ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ল

  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২১ জুন ২০২১, ১৬:৪১

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ল

চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় নির্ধারিত হয়েছে আলোচিত এই মেগা প্রকল্পের। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল রোববার রিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন (আইএমই) বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের জুম মিটিংয়ে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন আইএমই বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী।

জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) প্রায় ৭ হাজার ৯২৬ কোটি টাকায় দু’টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্প। অন্যদিকে, দুই হাজার ৩১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করছে ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু হতে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্প। সভায় সিডিএ’র পক্ষ থেকে দু’বছর মেয়াদ বাড়ানোর কথা বললেও আইএমই বিভাগ এক বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করে।

সূত্র জানায়, জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরীর কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু হতে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে সিডিএ। ২০১৭ সালে জুলাই মাসে নেয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সালের ৩০ জুনে শেষ হচ্ছে। গতকালের সভায় এই প্রকল্পের মেয়াদ আরো একবছর বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে, জলাবদ্ধতা থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীকে রক্ষা করতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর খাল পুনঃখনন, সমপ্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’শীর্ষক মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে। এই প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৩৬টি খাল সংস্কার, খনন এবং সম্প্রসারণ ছাড়াও খাল দখল করে থাকা প্রায় ৩ হাজার ১৫০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কাজ রয়েছে। খাল ছাড়াও বিভিন্ন এলাকার ২৪০ কিলোমিটার ড্রেন পরিষ্কার, খালের পাড়ে ১৭৬ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, খালগুলোর এক পাশে ১৫ ফুট চওড়া রাস্তা এবং অপর পাশে ৫ ফুট ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ৫৪টি ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ, কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত পাঁচটি খালের মুখে স্লুইচগেট নির্মাণ প্রকল্পটিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

সিডিএ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ২০১৭ সালে নেয়া প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুন মাসে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ২০২০ সালের জুনে প্রকল্প মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করা হয়। সরকার এক বছর মেয়াদ বাড়ায়। এতে করে আগামী ৩০ জুন প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও গতকালের সভায় তা বৃদ্ধি করে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পটির কাজ অর্ধেকও হয়নি। বিভিন্ন খাল-নালা পরিষ্কার করার কথা থাকলেও তা পুরোপুরি হয়নি। প্রকল্পটি করোনাকালে নানা সংকটে পড়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সংকট ছিলো প্রকল্প ব্যয়। প্রকল্পটির জন্য মাত্র ১৭শ কোটি টাকা পাওয়া গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার ব্যয় এখন ১০ হাজার কোটিরও বেশি টাকায় উন্নীত হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু ভূমি অধিগ্রহণের খরচ বেড়ে যাচ্ছে ১৭শ কোটি টাকা। এই প্রকল্প গ্রহণকালে ভূমি অধিগ্রহণের খরচ ছিলো মৌজা রেটের দেড় গুণ। কিন্তু পরবর্তীতে সরকার তা বাড়িয়ে তিন গুণ করে। ফলে প্রকল্পটিতে ভূমি অধিগ্রহণের খরচ প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়াচ্ছে। এছাড়া ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনা করে বিভিন্ন ওয়ার্ডে বেশ কিছু কাজ বাড়তি করতে হচ্ছে। নতুন করে এসব কাজ প্রকল্পটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হচ্ছে। এতে খরচ বাড়ছে। সবকিছু মিলে প্রকল্পটির ব্যয় প্রায় দ্বিগুণে উন্নীত হচ্ছে।

এ বিষয়ে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জানান, জলাবদ্ধতার সম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে আরো দুই বছরের মত সময় লাগবে। বৈঠকে আমরা দু’বছর সময় বাড়ানোর জন্য বলেছি। কিন্তু এক বছরের জন্য সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগামী সংশোধিত ডিপিপিতে আমরা সরকারের কাছে দু’বছর সময় চাইবো।

তিনি আরো বলেন, আমরা মিটিং এ বলেছি, বাজেট একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যথাসময়ে কাজ করতে গেলে বরাদ্দ তো পেতে হবে। অন্যদিকে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য আমরা প্রস্তাবনা প্রস্তুত করছি। এগুলো আমরা জেলা প্রশাসককে পাঠাবো। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য থোক বরাদ্দ দিতে হবে। ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া তো অন্যের ভূমিতে কাজ করা যাবে না। ফলে আমরা জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজে পিছয়ে যাবো।

প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় বেড়ে দেড়গুণ থেক তিনগুণ হয়েছে, সেহেতু প্রকল্প ব্যয় বাড়বে। তবে কি পরিমাণ বাড়বে তা এখনো বলা যাচ্ছে না।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএর ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ সময় ছিল ২০২০ সালের জুন মাস। পরবর্তীতে তা বৃদ্ধি করে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছিল। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ বছরের ৯ এপ্রিল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর করে সিডিএ। এরপর ২৮ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এছাড়া, চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ১০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) দুটি, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন একটি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

আরও পড়ুন- চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেয়াদ বাড়ছে মেগা প্রকল্পের

বাংলাদেশ জার্নাল/আর

  • সর্বশেষ
  • পঠিত