃত্ব কাধে নিয়ে তিনি দলের সাথে থাকা বিস্ফোরক দ্রব্য ও অস্ত্র দু’টি মহিষের গাড়িতে করে পাঠান ঘটনাস্থলে। আর দলের সদস্যরা সবাই দু’জন করে বিভক্ত হয়ে সেখানে উপস্থিত হন। এরপর তার নির্দেশে দ্রুত সেই রেলব্রিজে ডিনামাইট সেট করা হয়। শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে হয়েছে মাত্র। আর তখনই বিকট শব্দে উড়ে যায় ভোটমারীর ভাকারি রেলব্রিজ। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রেলপথ।

নজরুল ইসলাম জানান, ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই পাকিস্তান রেডিও নানা অপপ্রচার শুরু করেছিল। তাই তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল চাঙ্গা করতে মুক্তিযুদ্ধের সফলতা প্রচারে এলাকায় এলাকায় ‘সংবাদ বুলেটিন’ নামে লিফলেট বিতরণ করেছিলেন। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ স্বাধীনতা যুদ্ধের সফলতাকামী মানুষজন অনুপ্রেরণা খুঁজে পায় সেই সংবাদ বুলেটিনের মাধ্যমে। যুদ্ধকালীন সময় যে খরচ হয়েছে, তার অধিকাংশ অর্থ তিনি যোগার করেছেন হাতীবান্ধা উপজেলার দইখাওয়া হাট থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সহযোগিতায়।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের শুরু থেকে ধীরে ধীরে হানাদারমুক্ত হয় লালমনিরহাট জেলা। মুক্তিযোদ্ধাদের একের পর এক অপারেশনে পালাতে শুরু করে পাকিস্তানি আর্মি। সেইসঙ্গে ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।

এরপর স্বাধীন বাংলাদেশের গণর্পূত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন নর্থ বেঙ্গল জোনের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান।

স্বাধীন বাংলাদেশের গণর্পূত মন্ত্রী মতিউর রহমান সম্পর্কে বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বলেন, মতিউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমানের অত্যস্ত ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। তার জানামতে, সেই সুবাদে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিয়েও মতিউর রহমান তার এলাকার ছেলে ড. ওয়াজেদের সাথে দিয়েছিলেন।

যুদ্ধ শেষে নর্থ জোনের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান স্বাধীন বাংলার মন্ত্রী হওয়ায় তিনি নজরুল ইসলামকে হাতীবান্ধার অবহেলিত জনপদের জন্য ব্যাংক, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে শুরু করে বিদ্যালয় নির্মাণসহ অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করেন। মাঝেমধ্যে নজরুল ইসলামকে বঙ্গবন্ধু সাথে দেখা ও কথা বলারও সুযোগও করে দিয়েছিলেন তিনি। এমন অসংখ্য স্মৃতি আজ মনে পড়ে মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার নজরুল ইসলামের।

সেই সময় পড়াশোনা শেষ করে কিছুদিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে সরকারি চাকরিও করেন নজরুল ইসলাম। পরে জনগণের চাপে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন। বর্তমানে তিনি হাতীবান্ধা শিশু নিকেতনের অধ্যক্ষ।

স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরু থেকে নজরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন এবং তিনি হাতীবান্ধা আওয়ামী লীগের প্রথম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে তা ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত পালন করেন। ৭৭ এর পরে ১৯৮৬ পর্যন্ত সভাপতিরও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এছাড়া তিনি ছিলেন তৎকালীন রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক। আর ২০১৩ সাল পর্যন্ত লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু এখন আর দলে ডাক পড়ে না তার।

দীর্ঘদিন পর হলেও যুদ্ধপরাধীদের বিচার হওয়ায় বেশ খুশি নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ এই চার মূলনীতি নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম। এই চার মূলনীতি আজও সফল হয়নি। এই চার মূলনীতি যতদিন না বাস্তবায়িত হবে, ততোদিন আমাদের দেশের মানুষ প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ হতে বঞ্চিত থাকবে।

নজরুল ইসলাম বলেন, অনৈক্যই আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা। জাতি হিসেবে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পাকিন্তানের শোষণ ও দুর্নীতি থাকে মুক্ত হতেই আমরা আমাদের দেশকে স্বাধীন করেছি। লাখ লাখ শহীদের রক্ত ও হাজার হাজার মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাওয়া বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান উত্তরের জনপদের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম।

৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, অনেক দেরিতে হলেও ইউনেস্কো আন্তর্জাতিকভাবে এ ভাষণের স্বীকৃতি দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।

এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে রুয়েট) ৩য় ব্যাচের ছাত্র (রোল নং ৬৬০৪১) ছিলাম। চূড়ান্ত বর্ষ ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ আমরা সকল ছাত্র মিলে সকাল ৯টায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শহীদ মিনারে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করি। পতাকাটি বর্তমান বাংলাদেশের পতাকার মতো হুবহু একই রকম ছিল। অর্থাৎ লাল বৃত্তের মাঝে মানচিত্র ছিল না। পতাকা উত্তোলন বিষয়ে আকরাম, কাইয়ুমসহ (৩য় বর্ষ) আমরা কয়েকজন বেশি উৎসাহী হলেও সকল ছাত্রের তাতে সায় ছিল।

‘পতাকা উত্তোলন শেষে ইয়াহিয়া খানের কুশপুত্তলিকা সহকারে আমরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্ররা মিছিল করে রাজশাহী শহরে যাই। মাছের বাজার পৌঁছলে রাজশাহী মেডিকেলের ছাত্ররা আমাদের মিছিলে যোগ দেয়। স্বাধীন বাংলার পক্ষে এবং ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর বিপক্ষে স্লোগান দিতে দিতে শান্তিপূর্ণ মিছিলটা রহমানিয়া হোটেল পার হয়ে নিউমার্কেট যাওয়ার পথে ড্রেস কোং টেইলারের সামনে পৌঁছলে সামনের একতলা দালানের ছাদ থেকে খাকি পোশাকের পুলিশ অথবা আর্মি আমাদের মিছিলে সরাসরি গুলি চালায়। আমার পাশে থাকা সহপাঠী আব্দুর রউফ গুলি খেয়ে পড়ে যায়।’

তিনি বলেন, মিছিল ছত্রভঙ্গ হওয়ার পর এলএমজিসহ খোলা গাড়িতে পাক সেনারা টহল শুরু করে। আমরা ঘুরপথে রাজশাহী মেডিকেলে যাই। সেখানে আব্দুর রউফকে চিকিৎসার ব্যবস্থায় রেখে বস্তির ভেতর দিয়ে কলেজ হোস্টেলে পৌঁছাই। পরে রাজশাহীর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রাবাস খালি করার নির্দেশনা জারি করা হয়। পরদিন ছাত্ররা নিজ নিজ বাড়ি রওনা দেয়। সব মিলিলে ৩ মার্চকে রাজশাহীর পতাকা দিবস করা যেতে পারে।

রুয়েট উপাচার্য ড. মো. রফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, বিষয়টি নিয়ে সভায় আলোচনা হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত