ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

মাটি টানা ট্রাক্টরের নিচে পড়ে মারা যাচ্ছে মানুষ

  ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২১, ১৭:০৮

মাটি টানা ট্রাক্টরের নিচে পড়ে মারা যাচ্ছে মানুষ
ঝিনাইদহ জেলা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ মাটি টানা ট্রাক্টর।

একেতো অবৈধ, তারপর কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। সারা জেলা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ মাটি টানা ট্রাক্টর। এ পর্যন্ত ট্রাক্টরের নিচে পড়ে মারা গেছেন অন্তত ৩ জন। বহু আহত হওয়ার খবর রয়েছে।

শনিবারও মহিদুল নামে এক ব্যক্তি মাটি টানা ট্রাক্টরের নিচে পড়ে নিহত হয়েছেন।

এ নিয়ে ঝিনাইদহ ট্রাফিক পুলিশের কোনো মাথা ব্যথা নেই। নেই প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা। আইনের প্রয়োগ না থাকায় মনে হচ্ছে দেশটা মগেরমুল্লুকে পরিণত হয়েছে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, সারা জেলায় শতাধিক মাটি টানা ট্রাক্টর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা ও যশোর থেকে ভাড়ায় নিয়ে আসা হচ্ছে এসব মরণঘাতক অবৈধ যানবাহন।

ইটভাটার কাজে ব্যবহৃত এসব ট্রাক্টরগুলোর নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় শিশু ও কিশোররা এসব ট্রাক্টর চালাচ্ছে। তাদের কোনো লাইসেন্স নেই। নেই দক্ষভাবে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা। বেপরোয়া গতিতে ট্রাক্টরগুলো গ্রামীণ রাস্তাঘাট দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সারা জেলার বৈধ অবৈধ ইটভাটার মাটি টানা হচ্ছে এই ট্রাক্টর দিয়ে। ফলে ৬ উপজেলায় এলজিইডির গ্রামীণ রাস্তা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পাকা রাস্তায় মাটি পড়ে বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।

এদিকে রাস্তা রক্ষার জন্য ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর ১৯৫২ সালের বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন এ্যাক্টের ৩ ধারা মতে একটি পরিপত্র জারী করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের (উন্নয়ন-২) উপ-সচিব জেসমিন পারভিন। ওই আইনের দণ্ডবিধির ১৮৬০ এর ধারা ৪৩১ মোতাবেক সরকারি রাস্তার ক্ষতি সাধন ফৌজদারি দণ্ডনীয় অপরাধ। এই আইনে ৫ বছরের কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। ফলে সরকারি রাস্তার ক্ষতি সাধন হয় এমন কাজ করা যাবে না। অথচ রহস্যজনক কারণে উদাসীন জেলা প্রশাসন।

ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক সালাহউদ্দীন জানান, ইটভাটার মাটি টানা ট্রাক্টরের উপরে তাম্বু ফেলে মাটি টানার কথা। যাতে মাটি পাকা রাস্তার উপর না পড়ে। তিনি বলেন বিষয়টি জেলা ইটভাটা মালিক সমিতিকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিলো। তারা যদি ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন তবে আমরা আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো।

বিষয়টি নিয়ে জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মাহমুদুল ইসলাম ফোটন জানান, সব ভাটা মালিকদের এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো কিন্তু তারা মানছে না। তিনি বলেন, আগে কিন্তু রাস্তায় মাটি পড়তো না। কারণ তখন ওভারলোড করতো না। এখন অধিক মুনাফা করার জন্য ড্রাইভাররা ওভারলোড দিচ্ছে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, চাকলাপাড়া থেকে হরিণাকুন্ডু সড়ক এবং ঝিনাইদহ থেক চুয়াডাঙ্গা সড়ক বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া কালীগঞ্জের বারোবাজার, মহেশপুর, শৈলকূপা, কোটচাঁদপুর ও হরিণাকুন্ডুর গ্রামীণ রাস্তাগুলো চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ নেই। নেই ভ্রাম্যমাণ আদালত। ফলে দিনকে দিন পথচারীদের কাছে সড়ক মহাসড়ক অসহনীয় হয়ে উঠছে। এদিকে শনিবার ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের আড়–মুখী গ্রামের স্কুলপাড়ায় মাটি টানা ট্রাক্টরের চাপায় মহিদুল বিশ্বাস (৫৫) নামের এক কৃষক নিহত হন। মহিদুল বিশ্বাস সদর উপজেলার আড়মুখী গ্রামের হুরমত বিশ্বাসের ছেলে।

ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান খবরের সত্যতা স্বীকার করেন। এর আগে মহেশপুর ও হরিণাকুন্ডুর তৈলটুপি নামক স্থানে মাটি টানা পরিবহনের ধাক্কায় দুইজন নিহত হয়েছিলেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত