ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

মাছ চাষে স্বাবলম্বী শাওন, বছরে আয় ১৬ লাখ টাকা

  কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৪৮

মাছ চাষে স্বাবলম্বী শাওন, বছরে আয় ১৬ লাখ টাকা
মাছ চাষে স্বাবলম্বী শাওন।

শাওন খান এখন একজন সফল মাছ চাষি। জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অজ পাড়া গাঁয়ে তার বাড়ি। গ্রামের স্কুলে তার পড়ালেখার হাতেখড়ি। গ্রামের স্কুল খেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে ভর্তি হয় আমলা সদরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে তার পড়ালেখায় বাধাগ্রস্ত হয়। বেশ কিছুদিন সে পড়ালেখার বাইরে ছিলো।

তবে সপ্তম শ্রেণিতে উঠার পর শাওন পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়। পরে আবার পড়াশোনা শুরু করেন। ২০১৫ সালে আমলা সরকারি কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। শুরু হয় বেকার জীবন যাপন। কিন্তু নিজের বুদ্ধি, মেধা ও সততাকে কাজে লাগিয়ে বেশি দিন তাকে বেকার হয়ে থাকতে হয়নি। বর্তমানে শাওন খান উপজেলার একজন সফল মাছ চাষি।

বলছিলাম কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের কুশাবাড়িয়া-চরপাড়া গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে শাওন খান এর কথা।

শাওন খান এখন ৬০ বিঘা পুকুরে মাছচাষ করছেন। পৌত্রিক সূত্রে বাবার ১০ বিঘা জমি ছিলো। সেই সাথে মাছ বিক্রির টাকায় আরো ১০ বিঘা জমি কিনেছেন, বাড়ি বানিয়েছেন এবং কিনেছেন একটি মোটর সাইকেল। মাছচাষ করে তিনি লাখপতি হয়েছেন। বর্তমানে ছেলেটির মাসিক আয় দেড় লাখ টাকা।

শাওন খান এখন ৬০ বিঘা পুকুরে মাছচাষ করছেন।

সফল মাছ চাষি শাওন খান বলেন, যখন বেকার জীবন যাপন করছি। ঠিক তখনই এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারি মিরপুর উপজেলায় মাছ চাষের উপর প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। সেই মোতাবেক উপজেলা মৎস্য অফিসে মাছ চাষের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। তারপর থেকে আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তারপর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সহযোগিতায় এক বিঘা পুকুরে মাছচাষ শুরু করি।

মাছচাষ করে এখন স্বাবলম্বী শাওন। কিনেছেন ১০ বিঘা জমি। বাড়ি বানিয়েছেন এবং কিনেছেন মোটর সাইকেল। বর্তমানে বছরে তার আয় ৬৫-৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা খরচ হয়। খরচ বাদ দিয়ে বছরে তার লাভ থাকে ১৫-১৬ লাখ টাকা।

শাওন খান আরো বলেন, বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ৬০ বিঘা পুকুরে বিভিন্ন জাতের মাছচাষ করছেন। তারমধ্যে মধ্যে নিজের ২০ বিঘা পুকুর। আর গ্রামের বিভিন্ন মানুষের কাছে থেকে ৪০ বিঘা পুকুর ইজারা নিয়েছেন। প্রতি বিঘায় বছরে ২০ হাজার টাকা ইজারা দেন। শাওনের পুকুরে রুই-কাতলা, পাবদা, শিং, মৃগেল, সরপুঁটি, লাইলোটিকা ও সিলভার কার্প রয়েছে।

শাওন খানের পিতা গিয়াস উদ্দিন বলেন, উপজেলা মৎস্য অফিসে প্রশিক্ষণ নেয়ার পরই মাছচাষে উদ্বুদ্ধ হয় শাওন। ২০১৫ সালে আমার ও মৎস্য কর্মকর্তার সহযোগিতা এবং পরামর্শে বাড়ির পাশের এক বিঘা পুকুরে মাছ চাষ শুরু করে। বছর শেষে ভালো লাভ হয়। ২০১৬ সালে মৎস্য অফিস থেকে লোন নিয়ে তিনটি পুকুর ইজারা নিয়ে মাছচাষ করে। ২০১৭ সালে আরো পাঁচটি পুকুরে নেয়। বর্তমানে ৬০ বিঘা পুকুরে মাছচাষ করছে।

তিনি আরো বলেন, শাওন আর চাকরির পিছনে ছুটতে চাই না। বর্তমানে তার মাছের খামারে অনেকেরই কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে শাওনকে দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবক মাছ চাষ শুরু করেছেন। অনেকেই শাওনের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন।

শাওনের মাছের খামারের কর্মী আইয়ুব আলী, আশিকুল ও মনি বলেন, শাওন খুব কর্মঠ ছেলে। রাতদিন পরিশ্রম করে। শাওন চাকরির পিছনে না ছুটে মাছ চাষ শুরু করে। এখন তার খামারে আমরা ১১ জন কাজ করি। মাছ চাষে শাওনের ভাগ্য বদলে গেছে, আমাদেরও কর্মসংস্থান হয়েছে।

মিরপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রাজিউল ইসলাম বলেন, শাওন মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আমাদের অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন তিনি। ছয় বছরে লাখপতি হয়েছেন। বর্তমানে ৬০ বিঘা পুকুরে মাছ চাষ করেন। মৎস্য অফিস থেকে শাওনকে সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করা হয়।

মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল আরেফিন বলেন, শাওন খান মাছ চাষে এ উপজেলার মডেল মাছ চাষি। সে অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। শাওনের মতো শিক্ষিত বেকার যুবকরা যদি কেউ মাছ চাষ করতে চাই। তাদের উপজেলা মৎস্য অফিস খেকে সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।

কুষ্টিয়া জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাজদার রহমান বলেন, বর্তমানে কুষ্টিয়ার যুবকরা মাছ চাষে ঝুঁকে পড়েছে। ইতোমধ্যে অনেক বেকার যুবক মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। দিনদিন মাছ চাষে বেকার যুবকদের সংখ্যা বাড়ছে। যারা মাছ চাষ করছেন, তাদের জেলা ও উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত