ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

সুজনের নাগরিক সংলাপ

জাতীয় পরিচয়পত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর সুস্পষ্ট সংবিধান লঙ্ঘন

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২১, ১৬:৪৭

জাতীয় পরিচয়পত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর সুস্পষ্ট সংবিধান লঙ্ঘন

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করার উদ্যোগে শঙ্কা জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। একে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতার ওপর নগ্ন হামলা উল্লেখ করে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নির্দেশনার মাধ্যমে এনআইডি, জনবল এবং অবকাঠামো কোনভাবেই কেড়ে নিতে পারে না সরকার। এটা সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

রোববার ‘সরকার কর্তৃক জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করার উদ্যোগ ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে এ অভিযোগ করেন তিনি। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এ সংলাপের আয়োজন করে। সুজনের সংলাপে যুক্ত ছিলেন, সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটি এম শামসুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, বিচারপতি এম এ মতিন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রমুখ।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের দেশে ভোটার ডাটাবেজ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি হয়েছে, অন্য দেশে বিষয়টা উল্টো। তাই এখানে এনআইডির সঙ্গে ভোটার তালিকার বিষয়টি সম্পৃক্ত। জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ভোটার ডাটাবেজ যদি সরকারের নিয়ন্ত্রণে যায় সরকার বিভিন্ন রকম কারসাজির মাধ্যমে কাউকে ভোটার করতে পারে এনং কাউকে বাদ দিতে পারে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের একটা সুযোগ থেকে যায়, দুর্নীতিরও সুযোগ তৈরি হয়। ছবিসহ ভোটার তালিকা আমাদের গর্বের ধন, এটিতে কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না। আর সরকার করতে চাইলে জন্ম নিবন্ধন থেকে শুরু করতে পারে।

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ভোটার করার ক্ষেত্রে ইসির চেয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের দায় বেশি হওয়ার বিষয়টি বিভিন্ন তদন্তে উঠে এসেছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং মেম্বাররা রোহিঙ্গাদের জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে এনআইডি পেতে সহায়তা করেছে। রাজনৈতিক সরকারের কাছে এনআইডির দায়িত্ব গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিয়ে সাবেক এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে এনআইডির দায়িত্ব না নিয়ে তারা নিজেরাই নতুন করে অবকাঠামো তৈরি করতে পারে। সেক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের উদাহরণ দিয়ে লাভ নেই। অন্যান্য দেশ এটা করেছে বলে আমাদেরও করতে হবে, বিষয়টি এরকম হওয়া উচিত না। কারণ, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইভিএমের মাধ্যমে হবে। ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন করতে হলে এনআইডির দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকা অবশ্যক।’

সংলাপে অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, কমিশনের বুঝা উচিত তারা নিজেদের কোথায় নামিয়েছে। সেই সরকারের জন্য তারা একের পর অন্যায় করেছে কাছেই তারা কতটা মর্যাদাহীন সেটা যেন তারা একটু অনুধাবন করে। কমিশনের ওপর আমাদের আস্থা নেই এটা ঠিক কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়ে গেলে আরও শংকাজনক ও বিপদজনক হবে। কারণ কমিশনতো নিজে সরাসরি জনগণকে নিপীড়ন করে নাই, গত নির্বাচনে এজেন্টদের, ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয় নাই। এই কাজগুলো করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়য়ের অধীনে পুলিশ। তাদের হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজ চলে গেলে আমাদের জন্য অনেক ভীতিকর। প্রধান নির্বাচন কমিশনের প্রতি বলতে চাই, আপনাদের যে কিছু মেরুদন্ড আছে এই ইস্যুতে দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেন, বেশ কয়েকদিন বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে জানানো হয়নি কী উদ্দেশ্যে এটা করা হচ্ছে। কমিশনের হাতে থাকলে কী অসুবিধা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়য়ের কাছে গেলে কী সুবিধা তাও জানানো হয়নি। এটি পরবর্তী নির্বাচনের নতুন তরিকার পদক্ষেপ বলে মনে হচ্ছে।

বাংলাদেশ জার্নাল- ওওয়াই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত