ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

সাক্ষাৎকারে ইউএনও শুক্লা

‘নারী কর্মকর্তা’ নয়, ‘কর্মকর্তা’

  হাফছা আক্তার, নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২১, ২০:২১  
আপডেট :
 ০৮ মার্চ ২০২১, ২১:০০

‘নারী কর্মকর্তা’ নয়, ‘কর্মকর্তা’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুক্লা সরকার

দেশে করোনার প্রভাব শুরু হওয়ার সময় থেকেই ভাইরাস প্রতিরোধে মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুক্লা সরকার। একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নিজ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্তও হন তিনি।

এদিকে তার বাড়িতে ৪ বছর বয়সী কন্যা শিশু। যে কিনা তখনও মাকে ছেড়ে থাকতে অভ্যস্ত নয়। তবুও শুক্লা সরকারকে থেমে থাকতে দেখা যায়নি। কোয়ারেন্টাইনে থেকেই তদারকি করেছেন করোনাভাইরাস প্রতিরোধের বিভিন্ন কার্যক্রম। কোয়ারেন্টাইনের পর ফিরে এসে যেন আরও বেশি উদ্যোমী হয়ে কাজ করতে দেখা যায় তাকে। গত এক বছরে দেশের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে একটুও নরবরে হতে দেখা যায়নি এ সরকারি কর্মকর্তাকে।

একজন নারী কর্মকর্তা হিসেবে করোনাকালীন সময়ে তার এই কাজের জন্য নানা যায়গায় প্রশংসীতও হয়েছেন। তবে তার আপত্তিটা সেখানেই!

এ বিষয়ে নারী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জার্নালের বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নিজের সমস্তটুকু দিয়ে এই পরিস্থিতিতে নিজের দায়িত্ব পালন করেছি। একজন নারী কর্মকর্তা হিসেবে আমি কোনো বাড়তি সুবিধা পাইনি, বা কম কাজ করিনি। এমনও নয় যে নারী হওয়ার সুবাদে আমি আমার দায়িত্বের বাইরে গিয়ে বেশি কাজ করেছি। তবুও সকলে এটাই বলেছে যে একজন নারী কর্মকর্তা 'হয়েও' এতো এতো কাজ করেছেন তিনি।’

‘এই সময়ে এসেও আমার পরিচয় একজন সরকারি কর্মকর্তা নয়, বরং একজন সরকারি নারী কর্মকর্তা! যা প্রতিনিয়ত মানুষ হিসেবে আমার পরিচয়কে ছাপিয়ে যায়। এই নারী দিবসে আমি বলতে চাই যে, নারী হওয়া আমার ব্যক্তিসত্তা এবং এটি আমার ব্যক্তিগত পরিচয়। তবে সমাজে আমার পরিচয় একজন নারী কর্মকর্তা নয় বরং একজন সরকারি কর্মকর্তা!’

আধুনিক সমাজে পদার্পন করেও আমরা ভাবতে পারি না যে, হাজারো প্রতিকুল পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে একজন নারী নিজ যোগ্যতায় তার অধিকার নিশ্চিত করতে পারে। ফলে আজও পুত্র সন্তানকেই 'পরিবারের আলো' হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু সমাজের এ চিরাচরিত নিয়ম ভেঙেছেন শুক্লা সরকার। বর্তমানে তিনি বন্দর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

১৯৯৮ সালে বাবা সরকারি কর্মকর্তা জাফর ওয়াজেদুল সরকারের মৃত্যুর সময় সবে অষ্টম শেণিতে পড়তেন শুক্লা। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্য বলতে তখন শুধু মা মাকসুদা সরকার ও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছোটো বোন ওয়াজিদা। তখন থেকেই টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেকে বহন করতে হয় তার। কিছু সময় পর একইভাবে নিজের খরচের পাশাপাশি পরিবারেরও হাল ধরেন তিনি।

২০০৮ সালে পড়াশোনা শেষ করে নিজ জেলা রংপুরেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হিসেবে চাকরিজীবনের শুরু হয় শুক্লার। তখন থেকেই যেন আলোর মুখ দেখতে শুরু করে তাদের পরিবার। পরবর্তীতে লালমনিরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়েও শিক্ষিকা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১২ সালে ৩০তম বিসিএস ক্যাডার হিসেবে ঝিনাইদহে সহকারী কমিশনারের পদ লাভ করেন শুক্লা। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে শুক্লা সরকার বিবাহিত এবং একটি কন্যা সন্তানের মা। তার স্বামী গোলাম সাকলায়েন শিথিল বাংলাদেশ পুলিশ ডিপার্টমেন্টে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।

এমন নানা বিষয় উঠে এসেছে তার সাক্ষাৎকারে-

বাংলাদেশ জার্নাল: বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে নারী ক্ষমতায়নের বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন?

শুক্লা সরকার: বর্তমানে নারী ক্ষমতায়নের বিষয়টি আমাদের সমাজের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক। আমরা সমাজের উচ্চ পর্যায়ে নারীদের সতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ দেখতে পাচ্ছি। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী থেকে শুরু করে স্পিকার নারী। এই যে আমি একজন নারী হয়ে এই বিশেষ চেয়ারটিতে বসেছি, এই বিষয়টিকেও আমি নারী ক্ষমতায়ন হিসেবে দেখছি।

বাংলাদেশ জার্নাল: আমাদের সমাজে শিশুকাল থেকে নারীদের নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। এ বিষয়ে আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও রয়েছে। আপনার সেই লড়াইয়ের গল্পটা আমরা জানতে চাই।

শুক্লা সরকার: ১৯৯৮ সালে আমাদের দুই বোনকে রেখে আমার বাবা মারা যান। সে সময়ে আমি মাত্র অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি এবং আমার ছোট বোন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। স্বাভাবিকভাবেই এমন কোনো পরিস্থিতি হলে বাড়ির বড় মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেয়ার পরামর্শ দেয় সকলে। আমার ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। কিন্তু আমার মা তখন সকলের বিরুদ্ধে গিয়ে আমাকে সমর্থন করেন। তিনি প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও আমার জন্য লড়াই করেন। আমি বলবো আজ আমার মায়ের কারণেই আমি এই অব্দি আসতে পেরেছি।

বাংলাদেশ জার্নাল: একদিকে নারীর ক্ষমতায়ন যেমন বাড়ছে, অন্যদিকে নারী নির্যাতনও বাড়ছে। এ বিষয়টি নিয়ে আপনি কী ভাবেন?

শুক্লা সরকার: যতদিন না আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হবে, আমরা সুশিক্ষিত হবো ততদিন এ বিষয়টির প্রতিকার পাওয়া সম্ভব নয়। আমাদের সংবিধানে যে আইনগুলো আছে তা যদি কঠোরভাবে কার্যকর করা হয়, তবে নারীর বিরুদ্ধে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তবুও বলবো যতদিন না মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন হবে, ততদিন এ পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন হবে না।

বাংলাদেশ জার্নাল: নানা সময়ে কর্মক্ষেত্রে নারীদের প্রতি নির্যাতনের চিত্র দেখা যায়। এ বিষয়টি নিয়ে আপনার মতামত কী?

শুক্লা সরকার: আমার চাকরিজীবনে আমি এখনো এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি। তবে সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় আমি হইনি বলে যে অন্য কেউও হয়নি তা বলবো না। তবে আমি মনে করি এর মাত্রা অনেক কমে এসেছে। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে নারীদের যোগ্যতাকে তার ব্যক্তিসত্তা 'নারী কর্মী' সম্বোধন করে তার দক্ষ্যতাকে নিচু করে দেখাও এক ধরণের মানসিক নির্যাতন।

বাংলাদেশ জার্নাল: ১৯৯৮ পর্যন্ত বন্দর উপজেলায় কোনো নারী নির্বাহী কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি। পরবর্তীতে ১৯৯৮ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৫ জন পুরুষ এবং ৬ নারী নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। এ বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

শুক্লা সরকার: এটি খুবই ইতিবাচক একটি বিষয়। দীর্ঘ একটা সময় কোনো নারী এ পদের দায়িত্ব পালন করেনি। পরবর্তীতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে পুরুষ কর্মকর্তা থেকে নারী কর্মকর্তাই বেশি ছিলেন। তবে আমি মনে করি, একজন কর্মকর্তা একজন কর্মকর্তাই। এখানে নারী কর্মকর্তা আর পুরুষ কর্মকর্তা নিয়ে কথা বলে আমরাই নারী পুরুষের ভেদাভেদকে অগ্রসর করি।

বাংলাদেশ জার্নাল: নারী উন্নয়ন নিয়ে আপনার উপজেলার পদক্ষেপ সম্পর্কে কিছু বলুন।

শুক্লা সরকার: আমার উপজেলায় যুব উন্নয়ন, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, বিআরটিবিসহ বিভিন্ন দপ্তর নারী উন্নয়ন নিয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে থাকে। তারা নারীদের সচেতন করার লক্ষ্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে গিয়ে উঠান বৈঠক করে থাকে। নারীদের উন্নয়নের জন্য তাদের করণীয় সম্পর্কে সচেতন করে থাকে। নারীদের সাবলম্বী হয়ে উঠতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে। এর মধ্যে মোবাইল সার্ভিসিং, মৎস চাষ, পশুপালন, শেলাইসহ নানা প্রশিক্ষণ রয়েছে। পাশাপাশি স্বনির্ভর হতে স্বল্প সুদে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করা হয়। এরই মধ্যে 'তথ্য আপা' নামে বাংলাদেশ সরকারের একটি নতুন প্রকল্প চালু হয়েছে। আমাদের সমাজে এখনো অনেক নারীরা রয়েছেন যারা পুরুষদের সঙ্গে যে কোনো বিষয়ে আলোচনা করতে ইতস্তত বোধ করেন, তাদের সাথে কথা বলা এবং তাদের নানা বিষয়ে পরামর্শ দেন তথ্য আপা। তিনি সকল দপ্তরের তথ্য সংগ্রহ করেন এবং প্রত্যেকের প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের তথ্য সরবরাহ করে থাকেন। কোনো নারীর জন্য কোথাও কোনো চাকরির সুযোগ থাকলে সে বিষয়েও নারীদের অবগত করেন তিনি।

‘অন্যদিকে নারীরাও একজন নারীকর্মীর সাথে খোলামেলাভাবে সকল বিষয়ে আলোচনা করে সাচ্ছন্দ্য বোধ করে। বন্দর উপজেলায় এই মুহূর্তে তথ্য আপার ভূমিকা নারীদের মধ্যে ব্যাপক সারা ফেলেছে। তথ্য আপা মাসে তিনটি ইউনিয়নে গিয়ে তিনটি উঠান বৈঠক করে থাকেন। প্রত্যেকটি উঠান বৈঠকে একশ' থেকে দেরশ' নারী উপস্থিত থাকেন।’

বাংলাদেশ জার্নাল: নারী উন্নয়নে শিক্ষার ভূমিকা কতটুকু?

শুক্লা সরকার: আমাদের সমাজে অনেক শিক্ষিত লোক আছে, যারা সমাজে নিজেদের ভূমিকা রাখছেন না। সুতরাং আমি বলবো শিক্ষা নয়, সুশিক্ষা আমাদের প্রয়োজন। আমাদের সকলের শিক্ষিত নয়, সুশিক্ষিত হতে হবে। সুশিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ জার্নাল: নারী উন্নয়নে পুরুষের ভূমিকা নিয়ে আপনি কী বলবেন?

শুক্লা সরকার: একজন সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন বলেই তো একজন বেগম রোকেয়া তৈরি হয়েছেন। সুতরাং আমি মনে করি নারীর একার পক্ষে কখনোই নিজের উন্নয়নের জন্য লড়াই করা সম্ভব নয়, যদি না তার পুরুষরাও সমানভাবে এগিয়ে এসে নারীর এ লড়াইকে সমর্থন করেন।

বাংলাদেশ জার্নাল: বন্দর উপজেলায় মেয়েদের বাল্যবিবাহের প্রবনতা ব্যাপক হারে লক্ষ্য করা যায়। এ বিষয়টির প্রতিকার হিসেবে আপনি কি কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন?

শুক্লা সরকার: বাল্যবিবাহের বিষয়টি আসলে শুধুমাত্র এই উপজেলায় নয়, প্রত্যেক যায়গায় একই রকম। আমি ৬ মাসের মতো হলো এ উপজেলায় এসেছি। এরই মধ্যে ৭ থেকে ৮টি বাল্যবিবাহ আমি বন্ধ করেছি। তবে আমার সবচেয়ে যেই বিষয়টি খারাপ লেগেছে তা হল যে, যাদের বাল্যবিয়ে আমি বন্ধ করতে গিয়েছি, তাদের প্রত্যেকের মা-বাবাই শিক্ষিত ছিল। আবারও বলবো যে, আমাদের সমাজ শিক্ষিত হচ্ছে কিন্তু সুশিক্ষিত হয়নি এবং দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করেনি। নয়তো কিভাবে তারা নিজেদের ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে দিচ্ছে? আমদের প্রয়োজন একত্রে এই বিষয়গুলো মোকাবিলা করা। আমরা এই নেতিবাচক বিষয়টিতে নিরুৎসাহিত করতে নানাভাবে প্রচার প্রচারণা করে থাকি। আমরা মাসে যে তিনটি উঠান বৈঠক করি, সেখানে আমি নিজেও যাই। সেখানে গিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে আমরা তাদের সচেতন করার চেষ্টা করি।

বাংলাদেশ জার্নাল: সমাজে নারীদের অগ্রগতিতে উপার্জনের ভূমিকা কতটুকু? তাছাড়া গৃহিণীদের ভূমিকা নিয়ে আপনার অভিমত কী?

শুক্লা সরকার: সমাজে নারীদের পিছিয়ে থাকার জন্য উপার্জন না করাটা একমাত্র কারণ নয়, তবে এটাও একটা কারণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপার্জন না করার কারণে একজন গৃহিণীকে অবমূল্যায়ন করা হয়। আমি যদি উপার্জন না করতাম, তবে আমার সকল ছোট ছোট প্রয়োজনে আমার স্বামীর কাছে টাকা চাইতে হতো। তার উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকাটা হয়তো এক সময় আমার কাছেও খারাপ লাগতো। তাছাড়া যখন পরিবারের একজন ব্যক্তি উপার্জন করেন, তখন তিনি নিজেকে অন্যজনের চেয়ে বড় করে দেখতে দেখতে চান। অন্যদিকে আমরা একজন গৃহিণীকে কখনোই ছোট করে দেখতে পারি না। কারণ সে তার সম্পুর্ন সময়টাই তার পরিবারকে দিচ্ছে। এর মাধ্যমে তিনি অনেক বড় বড় ত্যাগ স্বীকার করেন।

বাংলাদেশ জার্নাল: বর্তমানে কর্মপরিবেশ কতটা নারীবান্ধব বলে আপনি মনে করেন?

শুক্লা সরকার: আমার বাচ্চাটা যখন হয় তখন আমি ৬ মাসের একটি কর্মবিরতিতে থাকি। কিন্তু সেই কর্মবিরতি শেষ হওয়ার পরেও কিন্তু আমার বাচ্চার মায়ের দুধের প্রয়োজন। আমি যে তাকে অফিসে নিয়ে আসবো, তাকে খাওয়াবো, তার খেয়াল রাখবো, সেই ব্যাবস্থা ছিল না। আমাকে মাঝে মধ্যেই এ নিয়ে লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পরতে হয়েছে। অনেকেরই আবার বাসায় বাচ্চাকে রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। সেসব কর্মজীবী মায়েদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ফলে প্রত্যেকটি কর্মসংস্থানে একটি করে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার থাকা উচিৎ। আমাদের উপজেলায় ইতোমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্রেস্ট ফিডিং স্থাপনের প্রকল্প চালু করা হয়েছে। উপজেলা অফিসে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নারের পাশাপাশি চাইল্ড কেয়ার সেন্টার তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তা শুধুমাত্র কর্মকর্তাদের জন্যই নয় উপজেলায় যেসব নারীরা সেবা নিতে আসেন তারাও এ সুবিধা নিতে পারবেন।

বাংলাদেশ জার্নাল: আন্তর্জাতিক নারী দিবস সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?

শুক্লা সরকার: আমরা বছরে নিজেদের জন্য একটি দিন পাচ্ছি। এটা একটা বিশাল ব্যাপার, তাই নয় কি? আমরা সারা বছর নিজ নিজ দায়িত্ব নিয়ে ব্যস্ত থাকি। কর্মক্ষেত্র, পরিবারকে নিয়ে ব্যাস্ততা, সন্তানকে নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যদিয়ে নিজেদের জন্য সময় বের করা হয়ে ওঠে না। সেখানে আমরা নিজেদের অস্তিত্ব উপভোগ করার জন্য বিশেষ একটি দিন পাই, তবে তা তো ভালো। আর সারা বছর কোনো প্রকার সম্মান না পেয়ে এই একটি দিনকে সম্মান পাওয়ার দিন বলতে আমি নারাজ। সম্মান তো অর্জন করে নিতে হয়, তাই না?

  • সর্বশেষ
  • পঠিত