ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

শিবালয়ে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণের অভিযোগ

  মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২১, ২১:১২

শিবালয়ে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণের অভিযোগ
ছবি- প্রতিনিধি

মানিকগঞ্জের শিবালয়ে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ভূমিহীনদের মাঝে দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের এসব ঘর নির্মাণে সার্বিক তদারকি করছে খোদ শিবালয় উপজেলা প্রশাসন। নির্মাণসামগ্রী নিম্নমানের হওয়ার কথা জিজ্ঞাসা করতেই খতিয়ে দেখার আশ্বাসও দিয়েছেন শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

শিবালয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প আশ্রয়ণ-২ এর আওতায় উপজেলায় ৬১টি ভূমিহীন পরিবারকে দুই শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে একটি সেমিপাকা গৃহনির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২১টি ঘর নির্মাণ শেষে সুবিধাভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। যার প্রতিটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা। ২য় ধাপে নির্মাণাধীন রয়েছে ৪০টি ঘর। যার প্রতিটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিবালয় উপজেলায় প্রায় ১ কোটি ১২ লক্ষ টাকার এই কাজের দেখভাল করছে খোদ উপজেলা প্রশাসন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের ধুসর গ্রামে নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ২১টি ঘর প্রায় দুই মাস আগে উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখানে ২১টি ঘরের মধ্যে মাত্র ৭ থেকে ৮ জন উপকারভোগী সেই ঘরে উঠেছে। বাকি ঘরগুলোতে তালা ঝুলছে।

অন্যদিকে, তেওতা ইউনিয়নে নির্মিত হচ্ছে ৪০টি ঘর। সেখানে দুর্যোগ সহনীয় এসব ঘরের নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে। এসব ঘরে মেহগুনি কাঠের সাথে মাঝে মাঝেই কড়ই কাঠ ও কাঁচা মেহগুনি কাঠের মিশ্রণ রয়েছে। এক নাম্বার ইটের ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে নিম্নমানের ইট।

এলাকাবাসীদের মধ্যে অনেকেই বলেন, সরকারি এসব ঘরে যে ইট আর কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো খুব একটা ভালো না। কয়েক বছরের মধ্যেই এগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। সরকার তো ভালো জিনিষই দেয়। কিন্ত যারা ঘর বানায় তারাই দুই নাম্বারি করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপকারভোগীদের তালিকায় থাকা কয়েকজন বলেন, আমাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘর বানিয়ে দিতেছে। যে ঘর হবে আমাদের মাথা গোঁজার ঠাই। কিন্ত ঘর বানানোর দায়িত্বে যারা আছে, তারা নিম্নমানের ইট ও কাঠ দিয়ে এই ঘর বানাচ্ছে।

‘কিছু বললে যদি তালিকা থেকে নাম কেটে দেয় এই ভয়ে কিছু বলতে পারি না। যেভাবে কাজ করা হচ্ছে, তাতে মনে হয় এসব ঘর বেশিদিন টিকবে না।’

ঘর বুঝে পাওয়া একজন উপকারভোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমি কয়েকদিন আগে এই ঘরে উঠছি। মানুষজন বলে এই ঘরের ইট আর কাঠ তেমন ভালো না। সেদিন ঝড় হইছে। সেসময় আমি খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম। অল্প কিছুদিনেই যদি এই ঘর নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে আমাদের অবস্থা তো আগে যা ছিল তাই হয়ে যাবে।

ঘর নির্মাণ প্রকল্পের মিস্ত্রীরা বলেন, আমাদের যা এনে দেয়, আমরা তা দিয়েই কাজ করি। এখানে অল্প কিছু নিম্নমানের ইট আর কাঠ আছে। এতে আমাদের কিছু করার নেই। তবে এখানকার বালু মোটামুটি ভালো। পলেস্তার অনেক ভালো হচ্ছে।

নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের কারণ হিসেবে ঘর নির্মাণ প্রকল্পের সাইট ম্যানেজার কামরুল ইসলাম বলেন, এখানে যত মালামাল ব্যবহার করা হচ্ছে, তার সবই ইউএনও স্যার সাপ্লাই দেয়। কোনো কিছু দরকার হলেই ইউএনও স্যার ফোন দিয়ে সেটার ব্যবস্থা করেন। ধানের মধ্যে যেমন চিটা থাকে, তেমনি ভালো মালপত্রের মধ্যে দুয়েকটা খারাপ থাকতেই পারে। সাপ্লাইয়াররা কিছু কিছু দুই নাম্বার ইট আর কড়ই কাঠ মিক্সড করে দিয়েছে। এতে আমাদের কিছু করার নেই। উনারা যেসব মাল এনে দেবে, আমাদের সেটা দিয়েই কাজ করতে হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুদেব কৃষ্ণ বলেন, প্রকল্পের নকশা ও প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। আমার জানামতে ভালো মানের নির্মাণসামগ্রী দিয়েই কাজ হচ্ছে। কোথাও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী থাকলে সরেজমিনে দেখে সেগুলো পাল্টানো হবে।

এ প্রসঙ্গে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বি এম রুহুল আমিন রিমন বলেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানেই এসব ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে আপনি যেহেতু বললেন নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে, বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখবো।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত