ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

যেভাবে পাসপোর্ট পেলো বঙ্গবন্ধুর খুনির সন্তানরা

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২১, ১১:৩৪  
আপডেট :
 ০৪ মার্চ ২০২১, ১১:৫৫

যেভাবে পাসপোর্ট পেলো বঙ্গবন্ধুর খুনির সন্তানরা
প্রতীকী ছবি

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানো দলটির সামনের সারিতে ছিলেন মোসলেহ উদ্দিন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার শুরু করলে মোসলেহ উদ্দিন আত্মগোপন করেন। এখন তার অবস্থান কোথায়, তা নিয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই। সেই খুনি রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেহ উদ্দিনের ছয় সন্তান তাদের বাবার নাম মো. রফিকুল ইসলাম খাঁন হিসেবে উল্লেখ করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিয়েছেন। এরপর একই জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তাদের তিনজন পাসপোর্ট ও একজন ড্রাইভিং লাইসেন্সও নিয়েছেন।

মোসলেহ উদ্দিনের ছয় সন্তান হলেন মো. সাজিদুল ইসলাম খাঁন, সানাজ খাঁন, মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম খান, মাহমুদুল ইসলাম খান, মজিদুল ইসলাম খান ও মো. মহিদুল ইসলাম খান। এরা সবাই বাবার নাম রফিকুল উল্লেখ করে জাতীয় পরিচয়পত্র নেন। এর মধ্যে সাঁনাজ খান, মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম খান ও মো. মহিদুল ইসলাম খান পাসপোর্ট নিয়েছেন। ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়েছেন মাহমুদুল ইসলাম খান।

নথিপত্র অনুযায়ী, সাঁনাজ খান পাসপোর্ট পান ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর। মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম খান পাসপোর্ট নেন ২০১৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি। আর মো. মহিদুল ইসলাম খান পাসপোর্ট পান ২০১৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর।

মোসলেহ উদ্দিনের ছোট ছেলে মহিদুল ইসলাম খান দাবি করেন, তার জন্মের পর থেকেই বাবার নামের জায়গায় রফিকুল ইসলাম খাঁন ব্যবহার করা হয়েছে, মোসলেহ উদ্দিন নয়। তাদের শিক্ষাসংক্রান্ত সব নথিপত্রে বাবার নামের জায়গায় রফিকুল ইসলাম খাঁন লেখা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালে মোসলেহ উদ্দিনের নামে পাসপোর্ট বাতিল করে। তার মানে হলো, ওই সময় পর্যন্ত মোসলেহ উদ্দিনের নামে পাসপোর্ট ছিল। কিন্তু তার সন্তানেরা এর আগে থেকেই বাবার ভিন্ন নামে পরিচিত হন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে দেশে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা করা হয়। পরে এই ভোটার তালিকার ভিত্তিতে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া শুরু হয়।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সেনা গেজেটে মোসলেহ উদ্দিন খানের নাম রয়েছে। তার নামে গেজেট জারি করা হয় বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের শাসনামলে, ২০০৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। তার বাবার নাম আব্দুল হক খান। জেলা নরসিংদী, থানা শিবপুর, গ্রাম দত্তেরগাঁও।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন অনুযায়ী, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য দেওয়া অথবা তথ্য গোপন করার শাস্তি অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড। কোনো ব্যক্তি জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করলে তিনি সাত বছর কারাদণ্ড এবং অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনতে গঠিত কমিটির গত ৯ অক্টোবরের বৈঠকের কার্যবিবরণীতে বলা হয়, মোসলেহ উদ্দিনের নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার দত্তেরগাঁওয়ে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৪৫ শতাংশের মতো বাড়ির ভিটাসহ নাল জমি রয়েছে। বৈঠকে নরসিংদীর পুলিশ সুপার জানিয়েছিলেন, মোসলেহ উদ্দিন বিষয়ে তাঁরা কোনো খোঁজ পাননি। বর্তমানে তাঁর সম্ভাব্য অবস্থান ভারত। অবশ্য স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, মোসলেহ উদ্দিনের সন্তানদের কেউ কেউ নরসিংদীতে বাস করেন। সেখানে তারা মোসলেহ উদ্দিনের সন্তান নামেই পরিচিত।

সরকার ২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে সম্পদ এখনো বাজেয়াপ্ত করা হয়নি, কাজ চলছে। এদিকে গত ৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) সভায় মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সুপারিশ করা হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত