ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়েছে, বাস্তবায়ন হয়নি

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২১, ০৯:২৫

শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়েছে, বাস্তবায়ন হয়নি
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ।

নূর মোহাম্মদ শেখ এর জন্ম ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। চাকরি করেছেন পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন এই বীর সেনা। তিনি আমাদের সাত বীরশ্রেষ্ঠের একজন।

নূর মোহাম্মদ শেখ তৎকালীন ইপিআর-এ যোগ দিয়েছিলেন ১৯৫৯ সালে। এর কয়েক বছর ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে দিনাজপুর সেক্টরে যুদ্ধরত অবস্থায় আহত হন তিনি। সে সময় যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য নূর মোহাম্মদকে একাধিক মেডেল প্রদান করে পাকিস্তান সরকার।

ছুটি থেকে যুদ্ধে

একাত্তরে যুদ্ধের শুরুতে ছুটিতে ছিলেন এই সাহসী সেনা। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার খবরে আর শান্ত থাকতে পারেননি তিনি। যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। সাহসিকতার সঙ্গে লড়তে থাকেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে।

পরিবার নিয়ে ভাবনা

একাত্তরের যুদ্ধকালীন সময়ে নূর মোহাম্মদকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন অপর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল। ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা হয় তার। নূর মোহাম্মদ সম্পর্কে তিনি বলেন, ব্যক্তি হিসেবে নূর মোহাম্মদ অত্যন্ত সাহসী এবং ধীরস্থির ছিলেন। বিপদে কখনো বিভ্রান্ত হতেন না তিনি।

বর্তমানে বাগেরহাটের ফকিরহাটে বাস করছেন মোস্তফা কামাল। তিনি জানান, নূর মোহাম্মদ তার পরিবারের কথা প্রায়ই বলতেন। স্ত্রী, সন্তানদের কাছে আর কখনো ফেরা হবে কিনা তা জানতেন না নূর।

ফেরা হয়নি

পরিবারের কাছে আর ফেরা হয়নি নূর মোহাম্মদের। একাত্তরের ৫ সেপ্টেম্বর সুতিপুরে শত্রুপক্ষের মর্টারের গোলার আঘাতে প্রাণ হারান তিনি। তবে, সেই যুদ্ধে অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে লড়েছিলেন নূর। সহযোদ্ধাদের বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত লড়াই করেন তিনি। মোস্তফা কামালের বক্তব্য অনুযায়ী, নূর এমন একটি অবস্থানে ছিলেন যেখানে গুলি করে তাকে মারা সম্ভব ছিল না। তাই, শত্রুরা অন্তত ৩০টি মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করে তাকে হত্যা করতে।

মৃত নূরকে নির্যাতন

নূর মোহাম্মদের মরদেহের উপরও অমানবিক নির্যাতন করে পাকিস্তানি সেনারা। এমন বীভৎস নির্যাতন মোস্তফা কামাল সেদিনই প্রথম দেখেছিলেন। তিনি বলেন, বেয়নেট দিয়ে নূর এর চোখ উপড়ে ফেলেছিল শত্রুরা। তার মাথার ঘিলু বের হয়ে যায়। মৃত নূরের উপর উপর্যুপরি বেয়নেট চার্জ করে পাকিস্তানিরা।

সহযোদ্ধারা পরবর্তীতে নূর মোহাম্মদের মরদেহ উদ্ধার করেন। এরপর তাকে সীমান্তবর্তী যুদ্ধক্ষেত্র কাশীপুরে সমাহিত করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার বীরত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করে।

নূর এর পরিবার

নূর মোহাম্মদ এর পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে যশোর এবং আশেপাশের শহরে বসবাস করছেন। নূরের একমাত্র ছেলে এসএম গোলাম মোস্তফা কামাল জানান, বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সহায়তায় সরকার শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়েছে, কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি।

হতাশ মোস্তফা

নূর মোহাম্মদের সহযোদ্ধা মোস্তফা কামালও হতাশা প্রকাশ করেছেন। সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করেছেন ঠিকই, তবুও স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পর কাঁদলেন মোস্তফা। তিনি বলেন, অনেক মুক্তিযোদ্ধা টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারছে না। আমার খুব দুঃখ লাগে যে, কেন এই দেশের মানুষ ৪০ বছর পর বুঝতে পারলো মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ন করা উচিত। এতদিন কেন হয়নি? সূত্র: ডয়েচে ভেলে

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত