ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

ভূমিকম্প মোকাবেলায় প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা

  মোস্তাফিজুর রহমান

প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২১, ২২:৪৮

ভূমিকম্প মোকাবেলায় প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা
ছবি প্রতীকী

দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চল সিলেটে ১০ দিনের ব্যবধানে বহুবার ভূমিকম্প হয়েছে। প্রকৃতির এ আচরণ এবারই প্রথম। এমন অবস্থায় ভাবিয়ে তুলেছে দেশের ভূতত্ত্ববিদদের। তবে আশঙ্কা যেটাই হোক না কেন এ নিয়ে সচেতনতা, প্রস্তুতি, গবেষণা এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অনুষদের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন ভূঁঞা বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘সিলেটে বার বার যে স্বল্প মাত্রার ভূকম্পন হয়েছে, সেটি সামগ্রিকভাবে স্বাভাবিক বিষয়। এরপরেও আশঙ্কা কিছুটা থেকেই যাচ্ছে। যার ফলে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিতে হবে। বড় ধরণের ভূমিকম্প থেকে রক্ষা পেতে এখন এটাই আমাদের করণীয়।’

‘বড় ধরণের ভূমিকম্প হলে কি ভয়াবহ অবস্থা হবে সেটি ধারণা করে বলা যাবে না। তবে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হলে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যাবে।’

রানা প্লাজার ধসের কথা উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক বলেন, ‘জেনেছি ঢাকা শহরে ৭২ হাজারেরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে। এবার ভাবুন, বড় ভূমিকম্প হলে কেমন ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। যেখানে একটি ভবন (রানা প্লাজা) সামলাতেই সেনাবাহিনীসহ সবাই হিমশিম খেয়েছি।’

অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের মতে, ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে সচেতনতা, প্রস্তুতি এবং গবেষণা তিনটি ক্ষেত্রেই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা দরকার।

সচেতনতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে শিশুদের ছোটকাল থেকে ভুমিকম্পের বিষয়ে জানাতে হবে। এছাড়া প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ে ভূমিকম্পের বিষয়ে অর্ন্তভুক্ত করতে হবে। যেমনটি ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে করা হয়েছিল। এখন অনেকেই ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে সচেতন। ঠিক তেমনি ভূমিকম্পের বিষয়েও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে সচেতন করতে হবে।’

প্রস্তুতির বিষয়ে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়সহ অন্যান্য দুর্যোগের ক্ষেত্রে আমরা আগাম বার্তা পাই। কিন্তু ভূমিকম্পের কোনো বার্তা পাইনা। এটি হঠাৎ চলে আসে। তাই প্রস্তুতির বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্তুতিটা আসলে কি? প্রধানত আমাদের যে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে সেগুলো অপসারণ করা। আর নতুন যেসব ভবন হচ্ছে, সেগুলোতে ভূমিকম্পের ঝুঁকির বিষয়গুলো গুরুত্ব দেয়া। শহরগুলোতে খোলা জায়গার ব্যবস্থা রাখা, যেখানে ভূমিকম্পের সময় মানুষ আশ্রয় নেবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যেখানে বাস করি বা অফিসে করি সেই ভবনগুলোতে এমন জায়গায় চিহ্নিত করতে হবে যেখানে ভূমিকম্পের সময় আশ্রয় নেয়া যাবে। ভূমিকম্পের বিষয়ে টিম গঠন করতে হবে, যারা ভূমিকম্প পরবর্তি পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়াও আরো অনেক বিষয় আছে সেগুলো বের করে দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতি নিতে হবে।’

গবেষণার বিষয়ে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশে কি মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে তা নির্ণয় করে কেমন বিল্ডিং (ভবন) তৈরি করা দরকার সেটি গবেষণার মাধ্যমে বের করতে হবে। কোথায় ভবন করা যাবে, কোথায় যাবে না- এগুলো চিহ্নিত করতে হবে। ভবন তৈরির ম্যাটেরিয়ালসগুলো নিয়ে আরো গবেষণা হওয়া দরকার। এছাড়া উন্নত দেশগুলোতে ভূমিকম্প নিয়ে কি কি গবেষণা হচ্ছে সেগুলো আমাদেরও করা দরকার। এটি একদিন বা এক বছরের বিষয় নয়। এজন্য দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিতে হবে।’

অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন মতে, দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূমিকম্প নিয়ে পড়ানো হচ্ছে। এর বাইরে তেমন কোনো গবেষণা নেই। এক্ষেত্রে সরকারের অর্থায়নও উল্লেখ করার মতো নয়। তাই এ বিষয়ে সরকারের অর্থ বরাদ্দ এবং গবেষণায় জোর দিতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান এবং বার্মা তিনটি গতিশীল প্লেটের সংযোগ স্থলে রয়েছে। দেশের দুই দিকের ভূ-গঠনে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা রয়েছে। এর প্রথমটি সিলেট অঞ্চলে ডাউকি ফল্টে, অন্যটি চট্টগ্রাম ত্রিপুরা বেল্টে পাহাড়ি অঞ্চলে। রাজধানী ঢাকার মধ্যে বড় ভূমিকম্প সৃষ্টির মতো ভূ-তাত্ত্বিক অবস্থা না থাকলেও সিলেট বা চট্টগ্রামে শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে সেটির মারাত্মক প্রভাব পড়বে এখানেও।

এদিকে গত ২৯ মে সিলেটে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চার দফাসহ মোট ৬ বার ভূকম্পন অনুভূত হয়। এরপরও বেশ কয়েকবার ভূকম্পন অনুভূত হওয়ার কথা জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। এরই মধ্যে সোমবারও (৭ জুন) সন্ধ্যা ৬টা ২৮ মিনিট ও ৬টা ৩০ মিনিটে সিলেট শহর ও এর আশেপাশের এলাকায় ভূমিকম্প হয়।

অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দুইশত বছর আগে ১৭৯৬ সালে ডাউকি ফল্ট এলাকায় বড় মাত্রার ভূ-কম্পন হয়েছিল। রিসার্স অনুযায়ী বড় মাত্রার ভূ-কম্পন থেকে আরেকটি বড় মাত্রার ভূ-কম্পন হতে ৫০০ থেকে ২০০০ হাজার বছর সময় নেয়। এ হিসেবে বাংলাদেশে বড় ধরণের ভূমিকম্প হতে আরো ৩০০ বছর লাগার কথা। তবে চট্টগ্রাম ত্রিপুরা বেল্টে দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকম্প হয়নি। সেখানে ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত