ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

স্বাস্থ্যবিধি মানায় গাফিলতি, কোথাও নেই নজরদারি

  মোস্তাফিজুর রহমান

প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২১, ১৯:৪৬  
আপডেট :
 ১৯ জুন ২০২১, ১৯:৫৯

স্বাস্থ্যবিধি মানায় গাফিলতি, কোথাও নেই নজরদারি

দেশে ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। গত দেড়মাসের মধ্যে শনিবার সর্বোচ্চ ৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, শনাক্ত হয়েছে ৩০৫৭ জন করোনা রোগী। স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতার কারণেই করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ। স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে অফিস আদালত, গণপরিবহন, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট সবকিছু খুলে দেওয়ার পর এখন আর শর্ত মানছে না কেউ। সর্বত্র শর্ত ভেঙে চলাফেরার যেন প্রতিযোগিতা চলছে। এমন চলতে থাকলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য বিধি মানতে জনসচেতনতারও ব্যাপক ঘটতি রয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সুলতানা শাহানা বানু বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধে পাবলিকের ভিতরে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার অ্যাওয়ারনেসটা সবচেয়ে জরুরী। কিন্তু অ্যাওয়ারনেসটা একেবারেই বাংলাদেশে হচ্ছে না বলে মনে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘টিভিতে দেখলাম, দুইদেশের (বাংলাদেশ ও ভারত) কৃষকরা গাছের ছাড়ার নিচে বসে গল্প করছে। তারা বলছে, ‘একই মাটি একই সবকিছু। আমরা গল্পটল্প করি তারপর বাড়ি চলে যায়।’ বুঝুন, তারা জানেও না যে কেউ আক্রান্ত কিনা। স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই গল্প করছে। তাও আবার দুইদেশের মানুষ এক সঙ্গে গেয়ে গেছে। এটি শুধু বর্ডার এলাকার জন্যই নয়, দেশের প্রত্যেকটা জায়গার অবস্থা এমনটা লক্ষ্য করা যায়। আসলে জনসচেতনতার ব্যাপক ঘটতি রয়েছে।’

ডা. সুলতানা শাহানা বানু আরও বলেন, প্রথম থেকে যদি কঠোর লকডাউন করা তাহলে আজকের পর্যায়ে আসতো না। দেখা যায় লকডাউন হলে দুই একদিন যেতে না যেতেই সিথিল হতে থাকে। শুরু হয়ে যায় মানুষের অবাধ চলাচল। তারপর আইন প্রনয়নকারী সংস্থায় যারা কাজ করছেন তারাও একধরণের ছাড় দিচ্ছে। তারপর কিছুদিন গেলে এই লকডাউন আবার বাড়াচ্ছে। এতে কিন্তু সবশেষ সমাজেরই ক্ষতি হচ্ছে। অর্থনৈতিসহ সবকিছুই ক্ষতি হচ্ছে।

স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা প্রায় সবার মধ্যেই লক্ষ্য করা যায় বলে বিষয়টি স্বীকার করে করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন। তবে জনসচেতনার বিষয়ে তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘জনসচেতনা তৈরিতে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে যেভাবে প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে তাতে এখন কেউ বলতে পারবে না, স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি কেউ জানেনা। কিন্তু স্বাস্থ্য বিধি যেভাবে অনুসরণ করার কথা সেভাবে কেউ করছে না। খুবই দু:খজনক বিষয়।’

স্বাস্থ্যবিধি মানতে জনসচেতনা কিভাবে বাড়ানো যায়? জানতে চাইলে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সুলতানা শাহানা বানু বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, জনসচেতনতা তৈরি একার পক্ষে সম্ভব নয়। শুধু মাত্র ডাক্তাররা জেনে লাভ কি? ডাক্তাররা ট্রেনিং করে সবই জানেন। ট্রেনিং করে স্বাস্থ্যকর্মীরাও এতোদিনে সবকিছু শিখে গেছেন। কিন্তু যাদের মধ্যে সচেনতা নাই, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে না, তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধির পর্যায়ে আনতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘অ্যাওয়ারনেস তৈরিতে সব জায়গা থেকে রিপ্রেজেন্টেটিভ এনে ট্রেনিং করাতে হবে। যেমন প্রাইমারি স্কুল থেকে কিছু আনতে হবে। হাইস্কুল থেকে কিছু আনতে হবে। মসজিদ মাদ্রাসা এতিমখানা থেকে আনতে হবে। মার্কেট থেকে আনতে হবে। শপিং মল থেকে আনতে হবে। ওয়েব মার্কেট থেকে আনতে হবে। একদিনে তো হবে না। অল্প অল্প করে প্রতিদিন ট্রেনিং করা হবে। তারা যখন বুঝবে তখন তাদের নিজেদের অবস্থানে গিযে ট্রেনিং করাবে। এভাবে দেশের প্রত্যেকটা প্রান্তে করাতে হবে। এসব করতে গেলে সিভিল সার্জন, গ্রাম পর্যায়ে সবাইকে ইনভলব করতে হবে। তাহলেই সচেতনতা তৈরি হবে।’

সরেজমিনে রাজধানীর ব্যস্ত এলাকাগুলোতে দেখা গেছে, গণপরিবহনে উঠতে গিয়ে লোকজন হুড়োহুড়ি করছেন। একে অন্যের গায়ের ওপর গিয়ে উঠছেন। অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। যাদের আছে তারা আবার মাস্ক যা-তাভাবে ব্যবহার করছেন। নিয়ম মেনে খুব কম লোকই মাস্ক ব্যবহার করছেন। গণপরিবহনে চলাচলের ক্ষেত্রে এক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রীর বসার কথা থাকলেও সেটা মানা হচ্ছে না। দূরপাল্লার পরিবহনগুলো ঢাকা থেকে কিংবা অন্য জেলা থেকে ঢাকা কিংবা বড় শহরের দিকে যাত্রা করার সময় যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করলেও স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে পথে যাত্রী নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা শুধু স্বাস্থ্যগত বিষয় নয়, এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক, যোগাযোগ, ধর্ম, বাণিজ্য অর্থাৎ জীবনের সব কিছুকে ঘিরে রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে উদাসীনতা, করোনাসংক্রান্ত বিষয়ে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিতে সমন্বয়হীনতা, লোকজনের স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা, স্বাস্থ্যবিধি মানানোর ব্যাপারেও তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করাসহ নানাবিধ কারণ এ জন্য দায়ী।

এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যপারে আরও কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের নজরাদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেন তারা।

বাংলাদেশ জার্নাল-এনই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত