ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

লিচুর ফলন কম, বাজার নিয়েও শঙ্কা

  সুলতান মাহমুদ, দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১০ মে ২০২১, ১৬:৫৪

লিচুর ফলন কম, বাজার নিয়েও শঙ্কা
ছবি- প্রতিনিধি

সারাদেশেই দিনাজপুরের লিচুর কদর আলাদা। জেলার লিচু বাগানগুলোতে থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ লিচু। আগামী ১৫ দিন পর থেকেই সবুজ লিচুগুলো রঙিন হতে শুরু করবে, অর্থ্যাৎ লিচু খাওয়ার উপযোগী হবে। তবে এ বছর গত বছরের তুলনায় লিচুর ফলন তুলনামূলক কম। প্রথমে শীত-কুয়াশা, পরে খড়ায় কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক লিচু। আবার দেশব্যাপী করোনার কারণে বাজার নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। ফলে এখন থেকেই চিন্তার ভাঁজ পড়েছে লিচুচাষি-বাগানিদের কপালে।

লিচুর ফলন বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে কৃষিবিদরা বলছেন, শীতকালে নাইট্রোজেনের পরিমাণ কম ছিল। এ কারণে গাছে ফুল না ধরে কচি পাতা বের হয়েছে। একইসঙ্গে লিচু গাছে মাত্রাতিরিক্ত হরমোন ও রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে গাছের উৎপাদন ক্ষমতা ক্রমশই কমছে।

দিনাজপুর হর্টিকালচার উপ-পরিচালক প্রতীপ কুমার গুহ বলেন, দিনাজপুর জেলায় এ বছর সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। সেখানে গাছ রয়েছে সাত লাখের ওপরে, যা থেকে গত বছর ৩৫ হাজার মেট্রিক টনের ওপরে লিচুর ফলন হয়েছিল। চলতি বছর লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪০ হাজার মেট্রিক টন। তবে এ বছর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

প্রতি বছর এই জেলায় সোয়া চারশ’ থেকে সাড়ে চারশ’ কোটি টাকারও বেশি লিচু বেচাকেনা হয়। দিনাজপুর জেলায় যেসব লিচু আবাদ হয় তার মধ্যে রয়েছে বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না থ্রি, চায়না টু, কাঠালি, বেদানাসহ বিভিন্ন জাতের লিচু। তার মধ্যে বেশি আবাদ হয় বোম্বাই ও মাদ্রাজি জাতের লিচু। তবে চলতি বছর এই দুই জাতের লিচু কম।

দিনাজপুর সদর উপজেলার মাসিমপুর এলাকার বাগানি মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘আমার বাগানে গত বছর ১০ লাখ লিচু পেয়েছিলাম। এ বছর ছয় লাখও পাবো কিনা সন্দেহ আছে। আমার মনে হয় এ বছর ফলন কম হওয়ার কারণ মূলত আবাহাওয়া। প্রচুর কুয়াশা ছিল, যার কারণে যে সময় মুকুল বের হওয়ার কথা, তখন বের হয়েছে নতুন পাতা।’

মাসিমপুরের লিচুচাষি মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমার মতো লিচুবাগানি যারা আছে, তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বছর লাভবান হওয়ার সুযোগ খুবই কম। কারণ আমরা যে খরচ করি, যেমন পাহারাদার, লোকজন রাখা, গাছ থেকে লিচু নামানোর খরচ, তার সবটা মিলেয়ে লস না হলেও আশা করছি গায়ে গায়ে যাবে। জানি না এ বছরের বাজার কেমন হবে। ভালো হতে পারে, আবার খারাপও হতে পারে।’

দিনাজপুর সদর উপজেলার পশ্চিম শিবরামপুর এলাকার শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাগানে ১৮০টি গাছ আছে। গত বছর ৪০টি গাছে ফল আসেনি। আর এ বছর ৭০টি গাছে ফল আসেনি। গতবার লিচু খুব ভালো হয়েছিল। এ বছর কুয়াশা বেশি, তাই ফলন কম। গত বছর ফলন দেখে আমি বাগান কিনেছি। এ বছরের ফলনের জন্য ভালোমতো পরিচর্যা করেছি। আমি বাগানে ফলের জন্য খুবই চেষ্টা করেছি। কিন্তু এ বছর ফলন নেই, যা ফল দেখছি এতে করে ভাগ্যে যা আছে, যা হয় হবে।’

বিরলের ধুকুরঝাড়ী এলাকার লিচুচাষি রশিদুল ইসলাম বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরেই একটু লোকসানের মধ্যে আছি। দুই বছরে লিচুর মৌসুমে রোজার মাস পড়েছিল, আর গত বছর ছিল করোনা। এবারে করোনাতো আছেই, আবার মুকুলও কম এসেছে। তাই লাভের আশা এবার ছেড়ে দিয়েছি। পরিচর্যা যতটুকু না করলেই নয়, ততটুকু করছি। কারণ অব্যাহত লোকসানে আর আশা ভর করছে না।’

দিনাজপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ প্রদীপ কুমার গুহ বলেন, ‘এ বছর আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে লিচু ফলনে কিছুটা বিপর্যয় হয়েছে। লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ফলন হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে দিনাজপুরের লিচু বাগানগুলোতে পুষ্পমঞ্জুরী থেকে ফল আসতে শুরু করেছে। দিনাজপুরে যেসব জাতের লিচুর চাষ হয়, তার মধ্যে বোম্বাই জাতের লিচুই আছে ৫০ শতাংশের বেশি। এই জাতটিতে তুলনামূলক পুষ্পমঞ্জুরী কম। আসেনি এবার আশানুরূপ ফল।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফলন না আসার কারণগুলোর মধ্যে সাধারণত আমরা যেগুলো উল্লেখ করতে পারি, তা হলো আবহাওয়া। আবার তার পাশাপাশি গাছের পরিচর্যার বিষয়টিও আছে। গাছের ফলন অনেকটা নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর। গত মৌসুমে শীতের মাত্রাটি ছিল ভিন্ন। মাঝে মাঝে ঠাণ্ডা পড়েছে, আবার মাঝে মাঝে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এসেছে। ধারাবাহিকভাবে শীত না থাকায় কার্বন ও নাইট্রোজেন রেশিও কমবেশি হয়েছে। এই রেশিওতে যদি নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেশি হয়ে যায়। অর্থাৎ তাপমাত্রা যদি বেশি হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে গাছ বেশি পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। এতে করে গাছে পুষ্পমঞ্জুরী না এসে গজাবে কচি পাতা।’

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত