ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

সিংগাইরে সমবায় আইন না মেনেই চলছে আমানত আদায়

  মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২১, ২১:৪৩

সিংগাইরে সমবায় আইন না মেনেই চলছে আমানত আদায়

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে সমবায় আইন উপেক্ষা করে সমবায় সমিতির নামে চালানো হচ্ছে অবৈধ ঋণ কার্যক্রম। উপজেলার নিউ দৃষ্টি সঞ্চয় ঋণদান সমবায় সমিতি, দৃষ্টি সঞ্চয় ঋণদান সমবায় সমিতি, পল্লীসেবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি ও জন উন্নয়ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির পরিচালক বাহালুল বিশ্বাস সমবায় সমিতির আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধভাবে সঞ্চয় ও ঋণদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে অভিযোগ, সমবায় কর্মকর্তারা তেমন কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে না। দায়সারা তদন্ত করে ব্যবস্থাপনা কমিটিকে সন্তোষজনক জবাব দিতে জেলা সমবায় অফিস থেকে সমিতিগুলোর পরিচালক বরাবর চিঠি দেয়া হয়। এরপরও কোনো কিছুতেই তোয়াক্কা না করে অব্যাহত আছে বাহালুল বিশ্বাসের কার্যক্রম।

সিংগাইর উপজেলা সমবায় অফিসের তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উপজেলা কার্যালয় থেকে ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট নিউ দৃষ্টি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নিবন্ধিত হয়, ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দৃষ্টি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি এবং ২০১৬ সালে ৯ জুলাই পল্লীসেবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লি., ২০১৬ সালের ১৩ জুলাই জন উন্নয়ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে রেজিস্ট্রেসন নেন বাহালুল বিশ্বাস।

নিবন্ধিত হওয়ার পর থেকে এনজিওগুলো সমবায় আইন উপেক্ষা করে গ্রাহকদের মাসিক সঞ্চয়ের ওপর ৮ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়া হয়। তবে কোনো গ্রাহক ৫ বছরের বেশি সময়ের জন্য মাসিক সঞ্চয় জমা রাখলে তাকে ১৩ শতাংশ হারে লভ্যাংশ প্রদান করে সমিতিগুলো। গ্রাহকদের সাপ্তাহিক সঞ্চয়ের ৫ শভাংশ এবং দীর্ঘ মেয়াদী সঞ্চয়ের লভ্যাংশের ২৫ শতাংশ। যা নিবন্ধক, সমবায় অধিদপ্তর, ঢাকা ব্যাংক বীমা শাখা ২০১৩ সালের ১৪ এপ্রিল জারিকৃত এক পরিপত্র-০২ নং শর্তের পরিপন্থী।

সমবায় সমিতি আইন ২০০১ (সংশোধিত/২০০২ ও ১৩) এর ২৬ ধারা এবং বিধিমালা-২০০৪ এর ৭০-৭৫ বিধি যথাযথভাবে অনুসরণ না করে সদস্যদের মধ্যে ঋণ কার্যক্রম চালু আছে। দাদনকৃত ঋণের ওপর ১৫% সুদে ঋণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। গ্রাহকদেও শেয়ার রেজিস্ট্রার থাকলেও সঞ্চয় ও ঋণ রেজিস্ট্রার দেখা যায়নি। সঞ্চয় ও ঋণ আদায়-প্রদানের ক্ষেত্রে দৈনিক শিট ব্যবহার করা হয়। ক্যাশ খাতা হালনাগাদ নেই।

তদন্ত প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়, অডিট সংশোধনী দাখিল না করে ব্যবস্থাপনা কমিটি আইনের ৪৭ ধারা লঙ্ঘন করেছে। সমিতির নিবন্ধিত উপ-আইনের কপি সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করেনি। সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভা না করায় সমবায় সমিতির আইন ২০০১ (সংশোধিত ২০০২ ও ২০১৩) এর ১৭ ধারা লঙ্ঘন করা হয়। ৬৭ বিধি অনুয়ায়ী তারল্য সংরক্ষণ করা হয়নি। সমিতির নিয়োগকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরির নিয়োগবিধি প্রণয়ন করা হয়নি।

সমবায় সমিতির বিধিমালা/০৪ এর ৬২ (গ) ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা কমিটি রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ করা হয়নি। এছাড়া সমিতিতে সদস্য ভর্তি ও বাতিলের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা কমিটি সভার সিদ্ধান্ত ও সঠিক নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি।

সমবায় সমিতি বিধিমালা/২০০৪ এর ৪২ (২) বিধি অনুযায়ী প্রতি মাসে ব্যবস্থাপনা কমিটির একটি করে সভা হয়নি। সমিতির ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সমবায় সমিতি আইনের ২৬ ধারা এবং সমবায় সমিতি বিধিমালা/০৪ এর ৭০ হতে ৭৫ বিধি অনুসরণ করা হয়নি। ৫ লক্ষ টাকার উর্ধ্বে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিবন্ধক মহোদয়ের অনুমোদন গ্রহণ করা হয়নি। মেয়াদী সঞ্চয়-আমানত নেয়া হয়েছে।

এছাড়া সমিতির নামে এখন পর্যন্ত ব্যাংক হিসাব খোলা হয়নি। সদস্যদের শেয়ার সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়নি। সমিতিতে ঋণ ও সঞ্চয়ের রেজিস্ট্রার নেই, যা সমবায় সমিতি আইন ও বিধিমালা এবং সমবায় অধিদপ্তর থেকে জারিকৃত সার্কুলার অনুযায়ী করা হচ্ছে না।

এ বিষয়ে সমিতিগুলোর পরিচালক বাহালুল বিশ্বাস বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলবো না। তবে তার মামা (অন্য একটি এনজিও’র ম্যানেজার) হারুনের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।

এ বিষয়ে জেলা সমবায় কর্মকর্তা মোঃ সুমন আহমেদ বলেন, সমবায় অফিসের নিয়ম অনুযায়ী উল্লেখিত চারটি সমিতির পরিচালককে শোকজ করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত