ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

সেই এসআই হাসানের বাবাকে অটোরিকশা দিল পুলিশ

  পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২১, ১০:০০  
আপডেট :
 ১৩ এপ্রিল ২০২১, ১১:৩৮

সেই এসআই হাসানের বাবাকে অটোরিকশা দিল পুলিশ
ছবি- সংগৃহীত

পাবনার আতাইকুলা থানায় কর্মরত অকালপ্রয়াত উপ- পরিদর্শক (এসআই) হাসান আলীর বাবা আব্দুল জব্বার বিশ্বাসকে নগদ টাকা এবং একটি অটোরিকশা দিয়েছে পাবনা জেলা পুলিশ।

সোমবার (১৩ এপ্রিল) পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খাঁন প্রয়াত হাসানের বাবার হাতে গাড়ির চাবি ও নগদ টাকা তুলে দেন। জেলা পুলিশের উদ্যোগে হাসানের সহকর্মীরা ব্যক্তিগত টাকা দিয়ে গাড়িটি কিনে দেন।

পাবনা পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খাঁন জানান, হাসান পাবনার আতাইকুলা থানায় কর্মরত ছিলেন। সেখানে তিনি গত ২০ মার্চ দিবাগত রাতে আত্নহত্যা করেন। একমাত্র কর্মক্ষম ছেলেকে হারিয়ে যশোর কেশবপুরের বালিয়াডাঙ্গী গ্রামের হাসান আলীর বাবা আব্দুল জব্বার বিশ্বাস পরিবারসহ আর্থিক অনটনে পড়ে যান। জব্বার বিশ্বাস ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন।

সাবেক সহকর্মীর পরিবারটির দুর্দশা কিছুটা লাঘব করার জন্য তিনি জেলা পুলিশ সদস্যদের এগিয়ে আসার জন্য মানবিক আবেদন জানান। এতে অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা হিসেবে জেলা পুলিশের সদস্যরা কিছু- কিছু করে অর্থদান করেন। সেই টাকায় কিনে দেয়া হয় অটোভ্যান। এছাড়া পাবনা পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকেও দেয়া হয় নগদ টাকা।

পাবনা পুলিশ সুপারের আমন্ত্রণে প্রয়াত হাসানের বাবা জব্বার বিশ্বাস সোমবার (১২ এপ্রিল) পাবনায় যান। পুলিশ সুপার কার্যালয় প্রাঙ্গণে জব্বার বিশ্বাসের হাতে নুতন কেনা অটোরিকশাটি তুলে দেন পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খাঁন। এ সময় জেলা পুলিশের বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ হাসানের বাবা, চাচা ও তার ছোট ভাই উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ সুপার জানান, হাসানের চাকরি হওয়াতে তাদের পরিবারটি আর্থিক নিরাপত্তা পেয়েছিল। কিন্তু পরিবারটি দেনায় জর্জরিত ছিল। এ নিয়ে হাসান নিজেও হতাশাগ্রস্ত ছিলেন।

তিনি জানান, হাসান জীবিত থাকলে হয়তো ধীরে ধীরে ঋণ শোধ করতে পারতেন। কিন্তু তার পরিবারের আর কোনো উপার্জনক্ষম ব্যক্তি নেই। তাই হাসানের বাবাকে ভ্যান চালাতে হয়। বিষয়টি তাকে ভাবিত করে।

হাসানের পরিবারকে আর্থিকভাবে একটু স্বচ্ছল করে দেয়ার চিন্তা করেন। সেই ভাবনা থেকেই তিনি পাবনা জেলার সব সহকর্মীদের কাছে মানবিক আহ্বান জানান। এতে সবাই কিছু কিছু করে সহায়তা জমা করেন। সেই টাকায় অটোরিকশা কেনাসহ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নগদ টাকাও তুলে দেয়া হয় জব্বার বিশ্বাসের হাতে।

পুলিশ সুপার আরো জানান, জেলা পুলিশের একটি পিকআপের মাধ্যমে হাসানের স্বজনসহ গাড়িটি কেশবপুরের বালিয়াডাঙ্গীতে পৌঁছে দেয়া হয়।

হাসানের বাবা জব্বার বিশ্বাস জানান, অকালে ঝরে গেছে আমার সন্তান। একজন সম্ভাবনাময় তরুণ পুলিশ অফিসার। হাসান বেঁচে থাকলে আমাদের সংসারে স্বচ্ছলতা হয়ত ফিরে আসত। কিন্তু যেটা ভাগ্যে ছিল তা হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ বিভাগ হাসানকে ভুলে যাননি। বরং আমাদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

তিনি পাবনা পুলিশ সুপারসহ জেলার সব পুলিশ সদস্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি সবার কাছে ছেলের জন্য দোয়াও চান।

তিনি জানান, তিনি অটোরিকশা আপাতত কারো কাছে ভ্যাড়া দিয়ে চালাবেন। এতে অন্তত সংসারের খরচটা মিটে যাবে।

এদিকে পাবনা পুলিশ সুপারের এমন মানবিক উদ্যোগে পাবনার সর্বশ্রেণির মানুষ পুলিশ সুপারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত ২০ মার্চ দিবাগত রাতে আতাইকুলা থানার ভবনের ছাদে উঠে নিজের পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসান আলী (২৭)। ২১ মার্চ সকালে আতাইকুলা থানা ভবনের ছাদে তার মৃতদেহ দেখতে পান সহকর্মীরা।

হাসান আলী যশোরের কেশবপুর বালিয়াডাঙ্গী গ্রামের আব্দুল জব্বার বিশ্বাসের ছেলে। তিনি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ তারিখে আতাইকুলা থানায় যোগদান করেন।

তিনি দরিদ্র ঘরের সন্তান ছিলেন। সাংসারিক অনটনে পারিবারিক টানাপোড়েনের মধ্যে ছিলেন তিনি। এসব হতাশা থেকে তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন বলে পুলিশের ধারণা।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত