ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

বন্ধুকে হত্যার পর একাই পড়েন জানাজা, ডোবায় ফেলেন লাশ

  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৫৭

বন্ধুকে হত্যার পর একাই পড়েন জানাজা, ডোবায় ফেলেন লাশ
ডোবা থেকে লাশ উদ্ধার করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ট্রাকচালককে অপহরণের পর হত্যা ও লাশ গুমের ঘটনার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। ঘটনার এক মাস পর শনিবার (২৪ এপ্রিল) রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে চট্টগ্রামের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন শামীমের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে উপজেলাধীন পারুয়া ইউনিয়নস্থ একটি ডোবার নিচ থেকে মাটি খুঁড়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করা হয়।

একই দিন দুপুরে ঘটনার মূল হোতা মো. নেজাম ওরফে মিজান (২৬)কেও জেলার সন্দ্বীপ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত খুনি নেজাম তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আজিজুলকে হত্যা ও লাশ গুমের ঘটনার বীভৎস বর্ণনা দেন। মূলত পারিবারিক শত্রুতার জের ধরেই এই হত্যার পরিকল্পনা করেন নেজাম। ঘটনার দিন বালু আনার নাম করে আজিজুলকে কৌশলে রাঙ্গামাটি জেলাধীন বেতবুনিয়া এলাকার এক নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে ট্রাকের রেঞ্জ দিয়ে মাথায় আঘাত এবং ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন তিনি।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত মার্চ মাসের ২৫ তারিখ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলাধীন ইসলামপুর ইউনিয়নের আল আমিন পাড়া গ্রামের আব্দুল হাকিমের পুত্র ট্রাকচালক আজিজুল হক (২৭) নিখোঁজ হন।

এ পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ মার্চ ভিকটিমের বাবা রাঙ্গুনিয়া মডেল থানায় একটি হারানো জিডি করলে বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। এর মধ্যে ৬ এপ্রিল এ প্রসঙ্গে ভিকটিমের মামা হায়দার আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।

তদন্তে আজিজের ব্যবহৃত মোবাইলটি প্রযুক্তির সাহায্যে কক্সবাজারে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। ঘটনার ১৫ দিন পর সূত্র ধরে কক্সবাজার সদর এলাকা থেকে মোবাইল এবং রামু এলাকা থেকে ট্রাকটি জব্দ করা হয়। অপহরণকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ওই এলাকা থেকে দু’জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা নেজামের সংশ্লিষ্টটার কথা স্বীকার করেন। এরপর পুলিশ প্রযুক্তির সাহায্যে তার অবস্থান সন্দ্বীপে শনাক্ত করে এবং সন্দ্বীপ থানা পুলিশের সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার করে।

সূত্র জানায়, নেজামের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া সন্দেহে বন্ধুকে হত্যার পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী নিয়ে যান নির্জন এলাকায়। এরপর রেঞ্জ দিয়ে মাথায় আঘাত ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন। এর একদিন পর মাথায় আসে জানাজা ও দাফনের চিন্তা। এরপর নিজে একাই জানাজা পড়েন। আর হত্যার জন্য বন্ধুর কাছে মাফ চেয়ে লাশ গুম করেন ডোবার তলদেশে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আজ (২৫ এপ্রিল) অভিযুক্ত খুনি গ্রেফতারকৃত মো. নেজামকে চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম আঞ্জুমান আরার আদালতে তোলা হলে তিনি ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে আজিজুলকে হত্যা ও গুমের ঘটনার রোমহষর্ক বর্ণনা তুলে ধরেন। পাশাপাশি তিনি নিজ স্ত্রীর সাথে পরকীয়ার সন্দেহ থেকেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পরিকল্পনা করেছেন মর্মেও জবানবন্দিতে দাবি করেন। আসামি নেজাম রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা হাজীপাড়া এলাকার নুরুল আলমের ছেলে।

এ প্রসঙ্গে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান সার্কেল মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগের মাধ্যমে দীর্ঘ এক মাসের নিরবিচ্ছিন্ন এবং নিবিড় তদন্তে আমরা প্রায় কোন ক্লু না থাকা এই ঘটনাটির রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছি। সেই মোতাবেক গতকাল ঘটনার মূল হোতা নেজামকে গ্রেপ্তার এবং তার দেয়া তথ্যমতে ভিকটিমের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় অন্য কারো সংশ্লিষ্ট রয়েছে কি না তা নিরূপণের জন্য তদন্ত অব্যাহত আছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত