ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

হিলিতে নারীদের স্বচ্ছলতা ফিরেছে

  সোহেল রানা, হিলি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২১, ১১:২৫  
আপডেট :
 ০৬ মার্চ ২০২১, ১২:৩৭

হিলিতে নারীদের স্বচ্ছলতা ফিরেছে
ছবি- প্রতিনিধি

সীমান্ত এলাকা হওয়ায় তেমন মিল-কারখানা নেই হিলিসহ পার্শবর্তী উপজেলাগুলোতে। কাজের তেমন সুযোগ না থাকায় কোনমতে সংসার চালাতো পরিবারের পুরুষরা। আর বাড়িতে বসে অলস সময় কাটাতো গ্রামীণ এলাকার নারীরা।

সেই আঁধার কাটিয়ে সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে এখন নারীরাও বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। গ্রামীণ এসব নারীদের জন্য মনোরম পরিবেশে সীমান্ত ঘেঁষে হিলি-হাকিমপুর উপজেলা থেকে কয়েক কিলোমিটার পূর্ব দিকে মতিহারা গ্রামে গড়ে উঠেছে হেয়ার ক্যাপের কারখানা।

আজীবন ঘরের কাজে নিয়োজিত সীমান্তের গ্রামীণ নারীরা এখন রোজগার করছেন হেয়ার ক্যাপের কারখানায় শ্রম দিয়ে। চুল দিয়ে মাথার ভিন্নধর্মী ক্যাপ বানিয়ে শিল্প সম্ভাবনা তৈরি করছেন এই এলাকার মানুষরা। এতে করে পরিবারগুলোর যেমন স্বচ্ছলতা ফিরেছে, তেমনি রপ্তানির সুযোগ গড়ছে নতুন এই শিল্প।

কারখানাতে কর্মরত আনেছা বেগম বলেন, আমাদের এলাকাতে নারীদের উপার্জন করার কোনো সুযোগ ছিলো না। সম্প্রতি বাড়ির পাশে একটি হেয়ার ক্যাপের কারখানা হয়েছে, সেখানে আমরা কাজ করছি। সংসারের কাজের পাশাপাশি এরকম কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমরা খুশি। বাড়ির কাজও হচ্ছে, আবার টাকাও পাচ্ছি।

রেজিনা বলেন, আমার স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে কষ্টে সংসার চলতো। সংসারের একমাত্র উপার্জন করতো আমার স্বামী। এখন আমিও টাকা উপার্জন করছি। দু’জনের টাকায় আমাদের সংসার এখন ভালো চলছে। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনাও ভালোভাবে করাতে পারছি।

হেয়ার ক্যাপের কারখানায় সুমাইয়া নামের এক স্কুলছাত্রী বলেন, করোনায় স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিলো। বাড়িতে বসে সময় কাটানো ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না। পাশের বাড়ি আন্টির কাছ থেকে এই হেয়ার ক্যাপের কারখানার কথা শুনে আমি এসে কাজ করি। প্রথম দিকে একটু খারাপ লাগলেও এখন এই কাজটা করতে অনেক ভালো লাগছে। কারণ যে টাকা পাচ্ছি সেখান থেকে বাড়িতে কিছু টাকা দিয়ে বাবা-মাকেও সহযোগিতা করতে পারছি, নিজের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সময়গুলোও ভালোভাবে কাটাতে পারছি।

কথা হয় কারখানাটিতে কর্মরত বেশকিছু নারীকর্মীর সাথে, তারা বলেন, বাড়ির সকালের কাজ শেষে এখানে কাজে যোগ দিতে পারি। কাজের পরিবেশ ভালো। একসাথে আমরা অনেকগুলো নারী কাজ করতে পারছি। কাজ করে এখান থেকে প্রতিমাসে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা পাই।

কারখানার সুপারভাইজার মলিহা বলেন, এই কারখানায় আমরা ৫ জন নারী সুপারভাইজার আছি। কারখানাতে প্রথমদিকে যারা আসেন তাদেরকে আমরা বিভিন্নভাবে কাজ শেখাই। এর পাশাপাশি কাজ দেখাশোনা এবং কাজ শেষ হলে তাদের থেকে কাজ বুঝে নেই।

সুমাইয়া হেয়ার ক্যাপের মালিক তরিকুল ইসলাম বলেন, আমার হেয়ার ক্যাপের কারখানায় ৩ শতাধিক নারী শ্রমিক মনোরম পরিবেশে কাজ করছে। বহির্বিশ্বে এই ক্যাপের চাহিদা অনেক। তাই আরো কয়েকটি কারখানা চালুর জন্য কাজ করছি। সেগুলো চালু হলে আরও তিন হাজার নারী শ্রমিকের কাজ করা সুযোগ হবে। আমার এই কারখানাতে উৎপাদিত হেয়ার ক্যাপগুলো আমি চীনে রপ্তানি করে থাকি।

এ বিষয়ে দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক বলেন, অবহেলিত এই এলাকাকে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের স্বাবলম্বী করে তুলতে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এরই ধারাবাহিকতায় হিলি স্থলবন্দর, হিলি আরনু জুট মিলে বেশ কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। আমাদের এলাকায় যারা এ ধরনের কারখানা করতে চায় তাদেরকে সহযোগিতা করা হবে বলেও জানা দেয়া হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত