ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

সাবেক ডিসি'র উদ্যোগে হাজার কৃষকের মুখে হাসি

  দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৭ মে ২০২১, ১১:৫৫  
আপডেট :
 ০৭ মে ২০২১, ১২:৩৯

সাবেক ডিসি'র উদ্যোগে হাজার কৃষকের মুখে হাসি
ছবি: প্রতিনিধি

প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ৩ হাজার বিঘা জমি জুড়ে ছিলো শুধুই জলাবদ্ধতা আর কচুরিপানা। দিনাজপুরের সাবেক ডিসি বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মাহমুদুল আলমের উদ্যোগে এ বছর সেই জমিতে সোনালী ধানের দোলা, হাজার কৃষকের মুখে খুশির ঝিলিক।

স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষকরা বলছেন, ওই তিন হাজার বিঘা জমিতে এবার ব্যাপক ফলন হওয়ায় প্রায় ৭৫ হাজার মণ অতিরিক্ত ধান উৎপন্ন হবে এই উপজেলায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার খয়েরবাড়ী এবং দৌলতপুর ইউনিয়নের উত্তরের লালপুর গ্রাম থেকে দক্ষিণে দূর্গাপুর গ্রাম পর্যন্ত তিন হাজার বিঘা ফসলের মাঠ। এই ফসলের মাঠের পশ্চিম প্রান্তে ছোট যমুনা নদী। বারাইপাড়া গ্রাম থেকে ছোট যমুনা নদীতে পানি নিষ্কাশনের ক্যানেল রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীদের বাঁধায় ফসলের মাঠ থেকে বারাইপাড়া পানি নিষ্কাশনের ক্যানেল পর্যন্ত মাত্র ৩শ' মিটারের একটি সংযোগ ক্যানেল না হওয়ায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয় তিন হাজার বিঘা ফসলি জমিতে। ফলে সব ধরনের চাষাবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন প্রায় ১০ বছর ধরে ১ হাজার কৃষক।

অবশেষে গতবছর ২৪ অক্টোবর তৎকালীন দিনাজপুর ডিসি বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মাহমুদুল আলম নিজে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে একদিনের ৩ শত মিটার ক্যানেল খনন করেন। এতে নিরসন হয় জলাবদ্ধতার। ফলে দীর্ঘদিন পর এ বছর সেই তিন হাজার বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করেন স্থানীয় কৃষকরা।

বৃহস্পতিবার সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরো তিন হাজার বিঘা জমিতে ফসলের মাঠ জুড়ে পাকা আধাপাকা ধানে ভরে রয়েছেন। পূর্ব দিকে বৈশাখী বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনালী ধানের মাঠ। অনেক দিন পর হলেও কিছু জমিতে কিষান-কিষাণিরা ধান কাটায় ব্যস্ত।

বারাইপাড়ার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, কৃষি কাজই তার একমাত্র পেশা। এবার তিনি ৭ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে তার গড়ে ২৫ মণ করে ধান হয়েছে। অথচ গত ৪ বছর ধরে একটি ফসলও তিনি পাননি। গত বছর মাহমুদুল আলম ডিসি স্যার ক্যানেল না খুঁড়লে এ বছর কোনো ফসল আবাদ করতে পারতেন না। ফলে পরিবার নিয়ে তাকে পথে বসতে হতো।

মাহদিপুরের কৃষক সাইদুর মিয়া জানান, দীর্ঘদিন এসব জমিতে কোনো ফসল আবাদ না হওয়ায় এখানকার কৃষকরা দিনে দিনে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছিলো। ডিসি স্যারের কারণে আজ অনেক কৃষক সেই ঋণের জাল থেকে মুক্তি পাবে।

গৃহিণী রাবেয়া খাতুন জানান, তাদের বাড়িতে ৬ টি গাভী ছিলো। কিন্তু জমিতে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গো খাদ্যের সঙ্কট দেখা দেয়। বাজারে গো খাদ্যের দাম ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা গাভীগুলো বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। জমির পানি নিষ্কাশনের ফলে এ বছর আবাদ শুরু হওয়ায় তারা নতুন করে গাভী পালনের পরিকল্পনা নিয়েছেন।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিল্টন জানান, বিভিন্ন মহলে অনেক দিন দেন দরবার করেও দীর্ঘদিনেও ওই এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো সুরাহা করা সম্ভব হচ্ছিলো না। অবশেষে দিনাজপুরে মাহমুদুল আলম ডিসি হিসেবে যোগদান করার পরই ক্যানেলটি খোঁড়ার উদ্যোগ নেন। অবশেষে গত বছর ২৪ অক্টোবর দিনাজপুর-৫ আসনের এমপি সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের সহযোগিতায় তৎকালীন ডিসি মাহমুদুল আলম নিজে এসে কোদাল ধরে ক্যানেল খননের সূচনা করে। সারাদিন থেকে ক্যানেল খননের কাজ শেষ করে পানি নিষ্কাশন শুরু করে যান তিনি। যার ফলে উপজেলার দুই ইউনিয়নে হাজারো কৃষকরে আজ মুখে খুশির বন্যা বইতেছে।

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন জানান, সরকারের ডেল্টা প্রকল্পের আওতায় সরকার ওইসব জমির পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নিয়েছিলো। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যার কারণে সেই ক্যানেল করা সম্ভব হচ্ছিলো না। সাবেক ডিসি মাহমুদুল আলম স্যারের উদ্যোগের ফলে আজ পানি নিষ্কাশনসহ দুই ইউনিয়নের তিন হাজার বিঘা জমিতে ব্যাপক ধান উৎপাদ সম্ভব হয়েছে। ক্যানেলটি পাকা করনের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।

সাবেক ডিসি ও বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মাহমুদুল আলম জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিলো এক ইঞ্চি জমিও যেনো অনাবাদী না থাকে। প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনা মোতাবেক ওই এলাকার হাজারো কৃষকের দুর্দশা লাঘবে তিনি ওই ক্যানেল খনন সম্পন্ন করেন। যার সুফল আজ শুধু হাজারো কৃষক নয় পুরো উপজেলা, দেশ পাচ্ছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত