ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

মাথাচাড়া দিচ্ছে ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট’, হতে পারে ভয়ঙ্কর

  মোস্তাফিজুর রহমান

প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২১, ১২:২৪

মাথাচাড়া দিচ্ছে ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট’, হতে পারে ভয়ঙ্কর
ফাইল ফটো

করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণের সর্বশেষ সংস্করণ ভারতের ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট’ দেশে মাথাচারা দিয়ে উঠছে। বিগত দেড় মাসে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ, সীমান্তবর্তী এলাকায় বেশ কিছু মানুষের শরীরে ভয়ঙ্কর এই ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি শনাক্তের কথা জানিয়েছিলো। কিন্তু এবার নতুন এক গবেষণায় করোনার এই বিশেষ ধরনের সংক্রমণের ‘ব্যাপকতার’ ইঙ্গিত মিলেছে। দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে এ ব্যাপকতার পরিসর আরো বড় হওয়াটাও অসম্ভবের কিছু নয়।

তারা আশঙ্কা করছেন, দেশে যেকোন সময় করোনা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হতে পারে। এমনকি করোনা বিপদজনক পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হতে পারে বলে স্বীকার করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও।

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজী বিভাগের অধ্যাপক ডা. সুলতানা শাহানা বানু (এমফিল, এমপিএইচ) বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘দেশের করোনা পরিস্থিতি পরিসংখ্যানে যেটি দেখতে পাই, আসলে সেটি প্রকৃত পরিসংখ্যান নয়। প্রকৃত চিত্র অনেক ভয়াবহ। তারপরও যে পরিমান রোগী দিনে শনাক্ত হচ্ছে তা খুবই এর্লামিং বিষয়। আবার অতিসংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টও শনাক্ত হচ্ছে। সীমান্ত এলাকা থেকে এখন এটি কেন্দ্রে (ঢাকা) চলে আসছে। এর মানে সব জায়গায় বিস্তার ঘটাচ্ছে। এখন এটি ছড়িয়ে পড়লে কেমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, সেটি বলে বুঝানো যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘গত এপ্রিলে বড় পরিস্থিতি দেখেছি। কতো মানুষ মারা গেছে। চিকিৎসকরা মারা গেছেন। কি যে বিভিষিকাময় দিন গেছে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে আমরা আরেকটি খারাপ সময় ডেকে আনছি। আমাদের জন্য আরো ভয়াবহ সময় অপেক্ষা করছে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউরোপে ব্যাপকভাবে ছড়ায় ভ্যারিয়েন্ট। একটা সময় ইংল্যান্ডের ভ্যারিয়েন্ট খুবই ভয়াবহ ছিল। কিন্তু ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট বের হওয়ার পর অন্য সব দেশের ভ্যারিয়েন্টকে বাইপাস করে এখন সবচেয়ে বেশি ইনফেক্টিভ। দেখা গেছে, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৬০ শতাংশই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট। দুইটা ভ্যারিয়েন্ট একসঙ্গে থাকলে অধিক শক্তিশালী হয়। এর কারণে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আগে মানুষের দেহে ডুকছে।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীনে ‘অসচেতনাকে’ প্রধান কারণ উল্লেখ করে অধ্যাপক ডা. সুলতানা শাহানা বানু বলেন, ‘আমরা কেউ সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছি না। সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরন করলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।’

তিনি আরো বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্টিকলি (কঠোরভাবে) লকডাউন হচ্ছে না। শুরু থেকেই লকডাউন স্টিকলি হলে এমনটা হতো না। এটি নিশ্চিত করা গেলে অল্প সময়ের মধ্যে কন্ট্রোল করা সম্ভব। কিন্তু সেটা কোনভাবেই হচ্ছে না। এটা সীমান্ত এলাকা বলেন অথবা অন্য জায়গা, সবখানে একই অবস্থা।’

৮ মাস আগে ভারতে প্রথম ডেল্টা ধরণ (বি.১.৬১৭) শনাক্ত হয়। এরপর সেখানে দ্রুত একজনের কাছ থেকে অন্যের শরীরে ছড়াতে থাকে। এতে দেশটিতে করোনা পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশটি। ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে এশিয়া, ইউরোপসহ বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই ধরণ।

ভারতে দ্রুত সংক্রামক ভ্যারিয়েন্টের প্রবেশ ঠেকাতে গত ২৬ এপ্রিল থেকে সীমান্ত বন্ধ করে দেয় সরকার। তারপরও গত ৮ মে প্রথম ভারতীয় ধরণ শনাক্ত করে দেশের বিজ্ঞানীরা। পরবর্তীতে আরো বেশ কয়েকজনের শরীরে এটি শনাক্ত হয়।

বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি) জানায়, সম্প্রতি (২৫ মে-৭ জুন) রাজধানীর ৬০ জন করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে জিনোম সিকোয়েন্স করেছে সংস্থাটির গবেষকরা। এদের মধ্যে ৪১ জন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত ছিলেন। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় এ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৮ শতাংশ।

এদিকে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের রোগী শনাক্ত হওয়ার পর দেশের সীমান্ত এলাকাগুলোতে ব্যাপকহারে বেড়েছে সংক্রমণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনার সর্বশেষ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সীমান্তবর্তী জেলাগুলো ছাড়াও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে ক্রমান্বয়ে সংক্রমণ বাড়ছে।

সার্বিক বিষয় নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘আসলে বাংলাদেশের সিচুয়েশন (পরিস্থিতি) বেশি ভালো না।’

আইসিডিডিআরবি গবেষণায় রাজধানীতে ভারতীয় ধরণের ব্যাপকভাবে বিস্তারের যে ইঙ্গিত দিয়েছে তা অধিদপ্তর অবগত নয় বলেও জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ মুখপাত্র। তবে তিনি স্বীকার করেন, ‘ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ অনেক বেশি। এটি সীমান্ত থেকে এদিকে চলে আসছে। ফলে আগের থেকে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’

দুঃখ প্রকাশ করে অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘টেলিভিশন খুললেই দেখা যায় একশতে একশই মাস্ক পড়ে আছে। আর বাস্তবে কিছুই নেই। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মানছি না বলেই সংক্রমণ বাড়ছে। এটা খুবই দুঃজনক।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ সময়ে সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানলেই করোনা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। আর মানুষ যদি সচেতন না হয় তাহলে এটা বাড়তেই থাকবে। সংক্রমণটা কখনো বসে থাকে না। মানুষ যতো মুভমেন্ট করবে এটা ততোই বাড়তে থাকবে। যেমন সীমান্ত থেকে গণপরিবহনে মানুষ এটা শহরে নিয়ে আসছে। এটা তো বাড়বেই।’

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত