ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

নতুন সাজে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা

  মনির ফয়সাল

প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২১, ১৭:০৫

নতুন সাজে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা
ছবি- নিজস্ব

দীর্ঘদিনের অবহেলিত চট্টগ্রামের চিড়িয়াখানা এখন নতুন সাজে সজ্জিত। প্রায় ১০ দশমিক ২ একর জায়গাজুড়ে নতুন রূপে প্রস্তুত করা হয়েছে চিড়িয়াখানাকে। নতুন করে ৪ একর জায়গায় বাড়িয়ে করা দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা ও জায়গাগুলো দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে দর্শনার্থীদের।

দর্শনার্থীদের নতুন আকর্ষণ এখন চার একর পাহাড়জুড়ে নৈসর্গিক সিঁড়িটি। লাল, সবুজ, হলুদ ও নীল রঙের ঝলকানি আঁকাবাঁকা ‘স্বর্গের সিঁড়ি’। সিঁড়ির পাশের দেয়ালজুড়ে শিল্পীর আঁকা শিশুদের প্রিয় সব বন্যপ্রাণী। কেউ যাতে সিঁড়ির পাশ দিয়ে পড়ে না যায় সেজন্য দেয়া হয়েছে স্টিলের বেড়া। সিঁড়ি যেখানে শেষ, সেখানে শিশু-কিশোরদের কোলাহল। দোলনায় দোল খাচ্ছে শিশুরা, মজার মজার রাইডে চড়ে উল্লাসে মেতেছে তারা। কেউবা ব্যস্ত বাঘ, সিংহের সঙ্গে সেলফি বা ছবি তুলতে।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, সিঁড়িটা আগেই উদ্বোধন করা হয়েছিল। করোনার কারণে রঙ করা বাকি ছিল। গত শুক্রবার (৫ মার্চ) চিড়িয়াখানার দর্শকদের জন্য এ সিঁড়িটি উন্মুক্ত করা দেয়া হয়। এ চিড়িয়াখানাকে শিশুদের কাছে শিক্ষণীয় ও আকর্ষণীয় করতে নতুন নতুন পরিকল্পনা ও পশুপাখি সংগ্রহের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে সাদা বাঘের জন্য বিখ্যাত চট্টগ্রামের চিড়িয়াখানায় চলতি বছর নতুন অতিথি হিসেবে আসছে শিশুদের প্রধান আকর্ষণ লম্বা গলার জিরাফ, ক্যাঙ্গারু, জলহস্তী, উট, দুম্বা, ওয়াইল্ড বিস্ট ইত্যাদি।

সূত্র জানায়, ১৯৮৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ৬ একর পাহাড়ি জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছিল চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। বর্তমানে এ চিড়িয়াখানার জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ২ একরে। একসময় বাঘশূন্য হয়ে পড়া এ চিড়িয়াখানায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদানি করা হয় একজোড়া রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সেগুলো বংশবৃদ্ধি করে এখন মোট বাঘের সংখ্যা ৬টিতে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে একটি সাদা বাঘ। একটি চার মাসের শাবকও আছে। তাই বাঘের জন্য দ্বিগুণ বড়, সাড়ে ৭ হাজার বর্গফুটের একটি খাঁচা তৈরি করা হয়েছে। সম্প্রসারিত এলাকায় নতুন করে পশু-পাখির জন্য খাঁচা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যেখানে স্থান দেওয়া হবে নতুন আমদানি করা পশু-পাখিকে।

২০১৫ সালের পর থেকে চিড়িয়াখানার আমূল পরিবর্তন শুরু হয়। যোগ করা হয়েছে বাঘ, সিংহ, হরিণসহ বিভিন্ন প্রাণী। গত প্রায় ছয় বছরে টিকিট বিক্রির অর্থে মোট ৫ কোটি ৭৪ লাখ ৪৯ হাজার ২৪৭ টাকার উন্নয়নকাজ করেছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনার পুরো সময়ে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। আগে চিড়িয়াখানাটি ৬ একর জায়গা নিয়ে করা হলেও আরও ৪ একর বাড়িয়ে নতুনরূপে সাজানোর কাজ করেছে। এর মধ্যে প্রায় ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছে ২ হাজার ফুট দৈর্ঘ্যের দৃষ্টিনন্দন দুটি সিঁড়ি, ২২ লাখ টাকায় নতুন করে প্রস্তুত করা হয়েছে একটি বার্ড জোন, তৈরি করা হয়েছে নতুন একটি কিডস জোন, প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন সম্প্রসারিত অংশে দেয়া হয়েছে সীমানা দেয়াল। এ অবকাঠামো উন্নয়নের অর্থায়ন এসেছে কেবল চিড়িয়াখানার টিকিট বিক্রির টাকা থেকে।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার চিকিৎসক ও ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা এখন অনেক বেশি সমৃদ্ধ, নান্দনিক। চিড়িয়াখানায় প্রচুর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে। কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতায় চিড়িয়াখানায় আশাতীত উন্নয়ন হয়েছে। অবকাঠামোগত নানা উন্নয়নের পাশাপাশি রয়েছে পশুপাখি সংগ্রহ এবং বংশ বিস্তারে সফলতা। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার উন্নয়নে আরো বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হবে।

জানা যায়, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় গত এক বছরে যুক্ত করা হয়েছে একটি বাঘ, একটি গয়াল, তিনটি চিত্রা হরিণ, একটি মায়া হরিণ, চারটি ময়ূর, ১০টি টিয়া, ২০টি ঘুঘু, ছয়টি শালিক, চারটি ককাটিয়েল, একটি ঘোড়া, দুটি সজারু, ইন্দোনেশিয়ার সাতটি মুরগি ও ২২টি অজগর সাপের বাচ্চা। বর্তমানে চিড়িয়াখানায় ৬৬টি প্রজাতির ৬২০টি পশুপাখি আছে। এছাড়া নতুন আনা প্রাণীদের জন্য কোয়ারেন্টাইন খাঁচার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশের একমাত্র নিজস্ব প্রযুক্তিতে উদ্ভাবিত ইনকিউবেটরের ব্যবস্থাও আছে এ চিড়িয়াখানায়।

পাঁচ বছর আগেও চট্টগ্রামের চিড়িয়াখানা অনেকটা নামমাত্র দৃশ্যমান ছিল। যেখানে ছিল না পর্যাপ্ত পশু-পাখি। খালি ছিল প্রায় খাঁচা। ছিল না সৌন্দর্যের ছোঁয়া। তাই চিড়িয়াখানায় হিসেবে এ চিড়িয়াখানাটি ততটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না দর্শনার্থীদের কাছে। কিন্তু ২০১৪ সালের আগে চিড়িয়াখানা আর বর্তমানের চিড়িয়াখানায় এ যেন আকাশ-পাতাল পার্থক্য। বেড়েছে দর্শনার্থীর ভিড়।

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিদিন দর্শনার্থীর ভিড় হচ্ছে। ছুটির দিন ৭ থেকে ১০ হাজার দর্শনার্থীও আসে। আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ২ থেকে ৩ হাজার দর্শনার্থী হয়।

পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা ব্যবসায়ী মো. জসিমউদ্দীন বলেন, আগের চেয়ে খুব সুন্দর হয়েছে চিড়িয়াখানা। আগেতো খাঁচাগুলো ফাঁকা ছিল। এটি এখন শিশুদের ঘুরার উপযুক্ত হয়ে উঠেছে। শুধু তিনিই নয়, পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন অনেকে। চিড়িয়াখানার সৌন্দর্যে মুগ্ধ দর্শনার্থী।

উল্লেখ, ফয়েজ লেকের পাশে সবুজে ঘেরা বনবীথির বেষ্টনীতে ১৯৮৯ সালে তৈরি করা হয় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। ৬ একর জায়গার ওপর বানর, সিংহ, হরিণ ও হনুমান এই চার প্রজাতির ১৬টি প্রাণী নিয়ে এ চিড়িয়াখানা যাত্রা শুরু করে।

১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক এম এ মান্নান এবং চট্টগ্রামের অন্যান্য অভিজাত ব্যক্তিবর্গ প্রাথমিকভাবে ফয়েজ লেকে চিত্তবিনোদন, শিক্ষা এবং গবেষণার উদ্দেশ্যে চিড়িয়াখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেন। পরবর্তিতে ১৯৮৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এই চিড়িয়াখানা সাধারণের জন্যে উন্মুক্ত করা হয়।

প্রথমদিকে এক টিকিটেই চিড়িয়াখানা এবং ফয়স লেকে প্রবেশের সুযোগ থাকলেও ১৯৯৫ সালে দর্শনার্থীদের স্বাচ্ছন্দ্যের পাশাপাশি বাড়তি লাভের বিষয়টি বিবেচনা করে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ দুইটি আলাদা গেটে পৃথক টিকিটের মাধ্যমে প্রবেশের ব্যবস্থা করে।

১৯৮৯ সালে চিড়িয়াখানা উদ্বোধনের সময় টিকিটের মূল্য ছিল ১ টাকা। পরবর্তীতে টিকিটের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে হয় ২ টাকা। এভাবে পশু-পাখির সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে টিকিটের দামও। বর্তমানে প্রতি টিকিটের দাম ৫০ টাকা।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত