ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

স্কুলে দুই পদের নিয়োগে ১৭ লাখ টাকা ঘুষ!

  নেত্রকোনা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২১, ১৭:২৮

স্কুলে দুই পদের নিয়োগে ১৭ লাখ টাকা ঘুষ!
হুজরাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় ফটক

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলায় হুজরাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের দুইটি শূন্য পদে প্রায় ১৭ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ের ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ও নিরাপত্তা প্রহরী পদে দুজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম অঞ্জন ও সভাপতি মোর্শেদা চিশতি মুক্তা মিলে ১৭ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন বলে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য লিটন মিয়াসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই অভিযোগ করেছেন। এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার হুজরাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ও নিরাপত্তা প্রহরী পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সে অনুযায়ী ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে ৫ জন এবং নিরাপত্তা প্রহরী পদে ১১ জন প্রার্থী আবেদন করেন।

গত ২ জুন মোহনগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে ৩ জন এবং নিরাপত্তা প্রহরী পদে ৯ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন।

পরে ৭ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশ করে ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আরিফ আহমেদের শ্যালক নাজমূল হককে ও অপর পদে স্থানীয় রফিকুল ইসলাম নামে এক যুবককে নিয়োগ দেয়া হয়।

বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. লিটন মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার পরপরই ফল প্রকাশ করার কথা। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মিলে ওই পরীক্ষার ফলাফল গোপন করে প্রার্থীদের সাথে গোপনে দর কষাকষি করতে থাকেন। শেষে টাকার অংক ফাইনাল করে ৭ জুন ফল প্রকাশ করে রেজ্যুলেশন করতে বসে।

তিনি বলেন, এমন অনিয়মের প্রতিবাদ জানিয়ে আমি সেই রেজ্যুলেশনে সই করিনি। পরে আমার পরিবর্তে দাতা সদস্যকে দিয়ে সই করিয়ে নিয়েছেন তারা।

এ দুটি পদের প্রথমটিতে ১০ লাখ ও অপরটিতে ৭ লাখ টাকা ঘুষ নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে লিটন মিয়া বলেন, এসব অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করে পুনরায় নিয়োগের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে পরীক্ষায় অংশ নেয়া লিপা আক্তারের ভাই সাইকুল ইসলাম বলেন, প্রথমে আমি ৭ লাখ টাকায় চুক্তি করি। লিখিত পরীক্ষায় আমার বোন প্রথম হয়েছে, এটা জানিয়ে সভাপতির জন্য আরো দুই লাখ টাকা অতিরিক্ত দাবি করেন প্রধান শিক্ষক। তাতেও রাজি হই। কিন্তু ফল প্রকাশ নিয়ে টালবাহালা করে গোপনে অপর প্রার্থী নাজমূলের কাছ থেকে বেশি টাকা নিয়ে তাকে নিয়োগ দেয়।

এছাড়া নিরাপত্তা প্রহরী পদেও একইভাবে জুবায়ের আহম্মেদ নামে এক প্রার্থীকে সাড়ে ৫ লাখ টাকায় নিয়োগ দেয়ার কথা দেন প্রধান শিক্ষক। কিন্তু ৭ লাখের বিনিময়ে তার জায়গায় রফিকুল ইসলাম নামে অন্য এক প্রার্থীকে নিয়োগ দেন। এমন অভিযোগ জুবায়েরের অভিভাবকদের।

হুজরাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম অঞ্জন বলেন, নিয়োগে কেনো অনিয়ম হয়নি। কারো কাছ থেকে টাকাও নেয়া হয়নি। এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পীর নুরুজ্জামান চিশতির স্বপ্ন অনুযায়ী আমরা স্বচ্ছতার সাথে এ দুটি পদে নিয়োগ দিয়েছি। যাদের প্রার্থীরা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি তারাই এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোর্শেদা চিশতি মুক্তা বলেন, আমার বাবার প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টিতে আমি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। এখানে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। তবে বিদ্যালয়ের উন্নয়নের স্বার্থে নিয়োগপ্রাপ্তদের কাছ থেকে ১২ লক্ষ টাকা নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ১২ লক্ষ টাকা নেয়ার বিষয়টি কমিটির সবাই অবগত আছেন। এটা কোনো অনিয়ম নয়। সব বিদ্যালয়েই উন্নয়নের জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়। নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে যে ধরনের অভিযোগ উঠেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

বারহাট্টা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, ওই নিয়োগ পরীক্ষায় আমি ছিলাম। প্রার্থীদেরপরীক্ষা স্বচ্ছতার সাথেই নেয়া হয়েছে। তবে নিয়োগের বিষয়ে স্কুল কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোর্শেদ বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। তবে খোঁজ নিয়ে দেখবো।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত