জামিন পেলেন কারাগারে ‘নির্যাতিত’ বন্দি রুপম
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২১, ১৮:০৩
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্যাতিত রুপম কান্তি দেবনাথের (৪৫) জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালত তাকে জামিন দেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী সুমন জানান, আদালতে রুপম কান্তির জন্য দুটি পিটিশন দিয়েছিলাম। আদালত শুনানি শেষে ১০ হাজার টাকা বন্ডে জামিন মঞ্জুর করেছেন।
এর আগে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রূপম কান্তি নাথ নামে এক বন্দিকে নির্যাতন করে আহত করার অভিযোগে সোমবার (১ মার্চ) আদালতে জেল সুপারসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন রুপমের স্ত্রী ঝর্ণা রানী দেবনাথ।
নির্যাতনের শিকার রুপম কান্তি নাথ বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কারা কর্তৃপক্ষের অধীনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
রুপমের স্ত্রীর করা মামলায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার শফিকুল ইসলাম, জেলার রফিকুল ইসলাম, সহকারী সার্জন ও ভুক্তভোগীর ব্যবসায়িক অংশীদার রতন ভট্টাচার্যকে আসামি করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হেফাজত মৃত্যু নিবারণ আইন ২০১৩ এর (১ ও ২) এবং ক, খ, গ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
এরপর মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম হোসাইন মোহাম্মদ রেজার আদালত অভিযোগটি ফেরত দিয়ে সেটি জজ আদালতে দাখিলের পরামর্শ দেন।
আদেশে বিচারক হোসাইন মোহাম্মদ রেজা উল্লেখ করেছেন, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী কোনো আদালতের সামনে কোনো ব্যক্তি যদি অভিযোগ করেন যে, তাকে নির্যাতন করা হয়েছে তাহলে উক্ত আইনের ধারা ৪ ও ধারা ৪ প্রযোজ্য হবে। নির্যাতিত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ বা তৃতীয়পক্ষ আদালতে মামলা করলে ধারা ৬ ও ধারা ৭ অনুসরণ করতে হবে।
রূপমের আইনজীবীর অভিযোগ, মামলার বাদী রতন ভট্টাচার্য অত্যন্ত প্রভাবশালী। তার প্ররোচনায় রূপমকে কারা অভ্যন্তরে নির্যাতন করা হয়েছে।
এদিকে গত শনিবার চমেক হাসপাতালের পরিচালক বরাবর মামলার বাদী রূপমের স্ত্রী এক আবেদন দাখিল করেন। এতে তার স্বামীর শরীরের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ আঘাতের ধরণ মেডিকেল রেজিস্টারে সংরক্ষণ করে রাখার আবেদন করা হয়।
ওই আবেদনে বলা হয়েছে, কারাগারে তার স্বামীকে হত্যার উদ্দেশ্যে বৈদ্যুতিক শক ও বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে। সারা শরীরে আছে আঁচড়, কিল, ঘুষি ও লাথি মারার চিহ্ন।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ২৫ এপ্রিল নগরের কোতোয়ালী থানায় রতন ভট্টাচার্য নামে এক ব্যবসায়ীর দায়ের করা জালিয়াতি ও আত্মসাতের মামলায় রূপম ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে কারাবন্দি হন। চুক্তিমতো টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ওইদিনই আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টায় তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় কারাগার থেকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করেন কারা কর্তৃপক্ষ।
রুপমের স্ত্রী ঝর্ণা রানী জানান, চমেক হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের এমএক্স ১২ শয্যায় তার স্বামী চিকিৎসাধীন। আসামিদের নিযাতনে তার স্বামীর মুখ, হাতসহ সারা গায়ে আঘাতের চিহ্ন আছে। অন্ডকোষে আগুনের ছ্যাঁকার চিহ্ন পাওয়া গেছে। পুরো অন্ডকোষ ও পুরুষাঙ্গ আগুনে ঝলসে গেছে।
তিনি বলেন, আমার স্বামীকে হাসপাতালে ভর্তি করার একদিন পর তার অসুস্থতার খবর পাই। গুরুতর আহত অবস্থায় আমার স্বামীকে পায়ে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে হাসপাতালে আনা হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তির পর দুইদিন পর্যন্ত স্বামী ডান্ডাবেড়ি পরিহিত ছিলেন।
হাসপাতালের শয্যায় রূপম সাংবাদিকদের বলেন, মামলার আসামিরা আমাকে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়েছে। ইলেক্ট্রিক শক দিয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার রফিকুল ইসলাম দাবি করে বলেন, রুপম কান্তি দেবনাথ মাদকাসক্ত। মাদক নেয়ার জন্য তার প্রবল নেশা উঠলে তাকে গত রোববার চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার স্ত্রীর অভিযোগ ভিত্তিহীন। তার স্বামী রুপমের অন্ডকোষর জটিল রোগে আক্রান্ত। এছাড়া তার ডায়বেটিস রোগও রয়েছে।
তিনি দাবি করেন, কারাগারে তাকে ইলেক্ট্রিক শক, বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করার অভিযোগ মিথ্যা। চিকিৎসকেরা তার শরীর থেকে রক্তের নমুনা নিয়ে যাবতীয় পরীক্ষা করেছেন। বিষাক্ত ইনজেকশন বা ইলেক্ট্রিক শক দেয়ার কোনো প্রমাণ পায়নি চিকিৎসকরা।
বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে