ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

বীরশ্রেষ্ঠদের কথা

রুহুলের মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় মানুষ

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২১, ০৯:০৮

রুহুলের মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় মানুষ
বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন।

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন পাকিস্তান নৌ-বাহিনীতে যোগ দেন ১৯৫৩ সালে। শুরুতে তিনি ছিলেন জুনিয়র ম্যাকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার। ১৯৬৮ সালে রুহুল আমিনকে বদলি করা হয় চট্টগ্রামে। সেখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এই বীর সেনা।

দেশমাতৃকার টান

১৯৩৫ সালে নোয়াখালীর বাঘচাপড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন রুহুল আমিন। ছোটবেলায় অভাব-অনটন তেমন একটা অনুভব করেননি তিনি। তবে, রুহুল যখন তরুণ, তখন তার বাবা ক্রমশ আর্থিক স্বচ্ছলতা হারাতে থাকেন। তাই হাইস্কুল পাস করেই চাকরি শুরু করেন তিনি।

পারিবারিক কারণেই এই চাকরিটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল রুহুলের জন্য। কিন্তু দেশমাতৃকার টান তাকে আটকে রাখতে পারেনি। তাই একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ২ নং সেক্টরে থাকাকালীন অনেকগুলো সম্মুখ যুদ্ধে সাহসিকতার পরিচয় দেন এই সেনা।

গবেষণা

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনকে নিয়ে গবেষণা করছেন তার বড় নাতি মোহাম্মদ সোহেল চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে পদাতিক বাহিনীতে ছিলেন রুহুল। সেখান থেকে নৌবাহিনীতে তিনি কিভাবে যোগ দিলেন? এ বিষয়ে মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘একাত্তরের সেপ্টেম্বরে তিনি নৌবাহিনীতে যোগদান করেন, তখন সিদ্ধান্ত হয় যে, বাংলাদেশ নৌবাহিনী তৈরি করা হবে। তখনই কলকাতার মেয়রের কাছ থেকে দুটি টাগবোট উপহার দেয়া হয়। সেই টাগবোট দুটোকে যুদ্ধজাহাজে রুপান্তরের জন্য নৌবাহিনীর সদস্যরা যারা, বিভিন্ন রণাঙ্গনে যুদ্ধরত ছিলেন, তাদেরকে ডাকা হয়। তারা কলকাতার গার্ডেন রিজ ডক ইয়ার্ডে গিয়ে বোট দুটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যুদ্ধ জাহাজ দুটির নাম দেয়া হয় পদ্মা এবং পলাশ।’

বিমান হামলা

ডিসেম্বরের দশ তারিখ গানবোট পলাশ নিয়ে রুহুল পৌঁছে যান মংলা বন্দরে। শত্রুসেনার কবল থেকে মংলা দখলের উদ্দেশ্য ছিল তাদের। কিন্তু হঠাৎই বিমান হামলার মুখে পড়েন তারা। এই বিমান হামলায় গানবোটসহ নৌবাহিনীর একাধিক গানবোট ধ্বংস হয়েছিলো। সেই হামলা আসলে তখন কারা চালিয়েছিলো? এ ব্যাপারে সোহেল চৌধুরী বলেন, ‘আসলে এই ব্যাপারে সুস্পষ্ট তথ্য আমিও খুঁজেছি। রুহুল আমিনের সহযোদ্ধারা জানিয়েছেন, তারা যখন রূপসা নদী দিয়ে খুলনা থেকে মংলা বন্দরের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন, ঠিক তখনই তিনটি জঙ্গি বিমান হামলা চালায়। সে সময় যুদ্ধ জাহাজ থেকে সিগন্যাল দেয়া হয় এবং তারা বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সিগন্যাল দেয়ার পরেও ভারতীয় জঙ্গি বিমান তাদের উপর বোমা ফেলার কথা নয়। রুহুলের সহযোদ্ধাদের মতে, পাকিস্তানের জঙ্গি বিমান থেকেই নৌবাহিনীর জাহাজে বোমা ফেলা হয়েছিল।’

আহত রুহুলকে হত্যা

১০ ডিসেম্বরের সেই হামলার সময় সাহসিকতার সঙ্গে সেই গানবোটেই অবস্থান করছিলেন রুহুল। সহযোদ্ধারা পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণ রক্ষা করলেও, তিনি চেষ্টা করেন গানবোট পলাশকে রক্ষা করতে। কিন্তু একসময় ব্যর্থ হয় সেই চেষ্টা। আহত রুহুল পানিতে লাফিয়ে পড়েন। তারপর কি হল? সোহেল চৌধুরীর কথায়, ‘বোমার আঘাতে রুহুলের একটি হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই অবস্থায় সাঁতরে তিনি যখন পাড়ে আসেন, তখন স্থানীয় রাজাকাররা তাকে বেয়নিট দিয়ে খুচিয়ে হত্যা করে।’

মরদেহ কি উদ্ধার হয়েছিল?

বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সে সময় রুহুল আমিন-এর লাশ উদ্ধার সম্ভব হয়নি। এই তথ্যের সঙ্গে একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন রাখা হয়েছে সাইটটিতে। সোহেল চৌধুরী জানান, ‘রুহুলকে হত্যার ছয় দিন পরে স্থানীয় মানুষ তার মরদেহ উদ্ধার করেন এবং দাফন করেন। বর্তমানে সেখানে সমাধি সৌধ তৈরি হয়েছে।’

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের পরিবারের সদস্যরা চান রুহুল আমিন এর নানা স্মৃতি সংরক্ষণে এগিয়ে আসুক সরকার। যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম এই বিজয়ী সেনা সম্পর্কে জানতে পারে। বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের চাওয়া এই টুকুই। সূত্র: ডয়েচে ভেলে

আরো পড়ুন

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের পরিবারকে নতুন বাড়ি উপহার

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত