ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

অযত্নে শুয়ে আছেন বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২১, ০৯:১২  
আপডেট :
 ০৬ মার্চ ২০২১, ০৯:৩৪

অযত্নে শুয়ে আছেন বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর
বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর।

বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানে। দেশমাতার প্রতি ভালোবাসা তাকে ১৯৭১ সালের ৩ জুলাই পশ্চিম পাকিস্তান থেকে টেনে আনে। এরপর ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে।

ছেলেবেলা বরিশালে

মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের জন্ম বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ এলাকায়। তার ছোটবেলা কেটেছে বরিশালেই। ১৯৬৬ সালে ব্রজমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি। মাষ্টারদা সূর্য সেনের জীবনীগ্রন্থ, ক্ষুদিরামের ফাঁসি, তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা, চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুণ্ঠন এবং প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের জীবনীসহ বহু গ্রন্থ জাহাঙ্গীর পড়েছেন ছাত্র জীবনেই। বাংলার স্বাধীনতা নিয়ে সে সময় তার বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ পায়।

ফিরে আসা

১৯৬৭ সালে এই সাহসী তরুণ যোগ দেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে তিনি ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাকোরামে। পূর্ব পাকিস্তানে তখন পশ্চিমিরা গণহত্যা চালাচ্ছে। এই খবর শুনে আর শান্ত থাকতে পারেননি জাহাঙ্গীর। ফিরে আসেন নিজের জন্মভূমিতে, যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে।

কেমন ছিলেন জাহাঙ্গীর?

বাংলাদেশ সরকার এর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১২ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী জাহাঙ্গীর এর নেতৃত্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আক্রমণ করে। এসময় তাকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পান অপর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ এনামুল হক।

জাহাঙ্গীর কেমন ছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে এনামুল বলেন, ‘অত্যন্ত ভালো মানুষ। একজন সেনা অফিসার, যিনি পাকিস্তান থেকে চলে এসেছিলেন দেশমাতাকে মুক্ত করার জন্য। তিনি ছিলেন দরদী একজন মানুষ। তার সহযোদ্ধাদের কেউ যখন আহত হয়েছেন বা মৃত্যুবরণ করেছেন, তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। মানুষ হিসেবে অত্যন্ত ভালো ছিলেন তিনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে অভিযান

১৪ ডিসেম্বর ভোররাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জকে দখলের চূড়ান্ত অপারেশন শুরু করেন জাহাঙ্গীর। তিনি জানতেন, এই অভিযান অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। তবুও মাত্র ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে তিনি অভিযান শুরু করেন।

গুণিজন ডটকম এর তথ্য অনুযায়ী, রেহাইচর এলাকা দিয়ে জাহাঙ্গীররা মহানন্দা নদী পায়ে হেঁটে পাড়ি দিলেন। উত্তর দিক দিয়ে আক্রমণের সূচনা করা হলো। অতর্কিত হামলা করে বেয়নটের মাধ্যমে শত্রু খতম করতে করতে তারা এগোতে লাগলেন দক্ষিণ দিকে। ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর এমনভাবে আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিলেন যাতে উত্তর থেকে শত্রু নিধন করার সময় শত্রুরা দক্ষিণ দিক থেকে গুলি করতে না পারে। সম্মুখ ও হাতাহাতি যুদ্ধ ক্রমেই তীব্র আকার ধারণ করতে থাকে। আর মাত্র কয়েকটা বাঙ্কারের পাকসেনা বাকি। তখনই দেখা দিল সমস্যা। হঠাৎ একটা গুলি এসে বিঁধলো ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের কপালে। সেদিন সকালে পাকিস্তানি বাহিনীর এই স্নাইপার বুলেটের আঘাতে শহীদ হন জাহাঙ্গীর।

মরদেহ উদ্ধার

এই মুক্তিসেনার মরদেহ উদ্ধার করেন তার সহযোদ্ধারা। সেই দলে ছিলেন এনামুল হকও। তিনি বলেন, ১৫ তারিখ সকালে আমরা ওনার মরদেহ উদ্ধার করে সোনামসজিদে পাঠিয়ে দেই। তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী সেখানেই তাকে দাফন করা হয়।

এনামুল হক জানান, সোনামসজিদ চত্বরে জাহাঙ্গীর এর সমাধিটি এখন অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে। সরকার বিভিন্ন সময় এটিকে সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তব রূপ নেয়নি।

তার কথায়, বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবস আসলে সরকার তড়িঘড়ি করে কিছু কাজ করতে চায়। কিন্তু স্থায়ী একটা যে ইমারত ওখানে করা দরকার, সেই কাজটা এখনো হয়নি। আমরা আশা করছি, বর্তমান সরকার এটা করবেন।

স্বাধীন বাংলাদেশ

বাংলার সবুজের কোলে লাল সূর্য এঁকে দিয়ে গেছেন জাহাঙ্গীররা, স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু সেই স্বাধীন বাংলাদেশ কি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে? স্বাধীনতার চল্লিশ বছর এনামুলের জবাব, আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরতে পেরেছি। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে যুদ্ধটা ছিল সেগুলো এখনো পূরণ হয়নি।

যেমন ধরুন- মানুষের মুক্তি, অর্থনীতির মুক্তি, অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানো কিংবা প্রতিটি ঘরে স্বাধীনতার স্বাদ পৌঁছে দেয়া, এগুলো এখনো সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, বরিশালে জাহাঙ্গীরের পরিবারের দান করা জায়গার ওপর সরকারি খরচে নির্মাণ করা হয়েছে বীরশ্রষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার। এছাড়া, সেখানকার একটি ইউনিয়নেরও নামকরণ করা হয়েছে ‘মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর’। সূত্র: ডয়েচে ভেলে

আরো পড়ুন

বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের পরিবারের জমি দখলের চেষ্টা

বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর সেতুতে অবৈধ টোল

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত