ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

চিম্বুক পাহাড়ে হোটেল নির্মাণের প্রতিবাদ, শাহবাগে সমাবেশ

  ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২১, ১৭:২৯  
আপডেট :
 ০২ মার্চ ২০২১, ১৭:৩১

চিম্বুক পাহাড়ে হোটেল নির্মাণের প্রতিবাদ, শাহবাগে সমাবেশ
ছবি- নিজস্ব

বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে দর্শনার্থীদের জন্য পাঁচ তারকা হোটেল ও বিনোদন পার্ক নির্মাণের প্রতিবাদে রাজধানীতে সংহতি সমাবেশ করেছে চিম্বুক পাহাড়ে বসবাসরত ম্রো আদিবাসীদের সংগঠন ‘চিম্বুক পাহাড় স্রো ভূমি রক্ষা আন্দোলন’।

মঙ্গলবার শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ সমাবেশ করেন তারা।

সমাবেশে ম্রো আদিবাসীদের সাথে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, এলআরডি, ব্লাস্ট, কাপেং ফাউন্ডেশন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা, বেলা, সিপিবি, বাসদ, জাসদ, জনউৎসব, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, ঐক্য ন্যাপ, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি, আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সামাজিক ছাত্র সংগঠন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, গানের দল মাদল, আদিবাসী যুব ফোরাম, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ প্রভৃতি সংগঠনসমূহ সংহতি জ্ঞাপন করেন। এতে প্রায় পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেয়।

চিম্বুক পাহাড়ে হোটেল নির্মাণের প্রতিবাদ

সমাবেশ থেকে পাঁচদফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলোর হলো-

১. ম্রো জনগােষ্ঠীর জীবন-জীবিকা, প্রাকৃতিক সম্পদে প্রথাগত অভিগম্যতা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও নিরাপত্তার দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে ম্রো অধ্যুষিত এলাকায় ম্যারিয়ট হােটেল ও বিনােদন পার্ক নামক প্রকল্পটি অবিলম্বে বাতিল করা।

২. পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক নিরাপত্তা বাহিনীকে যে ২০ একর জমি ইজারা প্রদান করা হয়েছে তা অবিলম্বে বাতিল করা।

৩. এ প্রকল্প থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সকল প্রকার সম্পৃক্ততা প্রত্যাহার করা।

৪. আন্দোলনরত জনগােষ্ঠীকে সেনাবাহিনীর নামে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও নানা ধরণের হুমকি দেয়ার অভিযােগ খতিয়ে দেখা ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

৫. পরিবেশ ও প্রতিবেশের প্রতি হুমকি সৃষ্টিকারী পর্যটনসহ উন্নয়নের নামে অবাধ ও পূর্বাবহিত সম্মতি ব্যতিরেকে অন্যান্য সকল প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অবিলম্বে বন্ধ করে অনুরূপ প্রক্রিয়ায় দখলকৃত সকল ভূমি থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করা।

প্রসঙ্গত, বান্দরবানের চিম্বুক-থানচি সড়কের পাশে ২০ একর জমিতে ‘ম্যারিয়ট-চন্দ্রপাহাড় রিসোর্ট অ্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক’ নামে এ পাঁচতারা রিসোর্ট নির্মাণ করছে সিকদার গ্রুপের আর অ্যান্ড আর হোল্ডিংস ও সেনা কল্যাণ সংস্থা।

সমাবেশে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা সংহতি জানিয়ে বলেন, ম্রোরা যখন তাদের আবাস ও আবাদভূমি জবরদস্তি বেদখলের বিরুদ্ধে ন্যায্য অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদমুখর হলেন, তখন প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে নানা রকম ভয়-ভীতি প্রদর্শনের প্রচুর অভিযােগ উঠেছে। তাছাড়া সাজানাে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হােটেল ও বিনােদন পার্ক স্থাপনে ম্রো জনগােষ্ঠীর সম্মতি আছে মর্মেও প্রচারণা চালানাে হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তিনি বলেন, আরাে উল্লেখ্য যে পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ১৯৮৯, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরােধ নিস্পত্তি কমিশন আইন ২০০১ এবং উপরোক্ত আইনসমূহের মাধ্যমে স্বীকৃত প্রথা, রীতি, রেওয়াজ ও পদ্ধতিকে লঙ্ঘন করে ম্রো জাতির স্বাধীন ও পূর্বাবহিত সম্মতি ব্যতিরেকে পাঁচতারকা হােটেল নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস বলেন, আমাদের কেবল ধর্মনিরপেক্ষ হলেই চলবে না, জাতি নিরপেক্ষ হতে হবে, রাষ্ট্রনিরপেক্ষ হতে হবে। বাংলাদেশ যে একটা বহুজাতিক, বহু ধর্মের, বহু ভাষার এবং বহু বৈচিত্রের সংস্কৃতপূর্ণ রাষ্ট্র, সেটি আমাদের ধারণ করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় এভাবে জমি ইজারা নেয়ার বিষয়টি একেবারেই অবৈধ মন্তব্য করে এর প্রতিবাদ জানান তিনি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি সভাপতি গৌতম দেওয়ানের সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং'র সঞ্চালনায় সমাবেশে সংহতি জানিয়ে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নাট্যকার মামুনুর রশীদ, সাবেক সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, ঐক্য ন্যাপ এর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ ভূঁইয়া, বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান প্রমুখ।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত