ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

চট্টগ্রামে পাহাড়ে ৩৭০ অবৈধ বসতি উচ্ছেদ

  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২১, ২০:৪১  
আপডেট :
 ১৪ জুন ২০২১, ২১:০৪

চট্টগ্রামে পাহাড়ে ৩৭০ অবৈধ বসতি উচ্ছেদ
ছবি প্রতিনিধি

চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় পাহাড় থেকে অবৈধ বসতি ও স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে প্রশাসন। সোমবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের ৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পরিচালনায় এ অভিযানে ৩৭০টি পরিবারের বসতি উচ্ছেদ করে পরিবারগুলোকে পাহাড় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া পাহাড় ধসের আশঙ্কায় এরই মধ্যে চট্টগ্রামের বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোডে যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

জানা যায়, সকাল থেকে অভিযান চালিয়ে ৩৭০টি অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করা হয়েছে। প্রায় ৩০০ জনবল ও তিনটি এস্কেভেটরের সহায়তায় বায়েজিদ লিংক রোডের অংশে ১১০টি, সীতাকুণ্ড অংশে ৭০টি এবং হাটহাজারী অংশে ১৯০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। অধিকাংশ স্থাপনা টিনের তৈরি ঘর। এছাড়া কিছু সেমিপাকা এবং পাকা সীমানা দেয়াল উচ্ছেদ করা হয়েছে।

৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট তিনটি দলে ভাগ হয়ে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। লিংক রোডের হাটহাজারী অংশে অভিযান পরিচালনা করছেন হাটহাজারীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) শরীফ উল্লাহ, পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এহসান মুরাদ। কাট্টলী অংশে অভিযান পরিচালনা করছেন চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামনুন আহমেদ অনীক, কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ ইনামুল হাসান। সীতাকুণ্ড অংশে অভিযান পরিচালনা করছেন সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাশেদুল ইসলাম ও নগরীর সদর সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুমা জান্নাত।

অভিযানে অংশ নেয়া পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এহসান মুরাদ বলেন, বায়েজিদ লিংক রোডের উভয় পাশের পাহাড়ের পাদদেশে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হয়। সেখানে পাহাড়গুলো খাড়াভাবে কাটায় সেগুলো ধসে বড় বিপর্যয়ের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামনুন আহমেদ অনীক বলেন, লিংক রোডের আশপাশে প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকা থেকে ৩৭০টি ঘর আমরা উচ্ছেদ করেছি। অধিকাংশ ঘরই বাঁশের বেড়া ও টিন দিয়ে তৈরি। কয়েকটা ছিল সেমিপাকা। কয়েকটি বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পাহাড় থেকে ঘর উচ্ছেদের পাশাপাশি সেখানে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রায় ৬ কিলোমিটার বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ছোট-বড় ১৮টি পাহাড় কেটেছে। চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর পাহাড়তলী মৌজা, হাটহাজারীর জালালাবাদ মৌজা এবং সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর মৌজায় এসব পাহাড় কাটা হয়েছে। ২০২০ সালে পাহাড় কাটার জন্য সিডিএকে ১০ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার আদেশ দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর।

সিডিএ’র কেটে ফেলা ১৮টি পাহাড়ের মধ্যে অন্তত ৮টি পাহাড়ে আছে কয়েকশ অবৈধ বসতি। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিডিএর কেটে ফেলা পাহাড়সহ চট্টগ্রাম নগরীতে এখন মোট ২৫টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি আছে। অতিবৃষ্টিতে ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এসব পাহাড়ে। ঘটতে পারে প্রাণহানিও।

এদিকে, গত ৮ জুন চট্টগ্রাম নগরীর লালখানবাজার ওয়ার্ডের মতিঝর্ণা এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় পরিদর্শনের সময় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের স্থায়ী সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান। পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে সকলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে সরকারকে একটি প্রস্তবনাও দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির তথ্যমতে, চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় রয়েছে ২৫টি। এসব পাহাড়ে কম ও বেশি ঝুঁকিতে বসবাসকারী লোকজনের সংখ্যা লাখের ওপরে। বেশিরভাগই নিম্ন আয়ের। এর মধ্যে ১৮টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের তালিকা করেছে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি। বাকি পাহাড়গুলোর তালিকা এখনও শেষ হয়নি।

পাহাড় ধসে গত ১৫ বছরে তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের প্রায় সবাই ছিলেন পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারী হতদরিদ্র লোকজন।

বসবাসকারীদের মতে, শহর অঞ্চলে পাহাড়ের পাদদেশে তৈরি করা ঝুঁকিপূর্ণ বস্তি ঘরে কম টাকায় থাকতে পারে শ্রমজীবী লোকজন। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগও সহজে মেলে।

২০০৭ সালের ১১ জুন স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড় ধসে চট্টগ্রামে ১২৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট লালখানবাজারের মতিঝর্ণা এলাকায় পাহাড় ধসে মারা যান ১১ জন। ২০০৯ ও ২০১০ সালে নগরীর পাহাড়তলী, সিআরবি, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে মারা যান আরো ১৫ জন।

২০১১ সালের ১ জুলাই পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৮ জনসহ বাটালি পাহাড়ের রিটেইনিং দেয়াল ধসে ১৭ জন মারা যান। ২০১২ সালে ১৭ জুন নগরীর ফিরোজ শাহ কলোনিসহ বিভিন্ন এলাকায় ২৩ জন মারা গেছেন। ২০১৩ সালে পাহাড় ও দেয়াল ধসে মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। ২০১৪ সালে ১ জন। ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই বায়েজিদ এলাকার আমিন কলোনিতে ৩ জন এবং ২১ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ থানার মাঝিরঘোনা এলাকায় মা-মেয়ে মারা যান।

এছাড়া ২০১৬ সালে নগরীতে কেউ মারা না গেলেও সে বছরের ১৩ জুন রাঙ্গুনিয়া ও চন্দনাইশে ২৫ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৭ সালের ১২-১৩ জুন রাঙামাটিসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৫ জেলায় প্রাণ হারান ১৫৮ জন। ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের আকবরশাহের ফিরোজশাহ কলোনিতে ৪ জন মারা যান।

আরও পড়ুন- চট্টগ্রামে করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট শনাক্ত

রোহিঙ্গাদের এনআইডি: সাবেক কাউন্সিলরসহ ৬ জন দুদকের জালে

বাংলাদেশ জার্নাল/আর

  • সর্বশেষ
  • পঠিত