সর্বাত্মক লকডাউন
কেউ মানছে কেউ মানছে না
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২১, ১৯:০৩ আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২১, ১৯:১৫
দেশে করোনার সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় চলমান সর্বাত্মক লকডাউনের দ্বিতীয় ধাপের আজ প্রথম দিন শুরু হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় পুলিশি প্রহরা ও মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম চলছে এবং বাইরে বের হলেই মামলা হচ্ছে। এরপরও কিছু মানুষ কারণে-অকারণে বাইরে বের হচ্ছে। ফলে ভেঙে পড়ছে লকডাউন।
তবে সরকার ও পুলিশ বলছে, লকডাউন শিথিল করা হয়নি। আর মানুষকে ঘরে বন্দি রাখা খুব কঠিন। কিন্তু যারা বের হচ্ছেন তারা প্রয়োজনেই বাইরে যাচ্ছেন।
এদিকে দেশে এখন কঠোর লকডাউন চলছে। কিন্তু প্রতিদিনই রাজধানীতে রাস্তায় যানবাহনের চাপ বেড়েই চলছে। কোথাও না কোথাও যানজট হচ্ছেই।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, আমাদের তো ঘরে আটকে রাখা কঠিন। তবে যারা বের হচ্ছেন তারা কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানছেন। সবার মুখে আপনি মাস্ক দেখতে পাবেন। আমার মনে হয়, যারা বের হচ্ছেন তারা হয়তো হাসপাতালে যাতায়াত করছেন। এছাড়া নির্দিষ্ট কিছু পেশার মানুষকে তো বের হতেই হবে।
এদিকে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় যানবাহনের চাপ অনেক বেশি। এগুলোর অধিকাংশই ব্যক্তিগত যানবাহন। তবে সিএনজি এবং অটোরিক্সাও বের হয়েছে। আর অবাধে চলাচল করছে রিক্সা। দুপুরের দিকে বিজয় সরণি ট্রাফিক সিগন্যালে জ্যামও দেখা গেছে।
লকডাউন নিয়ে শেরপুর, কুমিল্লা, রাজশাহী, খাগড়াছড়ি ও খুলনা থেকে বাংলাদেশ জার্নালের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসব এলাকার অনেক মানুষ লকডাউন মানছেন না।
শেরপুর: মানুষকে লকডাউনের আওতায় আনতে শেরপুরে পুলিশি প্রহরা এবং মোবাইল কোর্ট বসানো হয়েছে এবং মামলাও করা হচ্ছে। এরপরও মানুষ কারণে-অকারণে বাইরে বের হচ্ছে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ আল মামুন বলেন, লকডাউনে প্রশাসনের তৎপরতার ঘাটতি নেই। কিন্তু মানুষ সচেতন হচ্ছে না।
কুমিল্লা: কুমিল্লার লাকসামে সরকার ঘোষিত লকডাউন কেউ মানছে না। সেখানে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে হাট-বাজারে চলাচল করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রশাসনের লোকজনদের হাতে লাঠি ও মুখে বাঁশি আওয়াজে ব্যবসায়ীরা তাদের দোকান-পাট বন্ধ রাখার জন্য ছোটাছুটি করে। কিন্তু প্রশাসনের গাড়ি চলে গেলেই আবার ব্যবসায়ীরা দোকান খোলেন।
জানতে চাইলে কাউন্সিলর আবদুল আজিজ বলেন, প্রতিদিন উপজেলা প্রশাসন থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও পৌর প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। তারপরও কিছু কিছু অসচেতন ব্যক্তিরা বাজারে আনাগোনা ও ব্যবসায়ীরা দোকান খুলছে। মানুষ সচেতন না হলে লকডাউনের সুফল আসবে না।
লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে জনসাধারণকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বসবাস করতে হবে। কিছু কিছু মানুষ আমাদেরকে ফাঁকি দিয়ে বাজারে আসেন। তারপরও প্রতিদিন উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে মনিটরিং করা হচ্ছে।
রাজশাহী: সরকার ঘোষিত লকডাউনের মধ্যেই রাজশাহীতে আরডিএ মার্কেট খুলে ব্যবসা শুরু করেছেন ব্যবাসায়ীরা। বাধা দিলেই রাস্তায় আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজার আরডিএ মার্কেটে প্রায় সব দোকানই খোলা। ব্যবসায়ীরা লকডাউন মানছেন না। মার্কেটের সামনে অন্যান্য ব্যবসায়ীরাও আগের মতো বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। ব্যবসায়ীদের দাবি, তারা শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেই তাদের দোকানপাট খোলা রেখেছেন।
খাগড়াছড়ি: অষ্টম দিনে খাগড়াছড়িতে লকডাউন ঢিলেঢালাভাবে চলছে। সড়কে যান চলাচল বেড়েছে। আর জরুরি প্রয়োজন ব্যতিত অনেকে দোকানও খুলেছে। এগুলোতে কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। অন্যদিকে নানা অজুহাতে মানুষ ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছে।
খুলনা: খুলনা মহানগরী ও উপজেলা পর্যায়ের প্রধান সড়কগুলোতে কঠোরভাবে লকডাউনের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে ভিন্ন চিত্র মাছ ও কাঁচাবাজারগুলোতে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই মানা হচ্ছে না। এছাড়া ইফতারির পরপরই অলিগলিতে জমছে আড্ডা ও চলছে চা চক্র।
এ বিষয়ে খুলনা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইউসুপ আলী বলেন, নগরীসহ উপজেলা পর্যায়ে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রতিনিয়ত কাজ করছে। মামলার সঙ্গে আদায় করা হচ্ছে জরিমানা। আর সাধারণ মানুষকে মামলা ও জরিমানা করার ফলে তারা ঘর থেকে কম বের হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। প্রথম দফায় ২১ এপ্রিল পর্যন্ত এই লকডাউনের মেয়াদ ছিল। পরে সেটা আরো ৭দিন বাড়িয়ে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ জার্নাল/কেএস/ওয়াইএ