ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

যে এলাকার শিক্ষকদের ঘরে ঈদ আনন্দ নেই!

  যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৬ মে ২০২১, ২২:১১

যে এলাকার শিক্ষকদের ঘরে ঈদ আনন্দ নেই!
ছবি প্রতীকী

যদি শিক্ষকতার পেশায় না এসে চা বিক্রেতা হতাম তাহলে অন্তত ঈদে স্ত্রী-সন্তানদের নতুন পোশাক কিনে দিতে পারতাম। গত ২১ বছর শিক্ষকতা করে পরিবারের সদস্যদের কিছুই দিতে পারিনি বলতেই কেঁদে উঠেন যশোরের মণিরামপুর পৌরসভা শহরের মহাদেবপুর জুনিয়র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান।

এমন আক্ষেপ করে অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছেন উপজেলার সি.টি.কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মলয় কুমার রায়। তার বিদ্যালয়টি স্থাপিত ১৯৯১ সালে। কিন্তু আজও বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়নি। তিনি জানান, গত ২৫ বছর যাবত শিক্ষকতা করে চলেছি। চার বছর পরেই অবসরে যাব। কিন্তু বেতন আমার ভাগ্যে আছে কিনা বলতে পারি না।

শুধু মিজান বা মলয় নন। উপজেলার চারটি কলেজ, আটটি দাখিল মাদ্রাসা এবং আটটি মাধ্যমিক ও জুনিয়র হাইস্কুলের অন্তত চার শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী দীর্ঘদিন যাবত বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের বিদ্যালয় মহাদেবপুর জুনিয়র হাইস্কুলটি ২০০০ সালে স্থাপিত হয়। এ বিদ্যালয়টিতে সাতজন শিক্ষক-কর্মচারী বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

এমপিওভুক্ত না হওয়া বড় চেৎলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিতাই বসু জানান, ১৯৯৭ সালে বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টি পূর্ণাঙ্গ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ১৭ জন শিক্ষক-কর্মচারী দীর্ঘদিন কর্মরত আছি। ৩৩টি বছর বিনা বেতনে শিক্ষকতা করে ক-দিন বাদেই আমিসহ কৃষি শিক্ষক গোবিন্দ চন্দ্র অবসরে যাবো। ততোদিনে বেতন-ভাতা পাবো কিনা জানি না।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, উপজেলার ২১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত না হওয়ায় সেখানে কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীরা বছরের পর বছর অর্থাভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

ঢাকুরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ তাপস কুমার কুন্ডু জানান, ১৯৯৯ সালে কলেজটি স্থাপিত হয়েছে। কলেজটি আজও পর্যন্ত এমপিওভুক্ত হয়নি। যার ফলে ২৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী অর্থাভাবে চরম কষ্টের মধ্যে রয়েছেন।

চিনাটোলা কলেজের অধ্যক্ষ সাজ্জাদ হোসেন জানান, ২০০২ সাল থেকে কলেজে ৩২ জন শিক্ষক কর্মচারী বেতন না পেয়ে অর্থাভাবে চরম কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে। বহু চেষ্টা করেও আজও পর্যন্ত এমপিওভুক্ত করা সম্ভব হয়নি।

মহাদেবপুর জয়নগর দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা জসিম উদ্দীন বলেন, ১৭ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়ে সেই ২০০০ সাল থেকে বিনা বেতনে চাকরি করে যাচ্ছি। বড় কষ্টের দিন হচ্ছে প্রতি বছরের দুটি ঈদ উৎসবের সময়। এ সময় শিক্ষকরা ইচ্ছা করলেই তাদের সন্তান, পরিবার-পরিজনদের চাহিদা মেটাতে পারেন না। পারেন না অন্য কোনো উপায়ে অর্থ উপার্জন করতে। ফলে সে কষ্টের কথা বলতেও বড় কষ্টের।

নেহালপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আজিজুর রহমান একই কষ্টের কথা জানিয়ে বলেন, বয়সের যে পর্যায়ে পৌঁছেছি তা শিক্ষকতা ছেড়ে এখন অন্য কিছু করাও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে চরম কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে বছরের পর বছর।

মদিনাতুল উলুম মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার গোলাম রব্বানী জানান, এভাবে আর জীবন চলে না। অর্থ নষ্ট করে প্রতিষ্ঠান গড়ে বছরের পর বছর বেতন না পেয়ে শিক্ষক কর্মচারীরা এখন চরম কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন।

ইত্যা সুইচগেট দাখিল মাদ্রাসার সুপার রুহুল আমিন জানান, রোজা থেকেও পয়সার অভাবে অন্যের ক্ষেতে মজুরি খাটছে শিক্ষক কর্মচারীদের কেউ কেউ।

মনিরামপুর উপজেলা শুভসংঘের সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এসব ননএমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অধিকাংশই অপেক্ষার পর অপেক্ষা করে বয়সের শেষ প্রান্তে পৌঁছে যেতে বসেছেন। এ অবস্থায় তাদের সংসার জীবনও থমকে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য ভুক্তভোগী শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ বেতন পাওয়ার ব্যবস্থা করতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত