ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

অন্ধত্ব দমিয়ে রাখতে পারেনি আবুল হোসেনকে

  মনোহরদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২১, ২০:০৫

অন্ধত্ব দমিয়ে রাখতে পারেনি আবুল হোসেনকে
আবুল হোসেন

শৈশব থেকে অন্ধ। তবে অন্ধত্বের কাছে পরাজিত নন আবুল হোসেন। নরসিংদী জেলার মনোহরদীর একটি বাজারে দোকান খুলে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সামগ্রীর নিখুঁত মেরামতের কাজ করে সংসার চলছে তার। এভাবে জীবন যাপন মন্দ নয় বলে জানালেন অন্ধ মেকার আবুল হোসেনের।

মনোহরদী উপজেলার উত্তর বারুদিয়া গ্রামের সাজাহানের ছেলে আবুুল হোসেন (৩২)। শৈশবের এক জ্বরে চোখের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যায় তার। কতো তাবিজ-কবজ, কতো ডাক্তার-কববিরাজ দেখেছে, কিছুতেই কিছু হয়নি আর। অবশেষে সে অন্ধত্ব মেনে নিয়েই বড়ো হয়ে জীবনযুদ্ধে নেমে পড়েন।

ছোটবেলা থেকেই যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ নিয়ে খেলাধুলার অভ্যাস ছিলো তার। এ থেকে কিছু চমকপ্রদ কর্মকাণ্ডও ঘটে তার জীবনে।

সোমবার সরেজমিনে বারুদিয়া ভূইয়া বাজারে মেরামতির দোকানে বসে আলাপ হচ্ছিলো আবুল হোসেনের সঙ্গে। দোকানের আনাচে কানাচে থাকা বয়ামেরে ভেতর থেকে চমকপ্রদ দক্ষতায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্ক্রুু-নাট বের করে সুনিপুণভাবে কাজ করতে দেখা যায় আবুল হোসেনকে।

কাদামাটি দিয়ে রেডিওর খোলস বানিয়ে তার ভেতর যন্ত্রাংশ জুড়ে দিয়ে গান বাজিয়ে রীতিমতো সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এসব জানালেন দোকানে বসে থাকা বারুদিয়া পার্শ্ববর্তী রথেরকান্দা গ্রামের বাবুল (৪২)।

ভূইয়া বাজারের ব্যবসায়ী আক্রাম হোসেন সুরুজ (৫০) জানান, কাঁচা কলাগাছের উপকরণ দিয়ে ছোটবেলায় মাইক বানিয়ে তা বাজিয়ে এলাকার সবাইকে তাজ্জব বানিয়ে দিয়েছিলেন এই আবুল হোসেন। এসব করে করে একসময় পেটের তাগিদে তিনি ইলেক্ট্রিক ও ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র মেরামতি কাজের দোকান খুলে বসেন বারুদিয়া ভূইয়ার বাজারে।

জানা যায়, এ বাজারে আগে কোনো মেকার ছিলো না। নরসিংদী থেকে খুচরো পার্টস কিনে এনে তা জুড়ে দিয়ে নানারকম সামগ্রীও তৈরি করে বিক্রি শুরু করেন আবুল হোসেন। তার মধ্যে রয়েছে সাউন্ড বক্স, এমপ্লিফায়ারসহ নানা কিছু।

আলাপ প্রসঙ্গে তিনি জানান, তিনি দোকানে মেরামতি করে থাকেন ইলেক্ট্রিক ফ্যান, লাইট, চার্জারসহ ইলেক্ট্রনিক সবকিছুই। তার নিজের দোকানে ব্যবহৃত একটি ফ্যান দেখিয়ে জানালেন, ভাঙ্গারি দোকান থেকে মাত্র দুশ' টাকার ফেলে দেয়া ফ্যান কিনে নিজ হাতে মেরামত করে তা দিয়ে চমৎকারভাবে চলে যাচ্ছে তার।

স্থানীয় সফু (৪৩) জানান, অন্ধ আবুল তার ভাইয়ের টিনশেড একটি বিল্ডিংয়ের পুরো ইলেক্ট্রিক ওয়েরিংয়ের কাজ করে দিয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রী ও এক সন্তানসহ তিনজনের সংসার তার। এই মেরামতি কাজের মাধ্যমে দোকান ভাড়াসহ আনুষাঙ্গিক ব্যয় নির্বাহ শেষে সংসার মোটামুটি ভালোই চলছে তার।

তবে পর্যাপ্ত পুঁজির যোগান পেলে দোকানকে আরো সমৃদ্ধশালী করতে পারতেন বলে কথা প্রসঙ্গে জানান অন্ধ মেকার আবুল হোসেন। বেশি করে খুচরা যন্ত্রাংশ কিনে নানা মালামাল তৈরি করে আরো ভালো করে দোকান জমাতে পারতেন তিনি। এতে সংসারে আরো স্বচ্ছলতা আনতে পারতেন তিনি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত