ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

ব্যাংকা কর্মকর্তার আত্মহত্যা

হুইপ সামশুলপুত্রকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২১, ১৯:২৩  
আপডেট :
 ২৪ এপ্রিল ২০২১, ১৯:৩৪

হুইপ সামশুলপুত্রকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন
ছবি- সংগৃহীত

ব্যাংক কর্মকর্তা আবদুল মোরশেদ চৌধুরীর আত্মহত্যার ঘটনায় চট্টগ্রাম-১২ আসনের সাংসদ ও হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে শারুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন মোরশেদ চৌধুরীর স্ত্রী ইশরাত জাহান চৌধুরী। অভিযোগ তুলে শারুন চৌধুরীসহ অন্য অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।

শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে ইশরাত জাহান চৌধুরী এ দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে ইশরাত বলেন, হুইপপুত্র শারুন চৌধুরী ও সাবেক ছাত্রনেতা আরশাদুল আলম বাচ্চুর অব্যাহত চাপ, হুমকি ও হামলার কারণে নিরুপায় হয়ে আমার স্বামী ব্যাংকার আবদুল মোরশেদ চৌধুরী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। ২০১০ সাল থেকে মোরশেদ তার আপন ফুফাতো ভাইদের সঙ্গে ব্যবসা করছিলেন। কোনো নথিপত্র ছাড়া তারা মোরশেদকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ দেন। পরবর্তীতে তিনিও তাদের ৩৫ কোটি টাকা শোধ করেন। ২০১৮ সালের দিকে এসে তিনি ওই ব্যবসার কথা পরিবারের অন্যদের জানান এবং বলেন তিনি আর ব্যবসাটা করতে চান না। ৭ এপ্রিল তিনি আত্মহত্যা করেন।

মৃত্যুর আগে ব্যাংকার ৪ পৃষ্ঠার একটি সুইসাইড নোট রেখে গেছেন উল্লেখ করে তার স্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সুইসাইড নোটের একটি অংশে লেখা ছিল, ‘আল্লাহ আমাকে রক্ষা করবে, আরেকটু দেখি, আরেকটু দেখি করতে করতে দেনার গর্তটা অনেক বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে। যারা কোনো টাকাই পেত না, তাদের দিতে গিয়ে এখন সত্যিকারের দেনায় জর্জরিত। বেঁচে থাকলে এই দেনা আরও বাড়বে। তাছাড়া পরিচিতগুলোই এখন চেপে ধরেছে বেশি। এই লোড আমি আর নিতে পারছি না, সত্যি পারছি না।’

ইশরাত জাহান জানান, তার স্বামীর এ ঘটনার সঙ্গে হুইপপুত্র শারুন চৌধুরী জড়িত হন ২০১৯ সালের মে মাসে। মে মাসের একদিন শারুন চৌধুরী তার স্বামীকে (মোরশেদ চৌধুরী) ফোন করে রেডিসন হোটেলে দেখা করতে বলেন। মোরশেদ এতে আপত্তি করেন। মোরশেদ তখন বলেন, তার (শারুন চৌধুরীর) সঙ্গে কোনো ব্যবসায়িক লেনদেন নেই। তারপরও কেন তিনি দেখা করতে বলছেন। জবাবে শারুন চৌধুরী বলেন, লেনদেন নেই, এখন হবে। এর কিছুক্ষণ পরেই শারুন ১০-১২ জন যুবককে নিয়ে তাদের (মোরশেদ) বাসায় যান। ওই সময়ের ভিডিও শারুনকে দেখা না গেলেও মোরশেদের ফুফাতো ভাই পারভেজকে দেখা যায়। তাদের ভবনের নিরাপত্তারক্ষীদের আটকে রেখে ওই যুবকেরা বলে, গাড়ির ভেতরে শারুন চৌধুরী বসে আছেন। ওই সময় মোরশেদ চৌধুরী বাসায় ছিলেন না। তিনি তার আত্মীয় আজম খানের বাসায় ছিলেন। আজম খানই লেনদেনের বিষয়টি দেখভাল করছিলেন। কিছুক্ষণ পরে আজম খানের বাসায় শারুন চৌধুরীও হাজির হন।

মোরশেদ চৌধুরীর সঙ্গে শারুন চৌধুরীর সরাসরি কোনো ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, মোরশেদ চৌধুরীর সঙ্গে শারুন চৌধুরীর সরাসরি কোনো ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল না। হুইপপুত্র পারভেজ ইকবাল ও জাবেদ ইকবালের মাধ্যমে ব্যবসার অর্থ বিনিয়োগ করেন বলে তিনি শুনেছেন। দেশজুড়ে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে শারুন চৌধুরী আত্মগোপনে যান, এরপর থেকে তিনি আর সরাসরি কোনো বৈঠকে হাজির হননি বলে জানান ইশরাত।

ইশরাত জাহান সংবাদ সম্মেলনে এক পুলিশ কর্মকর্তার (বিজয় বসাক) নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই সময় তিনি (বিজয় বসাক) চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ উত্তরের উপকমিশনার ছিলেন। মোরশেদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিজয় বসাকই টাকা আদায়ের কাজ তত্ত্বাবধান করেছেন।

ইশরাত আরও বলেন, ২০১৮ সালে মোরশেদকে তার ফুফাতো ভাইয়েরা এমএম প্যালেসে আটকে রাখেন। তার মাথায় পিস্তল ঠেকান, পাসপোর্ট কেড়ে নেন এবং তাকেও নানাভাবে হেনস্তা করেন। ওই সময় পাঁচলাইশ থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। এক বছর পর বাসায় হামলা হলে তারা সরাসরি উপকমিশনার বিজয় বসাকের সঙ্গে দেখা করেন। তার নির্দেশে পাঁচলাইশ থানায় মামলা হয়। ওই ঘটনায় মোরশেদের ফুফাতো ভাই জাবেদ ইকবাল গ্রেপ্তার হন।পরে তিনি জামিনে বেরিয়ে এসে বিজয় বসাকের সঙ্গে দেখা করেন। বিজয় বসাক তার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে একটি চুক্তিপত্রে সই করান। ওই চুক্তিপত্র অনুযায়ী, মোরশেদকে ১২ কোটি টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে হয়। যদিও কেন এই টাকা দিতে হবে তা-ই বুঝতে পারছিলেন না মোরশেদ ও তার পরিবার। এরপর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কোন তারিখে, কত টাকা মোরশেদকে ব্যাংকে জমা দিতে হবে- তা নির্ধারণ করে দিতেন পুলিশ কর্মকর্তা বিজয় বসাক।

ইশরাত জানান, বিজয় বসাক গত ১১ মার্চ মোরশেদকে ফোন করে বাসায় ও ব্যাংকে পুলিশ পাঠিয়ে ধরে আনার হুমকি দেন। ওই অডিও রেকর্ড সাংবাদিকদের কাছে রয়েছে। একজন আইনের লোক হয়ে তিনি (বিজয় বসাক) কি এ কাজ করতে পারেন, সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন রাখেন ইশরাত।

বাংলাদেশ জার্নাল/আর

  • সর্বশেষ
  • পঠিত