ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

মাসের টাকা সপ্তাহেই সাবাড়

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২১, ১৫:০৭

মাসের টাকা সপ্তাহেই সাবাড়
আজ দ্বিতীয় দিনের মতো লকডাউন চলছে রাজধানীতে। ছবি নিজস্ব

মহামারি করোনা সংক্রমণ রোধে দেশজুড়ে গতকাল সোমবার থেকে সাত দিনের লকডাউন চলছে। আজ দ্বিতীয় দিনের শুরুটাও হয় গতকালের মতো অফিসগামীদের ভোগান্তি দিয়ে। সরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খোলা আছে। এদিকে গণপরিবহনও বন্ধ। এতে রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে অফিসগামী মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

মিরপুর ৬-এর বাসা থেকে কলাবাগান রওনা দেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মহসিন আলী। এই পথটুকু যেতে তার খরচ হয় ২৫ টাকা। আজ সেখানে তার খরচ হয়েছে ১৭০ টাকা। তিনি বলেন, ‘গতকালও কষ্ট করে অফিসে এসেছি আবার ফিরেছি। গতকাল খরচ হয়েছে ২২০ টাকা।’

‘এমনিতেই লকডাউনের কারণে বিপাকে পড়েছি। তার ওপড়ে আবার অফিস যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় মাসের খরচের টাকা সপ্তাহেই সাবাড় হয়ে যাবে।’

সকালে মোহাম্মদপুরের আজিজ মহল্লা থেকে ধানমন্ডি ৭ নম্বরের কর্মস্থলে যান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মোহাম্মদ রাইহান খান। বাসে তার খরচ হতো ১৫ টাকা। আজ সকালে তিনি ৮০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে অফিসে যান।

তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে তিনি বলেন, ‘অফিস খোলা রেখেই গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখার মতো অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের ফলে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। গাড়ি চলছে না। তাই বাধ্য হয়েই রিকশায় যেতে হচ্ছে। কষ্ট যত আমাদের মতো কর্মজীবী মানুষদের।’

রিকশার চাহিদা বেশি থাকায় রিকশাচালকরা ভাড়া বেশি নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রাইহান খানের। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন এভাবে বাড়তি ভাড়া দেয়া আমাদের মতো মধ্যবিত্তের পক্ষে সম্ভব না। আবার অফিসও খোলা, যেতেই হবে। এতো বেশি ভাড়া দিয়ে কিভাবে যাবো? আমরা অনেক বিপাকে আছি।’

তবে দ্বিতীয় দিনের লকডাউন কিছুটা কঠোর হলেও শহরজুড়ে চালু আছে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা। ব্যক্তিগত গাড়ির উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। রাজধানীর মূল সড়কগুলোয় এসব বাহনের চাপ সকাল থেকেই দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আরো বেড়েছে।

এদিকে বেশিরভাগ রিকশাচালকই অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের মতে, গণপরিবহন বন্ধ থাকার পরও যাত্রীদের যেভাবে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিচ্ছেন তাতে একটু বেশি ভাড়াই ন্যায্য।

কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডে বাংলাদেশ জার্নালের সঙ্গে কথা হয় রিকশাচালক নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সকাল ৭টা থেকে রিকশা চালাচ্ছি। যাত্রী পেয়েছি ১০ জন। জমা ও দৈনিক খরচ সকালেই উঠে গেছে।’

বেশি ভাড়া নেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমরা লকডাউনে ঢাকায় থেকে মানুষের উপকার করছি। আর এই অবস্থায় সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। একটু বেশি টাকা না দিলে আমাদের সংসার চলবে কীভাবে?’

রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত মোড় সায়েন্সল্যাব। বেলা বাড়তেই এই এলাকায় মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। প্রচুর জনসমাগম হচ্ছে, মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মানা ও চলাচলে নিয়ন্ত্রণ ঠেকাতে সেখানে অভিযান চালাচ্ছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৩)। ভ্রাম্যমাণ আদালতকে দেখেই মাস্ক পরে নিতে দেখা যায় অনেককে। কেউ কেউ তো মাস্ক ছাড়াই ঘুরছিলেন।

এ সময় কলেজ শিক্ষার্থী ইউসুফ খান মাস্ক না পরেই এলিফেন্ট রোড যাচ্ছিলেন ভাইয়ের দোকানে। এ সময় তাকে দাঁড় করান। মাস্ক কেন আনেনি জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, ‘তাড়াহুড়ো করে বের হতে গিয়ে মাস্ক পরতে ভুলে গেছি।’ তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন র‌্যাব-৩ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, জরিমানা মূল উদ্দেশ্য নয়। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সচেতনতা বাড়ানো। মানুষ মাস্কের বিষয়ে ঠুনকো অজুহাত দিচ্ছেন। অনেকেই কম গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্যও বের হচ্ছেন। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় জরিমানার পাশাপাশি সতর্ক করা, অসচ্ছল মানুষের মধ্যে বিনা মূল্যে মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে।

লকডাউনের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশ জার্নালের পক্ষ থেকে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি হোটেলে কাজ করেন সেলিম হোসেন। বন্ধ দোকানের সামনে চোখেমুখে শঙ্কা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। বললেন, ‘কিছুদিন আগে ঢাকায় এসে এখানে কাজ নিয়েছি। সামনে রমজান ও ঈদ। কিছু টাকা উপার্জন করে পরিবারের কাছে ফিরতে চেয়েছিলাম। লকডাউনের কারণে এখন কিছুই মাথায় আসছে না। সংসার চালাব কীভাবে?’

গাবতলী বাস টার্মিনালের ব্যবসায়ী মকবুল বলেন, ‘গতবছর লকডাউনের কারণে ১০ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। এবার পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। তবে সরকারের উচিত রমজানের আগে লকডাউন শেষ করা।’

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত