ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

বুকিং ঘরে বসেই

করোনাকালে চালু হলো বেসরকারি খাতের কবরস্থান

  মোস্তাফিজুর রহমান

প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২১, ১৯:৪৪  
আপডেট :
 ১৭ এপ্রিল ২০২১, ১২:৪৮

করোনাকালে চালু হলো বেসরকারি খাতের কবরস্থান
প্রতীকী ছবি

প্রায় দুই কোটি মানুষের শহর রাজধানী ঢাকার সরকারি কবরস্থানগুলোতে প্রচণ্ড চাপের কারণে মৃত মানুষের সমাহিত করার জায়গা পাওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে অস্থায়ী কববের জন্য জায়গা পাওয়া গেলেও স্থায়ী কবরের জায়গা পাওয়া অত্যন্ত দুরূহ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে প্রথম বেসরকারিভাবে দ্বীনি পরিবেশে দেশের সর্ববৃহৎ কবরস্থান প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রায় ২০০ বিঘা জমির উপর গড়ে তোলা হয়েছে ‘পূর্বাচল রওজাতুল জান্নাত’। যেখানে সর্বমোট ৮০ হাজার কবরের ব্যবস্থা করা হয়েছে, বর্তমানে ২ হাজার কবর সম্পূর্ণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কেউ চাইলে ঘরে বসেই প্রকল্পের ওয়েবসাইটে ও সফটওয়্যার ভিজিট করে কবরের জন্য জায়গা বুকিং দিতে পারবেন।

ঢাকার অদূরে গাজীপুরের পানজোড়া মৌজায় পূর্বাচলের ৩০ নম্বর সেক্টরের উত্তর-পূর্বসংলগ্ন এলাকায় রওজাতুল জান্নাত অবস্থিত, যা কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে ২৫ মিনিটের দূরত্ব।

জানা যায়, কবরস্থানের পাশাপাশি প্রকল্পের আওতায় থাকছে মসজিদ, হিফজখানা, মাদ্রাসা,এতিমখানা, বয়স্ক সেবা সেন্টার ও অনাথ শিশু কেন্দ্র।

প্রকল্পে একক কবর, যুগল কবর, পারিবারিক কবর ও যৌথ কবরের চারটি ক্যাটাগরিতে বিন্যাস করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফনের জন্য সর্বদা নিয়োজিত থাকছেন খিদমাহ্ টিম। যে কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করার পর পরিবারের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুর সংবাদ প্রদানের পর খিদমাহ্ টিমের সদস্যরা মৃত ব্যক্তির মরদেহ বহন থেকে শুরু করে সমাহিত করার সকল কাজ যেমন- গোসল করানো, জানাজা, দাফন-কাফন, কবরস্থ হওয়ার পর থেকে সার্বক্ষণিক রক্ষণাবেক্ষণ ও বাৎসরিক দোয়ার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও সার্বক্ষণিক ফ্রিজার ভ্যানের সুব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পুরো প্রকল্পটি সিসিটিভির নজরদারির আওতায় রয়েছে।

আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এমআইএস হোল্ডিংস লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে ‘পূর্বাচল রওজাতুল জান্নাত’ প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রোটারিয়ান মো. শোয়ায়েব হোসেন চৌধুরী সখা বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘ঢাকার জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রায় দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে প্রতিবছর সরকারি কবরস্থানগুলি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে এবং শহরের বাসিন্দাদের জন্য জায়গার সংবর্ধন একান্তভাবে প্রয়োজন। এই সংকট মোকাবেলার জন্য আমরা ‘রওজাতুল জান্নাহ’ নামে বেসরকারি কবরস্থান নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করি। বিশেষ করে মৃত্যু নিয়ে আমাদের কোন প্রস্তুতি না থাকায় এবং বিষয়টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা না থাকার কারণে মৃত্যু পরবর্তী ব্যবস্থাপনা ও কবর দেয়া নিয়ে মারাত্মক বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। এই বিড়ম্বনার থেকে মুক্তি দিতে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘দেশে বেসরকারি উদ্যোগে এটাই প্রথম স্থায়ী কবরস্থান। প্রকল্পটি বাণিজ্যিক উদ্যোগের পরিবর্তে একটি সেবা আধ্যাত্মিক প্রচেষ্টা। আমরা মৃত্যুর পরে একটি শান্তিপূর্ণ জায়গার সুযোগ প্রদান করছি । এর উদ্দেশ্য হলো সরকারিভাবে চিরস্থায়ী কবরের ব্যবস্থা নেই যা অনেক ব্যক্তি নিজের জন্য, বাবা-মায়ের জন্য, পরিবারের জন্য বা একটি কর্পোরেট ব্যাবস্থাপনার জন্য আশা করে থাকেন। কবরস্থ ব্যক্তির জন্য কিয়ামত পর্যন্ত দোয়া পাঠানোর পরিবেশ সম্পন্ন কবরস্থান করা হয়েছে। যেমন ১০ হাজার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন মসজিদ তৈরি করা হবে যেখানে প্রতি ৫ ওয়াক্ত নামাযের পরে দোয়া করা হবে। দেশের সর্ববৃহৎ মাদ্রাসা, এতিমখানা, হিফযখানা, বয়স্ক সেবা কেন্দ্র এবং দৈনিক (গড়ে) ৩০০ মৃত মানুষের আত্মীয়-স্বজন দোয়া অব্যাহত থাকবে।’

প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্তরা জানান, কবরস্থানটি নৈসর্গিক পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে। যেখানে সর্বদা বনজ ও ফলজ গাছ, গুল্ম লতা-পাতা এবং পাখীদের যিকিরের পরিবেশ থাকবে। কবরের জায়গাটি বাজার মূল্যে ক্রয় করা হয়েছে। কিয়ামত পর্যন্ত কবরের ব্যবস্থাপনা, মসজিদ মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য অর্থের নিশ্চয়তায় অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।

প্রকল্পের মার্কেটিং কনসালটেন্ট মোহাম্মদ মাহাদী হাসান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘বর্তমানে ‘একক কবর’ এর জন্য বুকিং চলমান আছে। তবে কেউ যদি একাধিক বুকিং দিয়ে একসাথে চায় সেটা করে দেয়া হচ্ছে।’

তিনি আরো জানান, একক কবরের জন্য সার্ভিস চার্জসহ ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩০ হাজার টাকা সার্ভিস চার্জ ধরা হয়েছে। বুকিং মানি ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। টাকা পরিশোধ করা হলেই কবরের প্লটটি সাব-রেজিস্ট্রি করে দিচ্ছেন তারা।

বাংলাদেশ জার্নাল/একে/কেআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত