ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

চট্টগ্রাম নগরে কড়াকড়ি, ফটিকছড়ি লকডাউন

  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২২ জুন ২০২১, ১৯:১৬

চট্টগ্রাম নগরে কড়াকড়ি, ফটিকছড়ি লকডাউন
ফাইল ছবি

করোনার উচ্চ সংক্রমণের কারণে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় আগামী ২৩ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। চট্টগ্রামে উপজেলা পর্যায়ে আলাদা করে লকডাউনের প্রথম ঘটনা এটি। গত দুই সপ্তাহে এই উপজেলায় সংক্রমণের হার ৩৪ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম নগরীতে রাত ৮টার পর দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেলের দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত করোনা প্রতিরোধে গঠিত জেলা কমিটির সমন্বয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান জানান, চট্টগ্রামে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলায় সংক্রমণের হার বেশি। শুধু ফটিকছড়িতে গত ১৪ দিনে সংক্রমণের হার ৩৪ শতাংশ। সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় আগামীকাল থেকে ৮ দিনের জন্য ফটিকছড়ি ‍উপজেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, মহানগর এলাকায় আগামীকাল (বুধবার) থেকে ওষুধের দোকান ছাড়া বাকি দোকান রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে। এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে জেলা প্রশাসনের ১২টি মোবাইল টিম মাঠে থাকবে। মহানগর এলাকায় মেয়রের নেতৃত্বে আলাদা করোনা প্রতিরোধ কমিটি আছে। ওই কমিটির প্রধান মেয়রকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হবে।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল থেকে নগরে রাত ৮টার পর থেকে ওষুধের দোকান ছাড়া সব ধরণের দোকানপাট বন্ধ থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে চলবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। যানবাহনে অধিক ভাড়া বন্ধ ও হোটেলে ৫০ ভাগের বেশি মানুষের সমাগম হলে জরিমানা। নির্দেশনা অমান্য করলে হোটেল সিলগালা করে দেয়া হবে।

যে কোনো ধরনের সভা সমাবেশ বন্ধ। জেলায় কমিনিউটি সেন্টারে বিয়ে ও মেজবানসহ সকল অনুষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এছাড়া পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে জনসমাগম এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবে। কোনোভাবেই মানুষ পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে প্রবেশ করতে পারবে না। অন্যথায় সর্বোচ্চ ২০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সভায় উপস্থিত ছিলেন, সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি, উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) বদিউল আলম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনি আক্তার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম জাকারিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মাসুম প্রমুখ।

চট্টগ্রামের সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৯০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনাভাইরাসে শনাক্ত হয়েছেন ২২৬ জন। নতুন শনাক্তদের মধ্যে ১৩১ জন নগরের ও ৯৫ জন উপজেলার বাসিন্দা। এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৩৯৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৪ হাজার ৩৫৯ জন নগরের ও ১২ হাজার ৩৮ জন উপজেলা পর্যায়ের বাসিন্দা।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম নগরে একজন করোনায় মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত করোনায় চট্টগ্রামে মারা গেছেন মোট ৬৬২ জন। এর মধ্যে ৪৬৩ জন নগরের ও ১৯৯ জন উপজেলার বাসিন্দা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ১৭৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ৭৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) ২৯৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে শনাক্ত হয় ৪২ জন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ল্যাবে ৩৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ১০ জনের করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) ল্যাবে ১৪৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়।

এছাড়া ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ল্যাব ৬৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৮ জন, শেভরণ ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরিতে ১৫৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ২২ জন, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ল্যাবে ৩৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৬ জন, জেনারেল হাসপাতালের রিজিওনাল টিবি রেফারেল ল্যাবরেটরিতে (আরটিআরএল) ২৫টি নমুনা পরীক্ষা করে ১২জন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতাল ল্যাবে ১১টি নমুনা পরীক্ষা করে ৬জন, এপিক হেলথ কেয়ার ল্যাবে ৩৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ১০ জনের শরীরে করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে। এছাড়া পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে কোনো নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি।

চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতির এই হঠাৎ অবনতির কারণ কী— এমন প্রশ্নে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, আসলে আমাদের এখানেতো ঠিক সেভাবে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা যাচ্ছে না। তবে এর মধ্যে ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের দুজন রোগী পাওয়া গেছে— যারা ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি টান্সমিশনের শিকার বলেই আমরা ধারণা করছি। এ কারণে হঠাৎ সংক্রমণ ও জটিল উপসর্গের রোগী বাড়তে পারে। এছাড়াও প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা না নিয়ে কন্ডিশন খারাপ হওয়ার পরেই বেশিরভাগ রোগীর হাসপাতালে যাওয়ার একটা বিষয়ও আছে।

চট্টগ্রামের জেলা সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, আমাদের করোনা চিকিৎসার সক্ষমতা অনেক বেড়েছে, প্রস্তুতিও বেশ ভালোই আছে। তবে এখানে মানুষের সচেতনতাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ সচেতন না হলে সংক্রমণ ঠেকানো কঠিন হবে।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে গত বছরের ৩ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ৯ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম এক ব্যক্তি মারা যান।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত