ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

স্কুলে না গিয়েও ৯৬ মাস ধরে বেতন নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতার ভাই!

  সিরাজগঞ্জ প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৪২

স্কুলে না গিয়েও ৯৬ মাস ধরে বেতন নিচ্ছেন শিক্ষক!
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের কৈজুরি ইউনিয়নের কৈজুরি উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখার সহকারী শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।

দীর্ঘ ৮ বছর ধরে বিদ্যালয়ে না গিয়েও নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের কৈজুরি ইউনিয়নের কৈজুরি উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখার সহকারী শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের (৪৫) বিরুদ্ধে।

তিনি ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি, কৈজুরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামের ছোট ভাই। আর এ সুবাদেই জাহাঙ্গীর হোসেন স্কুলে উপস্থিত না থেকেও নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন।

আর এমন অভিযোগ তুলে এলাকাবাসীর পক্ষে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।

অভিযোগ মতে, শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন রাজধানী ঢাকার মিরপুর-১ নম্বরের শাহআলীবাগ কলওয়ালাপাড়ায় গার্মেন্টস সুতার রঙের কারখানার ব্যবসা করেন। কাগজে-কলমে বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় হাজিরা ঠিক থাকলেও তিনি গত আট বছরে কোনোদিনই স্কুলে উপস্থিত ছিলেন না। ক্লাস রুটিনেও তার নাম নেই।

এমন পরিস্থিতিতে কৈজুরি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. হারুনার রশিদ সম্প্রতি ‘এলাকাবাসীর পক্ষে ও জনস্বার্থে’ জাহাঙ্গীর হোসেনের ‘অনিয়ম-দুর্নীতির’ বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও দুদকসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার সকালে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. শামসুজ্জোহা, উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুদ হোসেন ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন কৈজুরি উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজে গিয়ে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেন।

উভয় পক্ষের দীর্ঘ শুনানি শেষে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. শামসুজ্জোহা উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, এটা প্রাথমিক তদন্ত। এ বিষয়ে আরো তদন্তের প্রয়োজন। তাই ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি আরো অধিকতর তদন্ত করবে। তারপর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

জাহাঙ্গীর হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী মো. হারুনার রশিদ বলেন, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জীবনে কখনোই বিদ্যালয়ে গিয়ে ছাত্রদের ক্লাস নেননি। ক্লাস রুটিনে তার নামও নেই। তিনি ঢাকার মিরপুর-১ নম্বরের শাহআলীবাগ কলওয়ালাপাড়ার ব্লক-এফ-এর ১/এফ৩/১৪ নম্বরে মা টুয়েস্টিং অ্যান্ড ডাইং নামে গার্মেন্টস সুতার রঙের একটি কারখানার ব্যবসা করেন। কৈজুরি উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ তার আপন বড় ভাই আব্দুল খালেক আর সভাপতি সেজ ভাই সাইফুল ইসলাম।

এছাড়া তার মেজ ভাই আব্দুল মালেক একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক। ফলে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি তাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ঢাকায় অবস্থান করে তার ব্যবসা পরিচালনা করেন।

হারুনার রশিদ আরো বলেন, জাহাঙ্গীর হোসেন স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে হাজিরা খাতায় নিজেকে উপস্থিত দেখিয়ে দীর্ঘ ৮ বছর ধরে নিয়মিত বেতনভাতা তুলছেন। আমি এর প্রতিকার ও সুবিচার কামনা করছি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কৈজুরি উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখার সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ঢাকার ওই ব্যবসা আমার নয়। ওই ব্যবসাটি আমার ৪র্থ ভাই পূর্ব চরকৈজুরি নতুনপাড়া মোর্শারফিয়া কওমিয়া মাদ্রাসার সুপার মওলানা মো. মোস্তফা কামালের। আমি মাঝে মধ্যে সেখানে গিয়ে দেখাশোনা করি।

তিনি আরো বলেন, চাকরির পাশাপাশি অনেকেই তো ব্যবসা করেন। আমি করলে দোষ কোথায়! আমার ভাইদের সঙ্গে অভিযোগকারীর পূর্ববিরোধ রয়েছে। এ বিরোধের জের ধরে আমার বিরুদ্ধে তিনি মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ করেছেন।

একই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর হোসেনের ভাই কৈজুরি উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে এখনো তদন্ত শেষ হয়নি। তাই এ সম্পর্কে আগেই কিছু বলা যাবে না।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত