ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

কোরবানির ঈদেও সুনসান কর্মকারপাড়া

  বাদল সাহা, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২১, ১২:৪০  
আপডেট :
 ১৭ জুলাই ২০২১, ১৩:১৯

কোরবানির ঈদেও সুনসান কর্মকারপাড়া

গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতাল রোডের কর্মকার কালা চাঁন কর্মকার (৪৮)। সংসারে রয়েছে স্ত্রী আর ৫ মেয়ে। বয়স যখন ১০ তখন থেকেই বাবার সাথে হাতে খড়ি হয় এ পেশায়। বর্তমানে ৩৮ বছর ধরে জড়িত রয়েছে এ পেশায়। কিন্তু দীর্ঘ কর্মজীবনে কর্মকারপাড়ায় এমন সুনসান চিত্র দেখেনি তিনি।

কালা চাঁন কর্মকার বলেন, গত বছর থেকে করোনার কারণে মন্দাভাব যাচ্ছে তার। সারা বছর কাজ না থাকলে কোবারনির ঈদের দিকে চেয়ে থাকেন তিনি। এ সময় কাজ করে সারা বছরের আয় রোজগার হয় তার। কিন্তু করোনার কারণে গত বছর মত এবছর কাজ কমে যাওয়া কমে গেছে আয় রোজগার।

কারোনার আগে সেখানে প্রতিদিন তিনি ৩ হাজার টাকা রোজগার করতেন সেখানে এখন আয় হচ্ছে মাত্র এক হাজার টাকার মত। ফলে নিজেসহ ৭ সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। তার মতই একই অবস্থা জেলার কয়েকশ কর্মকার পরিবারে।

কামার পল্লীতে গেয়ে দেখা গেছে, প্রতিবছরই কোরবানির ঈদকে সমানে রেখে হাতুরীর টুংটাং শব্দে কর্মচাঞ্চল্য থাকতো কামারপাড়া। অস্ত্র তৈরীতে ব্যস্ত সময় কাটায় এক প্রকার নাওয়া-খাওয়া আর ঘুম ছেড়ে দিতে হতো তাদের। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে আর্থিক সংকট থাকায় এবছর পশু কোরবানির সংখ্যা কমে যাওয়ায় কেউ অস্ত্র বানাতে আসছেন না কামারপাড়ায়।

কর্মচাঞ্চল্যতায় ভরা কামারপাড়ায় রয়েছে এখন অলসতা। ক্রেতা না থাকায় অনেইকে পশু কোরবানির সরঞ্জাম না বানিয়ে পাট মৌসুমকে কেন্দ্র করে কাস্তে বানানোয় মনোযোগী রয়েছেন। তবে দু-একজন ক্রেতা আসলেও নতুন অস্ত্র না কিনে পুরাতন অস্ত্র ঠিক করে নিচ্ছেন।

পশু জবাই করা, মাংস কাটা ও চামড়া ছাড়ানোর জন্য প্রয়োজন হয় চাকু, চাপাতি, দাসহ নানা ধরনের উপকরণের। কিন্তু করোনার কারণে এ বছর চাকু, চাপাতিসহ বিভিন্ন অস্ত্র আগাম তৈরি করেনি কর্মকারেরা। কয়লাসহ বিভিন্ন কাঁচামালের দাম বাড়ায় উপকরনের মান আনুযায়ী লোহা কেজি প্রতি ৩’শ থেকে ৫’শ টাকা দাম চাচ্ছেন তারা। ক্রেতা না থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়ে আয় রোজগার কমে যাওয়া পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন পার করেছেন তারা।

ক্রেতা সদর উপজেলার চরমাহিকদাহ গ্রামের মিলন বেগ (৪৮), মধুপুর গ্রামের মো. শাহবুদ্দিন (৬০) বলেন, এবার করোনার কারণে হাতে কাজ না থাকায় কোরবানির পশু কিনতে হিমশিম খাচ্ছি। তাই এবছর একা কোরবানি দিতে পারছি না। তবে সবাই মিলে পশু কোরবানি দিলেও এজন্য চাপাতি ও ছোড়াসহ বিভিন্ন অস্ত্রের দরকার। তবে এবার নতুন অস্ত্র নয় পুরাতন অস্ত্র ঠিক ও ধার দিতে এসেছি।

ক্রেতা সদর উপজেলার নবীনবাগ এলাকার মো. হান্নান সিকদার, পাইককান্দি গ্রামের তরিকুল বলেন, করোনার কারণে কয়েকবার লকডাউন থাকায় আর্থিক অনাটনের রয়েছি। যে কারণে নতুন অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব হয়নি। তবে পুরাতন অস্ত্র ঠিক করেই এবছর কোরবানির পশু জবাই করবো।

কর্মকারপাড়ার স্বপন কর্মকার বলেন, করোনার কারণে এবার জেলায় পশুর হাট বসেনি। যে কারণে এবছর কোরবানির সরঞ্জাম বানাতে কেউ আসছে না। দু-একজন যারাও এসেছেন তারা পুরাতন অস্ত্র নিয়ে আসছেন। এবছর আগাম কোন অস্ত্র বানাইনি।

একই এলাকার দিলীপ কর্মকার জানান, পশু জবাই করা ছুরি কেজি প্রতি ৫’শ টাকা, দা ৬’শ টাকা, চাপাতি ৪’শ টাকা, কুড়াল ৪’শ টাকা এবং বটি প্রতি কেজি ৫’শ টাকা দরে বিক্রি করছি। এ বছর লোহা, কয়লা প্রভৃতির দাম আগের থেকে বেশি হওয়ায় উৎপাদিত মালামালও বেশি দামে বিত্রি করতে হচ্ছে।

কিন্তু ক্রেতা সংকটের কারণে কিছু বিক্রি করতে পারছি না। এতে আমাদের সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। সরকারের কাছে আমরা আনুদান ও সাহায্য সহযোগীতার দাবি জানাচ্ছি।

একই এলাকার খোকন কর্মকার বলেন, এখন পর্যন্ত ক্রেতারা অস্ত্র তৈরি করতে আসছে না। তবে আমরা আশা করছি এক বা দুই দিন পর থেকে ক্রেতারা অস্ত্র বানাতে আসবে আর আমদের আয় রোজগার আগের মত হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত