ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

আলোক ফাঁদে আশাবাদী কৃষকরা

  সুজন সেন, শেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২১, ১৩:১৭

আলোক ফাঁদে আশাবাদী কৃষকরা
ছবি- নিজস্ব

শেরপুরের পাঁচ উপজেলায় চলতি বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক রাখতে ফসলি জমির ভালো ও ক্ষতিকর পোকা নির্ণয়ে ‘আলোক ফাঁদ’ প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করেছে কৃষি বিভাগ। উপকারভোগীরা বলছেন, এর ফলে ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ থেকে ফসল বাঁচাতে পারবে লাখো কৃষক।

শনিবার সকালে খামারবাড়ীর উপ-পরিচালক ড. মোহিত কুমার দে বলেন, জেলার ৫২টি ইউনিয়নের ১৫৬টি ব্লকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ঘরে ফসল তোলার আগ পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শেরপুরে এবার ৯০ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৩ হাজার ৯৫০ হেক্টর, শ্রীবরদীতে ১৬ হাজার ৮০৭ হেক্টর, ঝিনাইগাতীতে ১৩ হাজার ৭৫৫ হেক্টর, নালিতাবাড়িতে ২২ হাজার ৭৫৮ হেক্টর ও নকলায় ১৩ হাজার ৪৬০ হেক্টর।

সচেতনতার অভাবে অনেক কৃষক জমিতে ক্ষতিকর পোকা আক্রমণ করার আগেই কীটনাশক প্রয়োগ করে থাকেন। এতে করে ফসলের জমির উপকারী অনেক পোকা মারা যায়। কৃষকরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। ‘আলোক ফাঁদ’ ব্যবহার করে ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি নির্ণয়ের পরে কীটনাশক প্রয়োগ করতে কৃষকদের উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। ফলে কৃষকের অপ্রয়োজনীয় কীটনাশক ব্যবহার কমবে, আর ফসল থাকবে বিষমুক্ত।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ সাপেক্ষে নির্দিষ্ট সংখ্যক সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ফসলি জমিতে আলোক ফাঁদের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া কৃষকরাও স্ব-উদ্যোগে জমিতে ইলেকট্রিক লাইন অথবা চার্জারের মাধ্যমে আলোক ফাঁদের ব্যবস্থা করেন। প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার এ ফাঁদ বসানো হয়।

নকলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আফাজুল হক বাবু জানান, ধানের জমির পাশে তিনটি খুঁটি দিয়ে একটি বৈদ্যুতিক লাইট ঝোলানো হয়। লাইটের নিচে একটি পানির পাত্র রাখা হয়। এরপর পাত্রের পানিতে ডিটারজেন্ট পাউডার অথবা কেরোসিন মিশ্রণ করা হয়। আলো জ্বালানোর পরপরই ফসলের জমিতে থাকা বিভিন্ন জাতের পোকা এসে নিচে রাখা পানির পাত্রে পড়তে থাকবে। এভাবেই ‘আলোক ফাঁদ’ ব্যবহার করে ফসলি জমিতে ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়।

তিনি বলেন, ক্ষতিকর পোকার মধ্যে ঘাস ফড়িং, মাজরা, বাদামি ঘাস ফড়িং ও পাতা মোড়ানো পোকাসহ আরো নানা জাতের পোকা পাওয়া যাচ্ছে।

‘আলোক ফাঁদ’ সম্পর্কে ঝিনাইগাতীর কৃষক হোসেন আলী বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এখন থেকে ফসলের জমিতে কীটনাশক দেয়ার আগে ক্ষেতে পোকা আছে কি না তা পরীক্ষা করতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করবো।

কৃষি বিভাগের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এর ফলে ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ থেকে ফসল বাঁচাতে পারবে লাখো কৃষক।

ঝিনাইগাতীর পাইকুড়া গ্রামের কৃষক সাদ্দাম মন্ডল বলেন, তার জমির ধান গাছের পাতা সংকুচিত হয়ে সাদা হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের জানানোর পর তারা জমির পাশে ‘আলোক ফাঁদ’ তৈরি করেন। পরে এই ‘আলোক ফাঁদ’ জ্বালানোর সাথে সাথে শত শত পোকা আলোর কাছে চলে আসে ও পানিতে পড়ে মারা যায়। এটা পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি বলে তিনি মনে করেন। এতে করে তার কীটনাশক খরচ অনেকটা কমবে। একই সাথে সহজেই পোকা-মাকড়গুলো চিহ্নিত করা যাবে বলে তিনি জানান।

ঝিনাইগাতীর কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারের ফলে কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে কৃষক সহজেই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে জমিতে ক্ষতিকর পোকামাকড় আছে কি না তা জানতে পারবেন। এটি একটি সহজলভ্য পদ্ধতি। এতে ফসল উৎপাদনে খরচ কমে যাবে ও ফসল হবে বিষমুক্ত।

শেরপুর খামারবাড়ীর উপ-পরিচালক ড. মোহিত কুমার দে বলেন, জেলায় এবার বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৭১ হাজার ৭৫৬ মে. টন। আর চালের হিসাবে তা ৩ লাখ ৮১ হাজার ১৭১ মে. টন। এবার আলোক ফাঁদ ব্যবহার করার ফলে ধান উৎপাদন আরো বাড়বে বলে তিনি আশা করা হচ্ছে।

আলোক ফাঁদের উপকারী দিক পর্যালোচনা করতে গিয়ে এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এটি শুধু ধান আবাদেই সফলতা পাওয়া যাবে এমন নয়। যদি কোনো কৃষক বৃহৎ আকারে সরিষা, ভুট্টা, আলু, গম ও সিমসহ নানা ধরণের সবজি উৎপাদন করেন, তাহলে সেখানেও এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে সুফল পাবেন।

তিনি জানান, এবার প্রণোদনা হিসাবে দুই কেজি করে বোরো ধানের হাইব্রিড জাতের বীজ জেলার ৮০ হাজার কৃষকের মাঝে বণ্টন করা হয়েছে। এছাড়া আরো ৭ হাজার ৫শ’ কৃষককে দেয়া হয়েছে পাঁচ কেজি করে বোরো ধানের বীজ এবং ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত